পদ্মা সেতুতে ট্রেনের পরীক্ষামূলক চলাচল চলতি মাসেই

চলতি মাসেই পদ্মা বহুমুখী সেতুর উপর দিয়ে চলবে ট্রেন। চলছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন থেকে মাদারীপুরের দুটি স্টেশন হয়ে পদ্মাসেতুর উপর দিয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া স্টেশন পর্যন্ত ট্রায়াল রানের প্রস্তুতি। দিনরাত কাজ করে চলেছেন রেলওয়ে প্রকল্পের শ্রমিকরা।

পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপনের কাজ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। মূল সেতুতে সাড়ে ৬ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপনের প্রায় ৯৯ ভাগ কাজই শেষ। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত হতে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপন হয়েছে ৩২ কিলোমিটার।

এই পথের মাঝখানে মাদারীপুরে স্টেশনের সংখ্যা দুটি। পদ্মাসেতুর পূর্ব প্রান্তে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া রেলওয়ে স্টেশন। এই স্টেশনের নির্মাণ কাজও শেষ। এখন ট্রায়াল রানের অপেক্ষায় ৩৫ বছর রেলওয়েতে চাকরি করা প্রকৌশলী শওকত আলী।

এদিকে, পদ্মা সেতুতে দেশের প্রথম পাথরবিহীন রেলপথ নির্মাণ শেষ হতে আর মাত্র সাত মিটার বাকি বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলীরা। একটি স্লিপারের অভাবে শেষ অংশটুকু ঢালাই করা সম্ভব হচ্ছে না। সেতুর মাঝামাঝি ৫ নম্বর মুভমেন্ট জয়েন্টের একটি স্লিপার নিয়ে চ্যালেঞ্জের কথা জানিয়েছেন প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম।

তিনি জানান, স্লিপারটির ছিদ্র ডিজাইন অনুযায়ী মিলছে না। সূক্ষ্ম এই রেললাইন নিখুঁতভাবে নির্মাণ একেবারে শেষ পর্যায়ে। কিন্তু শেষ মুভমেন্ট জয়েন্টের বিশেষ এই স্লিপারটি যথাযথ না হওয়ায় বিলম্ব হচ্ছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জরুরি ভিত্তিতে চীন থেকে বিমানে করে এই স্লিপারটি নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছে বলে জানা গেছে।

প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা রেল সেতুতে মোট আটটি মুভমেন্ট জয়েন্ট রয়েছে। এর সাতটি যথাযথভাবে স্থাপন হয়েছে। বাকি জয়েন্টও স্থাপন হয়েছে তবে রেললাইন ঢালাই করার জন্য এই স্লিপারের বিকল্প নেই।

পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন হচ্ছে ১৭২ কিলোমিটার। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে প্রায় ২১ হাজার ৩৭ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন সরকার।

ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে পদ্মা সেতুর রেলপথ। প্রস্তাবিত পথটি পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতকে সংযুক্ত করে বেনাপোল-যশোর-নড়াইল-ভাঙ্গা-মাওয়া হয়ে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-টঙ্গী-আখাউড়া-চট্টগ্রাম-দোহাজারি-মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম সীমান্তে গিয়ে মিশবে। তাই পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চলাচলে নতুন এক অধ্যায় রচনা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। অর্থনীতিতে যুগান্তকারী এক অধ্যায় রচনা করবে নতুন এই রেল নেটওয়ার্ক।