পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বিদ্যালয়ের গাছসহ সীমানা জমি জবরদখলের অভিযোগ

পঞ্চগড় জেলাধীন তেঁতুলিয়া উপজেলায় বিদ্যালয়ের ইউক্যালিপ্টাস গাছসহ সীমানা জমি জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার ৫নং বুড়াবুড়ি ইউপির লালগছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণের পশ্চিম সীমানায় একটি ইউক্যালিপ্টাস গাছসহ ওই সীমানার আংশিক জমি জবরদখল করে রাখা হয়েছে অভিযোগ উঠছে।

বিদ্যালয়ের গাছসহ আংশিক সীমানা জমি জবরদখল করেছেন উপজেলার ওই ইউনিয়নের লালগছ গ্রামের মৃত শামসুল হকের ছেলে রফিকুল ইসলাম, তফিজুল ইসলাম ও ওবায়দুর রহমান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখতে ও জানতে পারা যায়, অত্র বিদ্যালয়ের হারাদিঘী মৌজার ৬৮৩ নং দাগের পশ্চিমাংশে অন্য এক দাগে ওই এলাকার রহিম উদ্দিনের কাছ থেকে ২২ শতাংশ জমির মধ্যে ১৬ শতাংশ জমি বিনিময়ের মাধ্যমে রফিকুল ইসলামসহ তার দুই ভাই তফিজুল ইসলাম ও ওবায়দুর রহমান বসবাস করছেন। রফিকুলদের বাড়ির পূর্ব পার্শ্বে বাড়িতে প্রবেশের দরজার সামনে বিদ্যালয়ের ইউক্যালিপ্টাস গাছটি তাদের টিনের বেড়ার ভিতরে ঘেড়াও করে রেখেছেন। জানা যায়, রফিকুলরা আসার আগেই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ইউক্যালিপ্টাস গাছটি বিদ্যালয়ের সীমানায় রোপন করেন। বর্তমানে গাছটি প্রায় কয়েক হাজার টাকা মূল্যের ছাড়িয়েছেন। দেখা গেছে, ইউক্যালিপ্টাস গাছটি থেকে প্রায় ৩ থেকে ৫ ফুট পূর্বে বিদ্যালয়ের সীমানা অতিক্রম করেছেন রফিকুল, তফিজুল ও ওবায়দুর রহমান। আরোও জানতে পারা যায়, ওই বিদ্যালয়ের ওয়াশ বøকের সেপটিক ট্যাংক নির্মাণের সময় রফিকুলরা বাধা প্রধান করলে বিদ্যালয় প্রধান কামরুজ্জামান উপজেলা প্রশাসনকে মুঠোফোনে অবগত করলে উপজেলা প্রশাসন তৎক্ষণাত ওঁই বিদ্যালয়ে এসে দাঁড়িয়ে থেকে সেপটিক ট্যাংক নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেন। এরপর থেকেই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রফিকুলদের সীমানা নিয়ে গভীর শত্রæতা বৃদ্ধি পায়। অতঃপর তাঁরা ওয়াশ বøকের সেপটিক ট্যাংকের জের ধরেই ১১ অক্টোবর ২০২১ ওই বিদ্যালয়ের অনুমোদিত নতুন ভবন নির্মাণে লে-আউট করার সময় বাধা প্রদান করলে স্থানীয় গনমান্য ব্যক্তিবর্গ ও বিদ্যালয় কমিটি এবং প্রধান শিক্ষক একত্রে বসিয়ে একটি সিদ্ধান্ত মোতাবেক লে-আউট করেন।

জানা যায়, তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকদের ভয়ভীতির হুমকির ন্যায় নিউজ করতে বাধা দেয় ওবায়দুর রহামন। তিনি নিজেকে ওই প্রতিষ্ঠানের কমিটির সহ-সভাপতি পরিচয় দেন।

এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাফিজুল ইসলাম জানান, তার দেড় বছর হল অবসর নেয়ার। তিনি ওই বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকাকালীন এই ইউক্যালিপ্টাস গাছটি তাদের সীমানায় লাগিয়েছিলেন। তিনি বলেন, সে বিদ্যালয়ে থাকাবস্থায় লালগছ গ্রামের রহিম উদ্দিনের কাছ থেকে রফিকুলরা ২২শতাংশ জমির মধ্যে ১৬শতাংশ জমি বিনিময় করেন। অবশিষ্টাংশ ৬শতক জমি বিদ্যালয়ের জন্য রহিম দখল ছাড়িয়ে দেয়। সেই সুবাদে ওই জমিসহ ৬৮৩ নং দাগের সমুদয় জমির মালিক বিদ্যালয় অর্জন করেন। তিনি আরোও বলেন, শুনা কথায় জানতে পারা যাচ্ছে রফিকুলরা বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণে বাধা প্রয়োগ করবেন।

লালগছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান জানান, তিনি স্কুলে যোগদানের পূর্বেই অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এই ইউক্যালিপ্টাস গাছটি লাগিয়েছেন জানতে পারেন। তার সঙ্গে রফিকুলদের কোনো শত্রæতা নেই, তিনি বিদ্যালয়ের ওয়াশ বøক এর সেপটিক ট্যাংক নির্মাণের সময় তাঁরা বাধা প্রদান করেন। ওই সময় তিনি উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সেই সেপটিক ট্যাংক নির্মাণ করিয়ে নেয়। এরপর থেকে রফিকুলরা মাঠের পশ্চিমাংশের কিছু অংশ তাদের বলে দাবি করে আসছে। এতে সার্ভেয়ারের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণসহ কয়েকদফায় ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে সালিশি বৈঠক করা হলে কোনো সুরাহা হয়নি। নতুন ভবনের জন্য মাঠের পশ্চিমাংশে এসএমসির সুপারিশ অনুযায়ী সয়েল টেস্ট ও টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় বিদ্যালয়ের চৌহদ্দির সীমানা সঠিকতার লক্ষে তিন জনের নামে অভিযোগ জানিয়ে ২০২১ সালে আগস্ট মাসের ২৬ তারিখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি দরখাস্ত পেশ করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ের ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের এক তারিখের পত্র নং ২৯৫ এর প্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, তিনি এ বিষয়ে সেভাবে অবগত নয়, তবে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে, প্রতিষ্ঠানের দখলে নেয়া গাছ ও জমির সু-ব্যবস্থা গ্রহন করবেন জানিয়েছেন।