পদ্মাসেতুর খরচ বাড়ার কারণ জানালেন প্রধানমন্ত্রী
দেশের সবচেয়ে বড় সেতু প্রকল্পে খরচ বাড়ার পেছনে কী কী কারণ রয়েছে, সেটি সংসদকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, বারবার নকশা পরিবর্তন, অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণ হিসেবে কত টাকা দেয়া ও রেল সংযোগ দিয়ে দোতলা সেতু করায় খরচ বেড়েছে।
বুধবার জাতীয় সংসদে আসন্ন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের এক বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
রওশন বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যখন এই সেতু করার উদ্যোগ নেয়া হয়, তখন বাজেট ছির ১০ হাজার কোটি টাকা। এখন সেটা বেড়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। বারবার বরাদ্দ বাড়ানো নিয়ে জনগণের মধ্যে সংশয় তৈরি হচ্ছে।
মূল সেতুর পাশাপাশি নদী শাসন, সংযোগ সড়ক নির্মাণ আর জমির অধিগ্রহণের বিষয়টি আগে থেকে হিসাব করা হয়নি কেন সেটিও জানতে চান বিরোধীদলীয় নেতা।
পরে প্রধানমন্ত্রী রওশনের বক্তব্য কিছুটা সংশোধন করে বলেন, এই সেতুর কাজ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, শুরু করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।
১৯৯৬ সলে ক্ষমতায় আসার পর জাপান সফরের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তখন তিনি দুটি সেতুর কথা বলেছিলেন, একটি খুলনার রূপসা সেতু এবং একটি পদ্মাসেতু।
যেহেতু রূপসা নদীর ওপর সেতু ছোট, তাই সেটি আগে করা হয়েছে এবং পদ্মার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়।
আর সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করা হয় ২০০১ সালে ক্ষমতা ছাড়ার আগে জুলাই মাসে। কিন্তু বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে সে কাজ বাতিল করে দেয়। কিন্তু পরে আর কিছু করতে পারেনি।
এরপর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আবার থেমে যাওয়া কাজ শুরু হয়। কিন্তু তখন দুর্নীতি চেষ্টা নিয়ে কথা উঠে।
‘আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম। এরপর বললাম, নিজের অর্থায়নে করব।’
আবার রওশন সেতুর খরচ নিয়েও ভুল তথ্য দিয়েছেন। তিনি ৪৫ হাজার কোটি টাকা বললেও আসলে এর খবর ৩০ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। সব শেষ গত ২১ জুন ১৪০০ কোটি টাকা খরচ বাড়ানোর প্রস্তাব পাস হয় একনেকে।
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে পাস করেছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।
গত ডিসেম্বরে দ্বিতীয়বারের মতো এই সেতুর ব্যয় বাড়ানো হয় আট হাজার কোটি টাকা। ফলে তখনকার হিসাবে পদ্মা সেতুর ব্যয় দাঁড়ায় সব মিলিয়ে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকায়।
অবশ্য দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার ব্যয় বাড়ানোর পরও মূল সেতুর খরচ বাড়েনি। দেশের সবচেয়ে বড় সেতু প্রকল্পে মূল সেতু নির্মাণ হবে আগের মতোই ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকায়।
আর এই খরচ বাড়ার বেশ কিছু কারণও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘এটা আরও সহজে করে ফেলতে পারতাম। আমি আবার বিদেশে যাইটাই। ভাবলাম আমার দেশের জন্য যেটাই করব, সেটাই যেন আমার দেশের জন্য প্রাইড হয়। গর্ব করার মতো হয়। এ জন্য দোতলা সেতু করলাম। নিচে ট্রেন, ওপর দিয়ে গাড়ি।’
‘যদি ফ্ল্যাট ডিজাইন করতাম, মাঝখানে ট্রেন, দুই পাশে গাড়ি, তাহলে খুব দ্রুত করে ফেলতে পারতাম।’
‘মাননীয় বিরোধীদলীয নেতা বলেছেন, বারবার টাকা দিতে হচ্ছে.. এখানে খুবই, বিশেষ টেকনিক্যালভাবে এটা তৈরি করা হয়। এর পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। পৃথিবীতে তিন চারটা এ রকম।’
‘এটা খুব খরস্রোতা নদী, আর প্রতি বছর বর্ষার পরে নদীর নিচে কিন্তু পরিবর্তন হয়ে যায়। কাজেই ডিজাইনটা প্রতি বছর অ্যাডজাস্ট করতে হয়, আবার অ্যাপ্রোচ রোড, রেল লাইন, এসব লাগবেই।’
‘আমরা যে কাজটা করি, অত্যন্ত উন্নতমানের করতে চাই বলে সময় লাগবে, আর অর্থ লাগবে।’
‘সস্তার সাত অবস্থা করতে চাই না, উন্নতমানের করতে চাই যেন শত বছর টিকে থাকে আর আমাদের দেশের জনগণ যে সেবা পায়।’
জমির জন্য তিনগুণ টাকা দেয়াতেও খরচ বেড়েছে
জমি অধিগ্রহণের নীতিমালা পরিবর্তনও খরচ বাড়ার আরেক কারণ বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘এখন আমরা কারও জমি যদি অধিগ্রহণ করি, তাকে কিন্তু আমি তিন গুণ টাকা… যমুনা সেতুতে আমরা দেড় গুণ টাকা দিয়েছিলাম।’
‘এবার আমরা করে দিয়েছি সারা বাংলাদেশে, উন্নয়নের কাজ করতে গেলে যার জমি নেব, সে এমন টাকা পাবে যেন সে আলাদা একটা বাড়ি করতে পারে বা তার বসতবাড়ি করতে পারে বা সে যেন কাজ করে খেতে পারে।’
‘প্রত্যেকটা প্রজেক্ট যখন আগে পাস হয়ে গিয়েছিল, তখন তো সেটা দেড় গুণ ছিল। এখন এখন তিনগুণ হয়ে গেছে। জমির দাম যেহেতু বেশি দিতে হচ্ছে, স্বাভাবিক আমাদের বেশি টাকা লাগবেই। আর পদ্মাসেতুর ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। আর এ কারণেই বেশি লাগছে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন