পদ্মা সেতু দৃশ্যমান করতে পুরোদমে চলছে পাইলিং আর খুঁটি তৈরির কাজ
আগামী মাসের শেষের দিকেই পদ্মা সেতুর একটি বা দুটি স্টিলের কাঠামো (স্প্যান) খুঁটিতে বসানোর লক্ষ্য সরকারের। আর তা বসানো হবে নদীর জাজিরা প্রান্তে। এ লক্ষ্যে পাইলিং আর খুঁটি তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। এই কাজে গতি আনতে রোববার রাতে মাওয়ায় আনা হয়েছে ৩ হাজার কিলোজুল ক্ষমতাসম্পন্ন একটি হাইড্রোলিক হ্যামার।
সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর কাজে এত দিন তিনটি হাইড্রোলিক হ্যামার ব্যবহার করা হচ্ছিল। এগুলো ১ হাজার, ২ হাজার ও ২ হাজার ৪০০ কিলোজুল ক্ষমতাসম্পন্ন। এর মধ্যে ১ হাজার কিলোজুল ক্ষমতার হ্যামারটি শুধু প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে ব্যবহার হতো। বাকি দুটি হ্যামার দিয়ে মূল পাইলিংয়ের কাজ চালানো হয়েছে। কিন্তু এখন কাজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় দুই পারে একসঙ্গে পাইলিং চালানো যায় না। এ জন্য নতুন হ্যামার আনা হয়েছে।
জানতে চাইলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকৌশলী হুমায়ুন কবীর বলেন, নেদারল্যান্ডস থেকে আনা এই হ্যামারটির বিভিন্ন অংশ একসঙ্গে জোড়া দিয়ে প্রস্তুত করতে এক সপ্তাহ লাগবে। ১১ জুন থেকে পুরোদমে পাইলিংয়ের কাজে ব্যবহার করা শুরু হবে।
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুতে ৪২টি খুঁটি বা পিলার হবে। আর এসব খুঁটির নিচে ২৭২টি পাইল বসাতে হবে। এর একেকটি ৮৬ থেকে ১২৮ মিটার পর্যন্ত মাটির গভীরে ভারী হ্যামার দিয়ে প্রবেশ করানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৫৯টি পাইল বসানোর কাজ চলছে। এর মধ্যে ৩৮টি পাইল পুরোপুরি বসানো হয়ে গেছে। আর ২১টি পাইল অর্ধেক বসানো হয়েছে।
গত এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি-সংক্রান্ত প্রতিবেদন বলছে, মূল সেতু ৩৭ শতাংশ ও নদীশাসনের কাজ ৩০ শতাংশ এগিয়েছে। এর বাইরে দুই পারের সংযোগ সড়ক, টোল প্লাজা, সহায়ক অবকাঠামো, পুনর্বাসনের কাজ প্রায় শেষ। সব মিলিয়ে প্রকল্পের কাজ ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে সেতুটি চালু করতে হলে আগামী প্রায় দেড় বছরে আরও ৫৮ দশমিক ৫ শতাংশ কাজ করতে হবে।
মূল সেতুর কাজ করছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। আর নদীশাসনের কাজে নিয়োজিত আছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। পদ্মা সেতুর কাজ পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। মূল সেতু ও নদীশাসন হচ্ছে বড় দুটি কাজ। এর বাইরে দুই পারে সংযোগ সড়ক ও টোলপ্লাজা নির্মাণ এবং অফিস, বাসাসহ নির্মাণ অবকাঠামোর কাজ তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। মূল সেতু ও নদীশাসনের কাজ ছাড়া বাকিগুলো প্রায় শেষ পর্যায়ে।
পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ভায়াডাক্টসহ দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ৯ কিলোমিটার। দ্বিতল এই সেতুটি হবে স্টিলের। আর পিলার কংক্রিটের। এর নিচের তলার ভেতর দিয়ে চলবে রেল। আর ওপরে পিচঢালা পথ দিয়ে চলবে যানবাহন।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের নভেম্বরে কাজ শেষে তা যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সেতুতে ও এর দুই প্রান্তে রেললাইন নির্মাণের জন্য আলাদা আরেকটি প্রকল্প রয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যশোর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার কোটি টাকা। এর অর্থায়ন করার কথা চীন সরকারের। ইতিমধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। তবে সরকারের ঘোষণা অনুসারে, সেতু চালুর শুরুতেই ট্রেন চালু করা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মূল সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল কাদের বলেন, খুব শিগগিরই খুঁটির ওপর স্টিলের স্প্যান বসানোর কাজ শুরু হবে। ইতিমধ্যে স্প্যান বসানোর জন্য ৪ হাজার ক্ষমতাসম্পন্ন যে ক্রেন রয়েছে, সেটির পরীক্ষামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়েছে। প্রথমে শরীয়তপুরের জাজিরায় স্প্যান বসবে। আর স্প্যান বসানো শুরু হলেই সেতু মানুষের কাছে দৃশ্যমান হয়ে যাবে।
গাছ লাগিয়ে পুরস্কার: পদ্মা সেতুর পুনর্বাসন এলাকায় প্রায় দুই লাখ গাছ লাগিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আরও গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে জাতীয় বৃক্ষরোপণ পুরস্কার পেয়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। গত রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে পুরস্কারের অর্থ ও পদক গ্রহণ করেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম।প্রতিবেদন প্রথম আলো’র সৌজন্যে প্রকাশিত।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন