পঞ্চগড়ে এক সাঁকোয় যুক্ত দুই ইউনিয়ন, ভেঙ্গে যাওয়ায় জনদুর্ভোগ

দীর্ঘদিন ধরে ব্রিজ না থাকায় দুই ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ চাওয়াই নদী দিয়ে পারাপারের এক মাত্র অবলম্বন নড়বড়ে সাঁকো। ব্রিজের অভাবে ১০টি গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
মরার উপর খড়ার ঘা, গত ৩ জুলাই শনিবার সকালে বর্ষা মৌসুমে নদীর পানির স্রোতে লোহার এঙ্গেলে কুচুরি পানা লেগে থাকায় সেই সাঁকো অর্ধেক অংশ ভেঙ্গে যাওয়ায় চরম জনদুর্ভোগে পড়েছে দুই ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা এবং ১নং ওমর খানা বোর্ড বাজারের পশ্চিম রাস্তা পাশে সেলিল্যান্ট টি এস্টেট চাওয়াই নদী সাঁকোই দিয়ে সাতমেরা ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্র্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের যাতায়াতের ক্ষেত্রে দীর্ঘ দিন ধরে চড়ম দুর্ভোগ পোহাতে এলাকার সাধারণ মানুষদের।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও এ দুর্ভোগের ঘানি পোহাতে টানছে দুই ইউনিয়নের কয়েক হাজার স্থানীয় মানুষ।

বর্ষা মৌসুমে সাতমেরা ইউনিয়নের খইপাড়া, ডাঙ্গা পাড়া, ফকির পাড়া, সরকার পাড়া, পখিলাগা থেকে ১নং ওমর খানা ইউনিয়নের বিভিন্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ সহ কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী বন্যার সময় জীবনের ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় চাওয়াই নদীর সাঁকোই এক মাত্র যাতায়াতের পথ।

চলতি মৌসুমে নদীতে পানি থাকায় তাদের স্কুল ও কলেজে বন্ধ থাকায় স্থানীয়রা হাট বাজারে যেতে হয়। দীর্ঘ দিনের দাবীতে ব্রিজটি নির্মাণের কোন উদ্যোগ না থাকায় এলাকার স্থানীয়রা নিজের টাকা ও চাঁদা তোলে প্রথমে বাঁশ দিয়ে সাঁকোটি নির্মাণ করেন।
এ ভাবে দীর্ঘ ৯ বছর ধরে বাঁশের সাঁকোটি মেরামত করে আসছেন খইপাড়া মোঃ সামছুল হক।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ডাঙ্গা পাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, দেশ স্বাধীন করেছি স্বাধীন ভাবে চলাফেরার জন্য এই দুর্ভোগ থেকে কত দিনে মুক্তিপাব জানি না। দুর্ভোগের কারণে ধান, পাট, অন্যান্য ফসল বাজারে বিক্রি করতে হলে আমাদেরকে গুয়ালঝার বাজার দিয়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার ঘুড়ে যেতে হয় আর চাওয়াই নদীর উপর ব্রিজ হলে জগদল বাজারের দুরত্ব হবে ১২ কিলোমিটার আবার কোন সময় গুরুতর আহত অথবা ডেলিভারি রোগি নিয়ে ওমর খানা ব্রিজ হয়ে ঘুড়ে যেতে হয় পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য।

এ সময় আরও খইপাড়ার একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুর জলিল, বলেন আমি ৩৫ বছর ধরে এই চাওয়াই নদী দিয়ে যাতায়াত করি। যখন সোঁকা ছিল না বাড়ি থেকে বোর্ড বাজার, পঞ্চগড় শহরে বা জগদল বাজার যাওয়ার খরচের ব্যাগে লুঙ্গি, গামছা নিয়ে পরনের কাপড় খুলে লুঙ্গি অথবা গামছা পরিধাণ করে নদী পারাপার করি।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সাংসদ সদস্য মোঃ মজাহারুল হক প্রধানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এলাকা বাসিদের আশংক্ষা দিয়েছেন ব্রিজটি নির্মাণ করার জন্য আমি অবহিত আছি।

বোর্ড বাজার শবজি ব্যবসায়ী মোঃ জিল্লুর রহমান বলেন, প্রতিদিন এই সাঁকো দিয়ে জীবিকার তাগিদে জীবনের ঝুকি নিয়ে রাতের অন্ধকারে বাতি জালিয়ে পারাপার করেন।

জগদল ডিগ্রী কলেজের ছাত্র মনছুর আলী জানান, বর্ষা মৌসুমে চাওয়াই নদী ভরাট থাকার কারণে প্রাইভেট এবং সময় মত যেতে পারিনা।

এ দিকে একই সমস্যার কথা বলেন এমআর কলেজের ইতিহাস অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র মোঃ শাহবদ্দিন।

ওমর খানা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান মোঃ আমিরুল ইসলাম জানান, ডাঙ্গা পাড়া, ফকির পাড়া প্রায় ১২ জন ছাত্র-ছাত্রী ২০১৬ সালে বর্ষা মৌসুমে চাওয়াই নদীর সাঁকো দিয়ে পারাপারের সময় সাঁকো ভেঙ্গে নদীতে ভেসে যায় পরে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে।

সাতমেরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোঃ আতাউর রহমান বলেন, ব্রিজ নির্মাণের জন্য বেশ কয়েক বার সাবেক ও বর্তমান সাংসদদের কথা বলেছি এবং স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী, জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এলজিডি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ তাতে কাজ হয় না বর্তমানে সাঁকোর অর্ধেক অংশ ভেঙ্গে পারায় ১০টি গ্রামের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হবে তাই আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাথে যোগাযোগ করলে তিনি সরজমিনে এসে সাঁকো নির্মানের জন্য সরকারী বরাদ্দ দিয়ে দ্রৃত কাজ শেষ করার জন্য বলেন।

পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আরিফ হোসেন বলেন, সাঁকোটি পরিদর্শন করে সরকারী বরাদ্দ দিয়ে দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করে চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহন করছি।
এসময় পরিদর্শনে পঞ্চগড় সহকারী ভূমি কমিশনার আমিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।