পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন ঘিরে একে-অপরের সমালোচনায় মোদি-মমতা

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফার ভোটে সহিংসতায় পাঁচজন নিহতের ঘটনায় কোচবিহারে ৩ দিনের জন্য রাজনীতিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাজ্যের নির্বাচন কমিশন।
এদিকে পঞ্চম দফা নির্বাচনের প্রচারণায় একে-অপরকে কথার বাণে ঘায়েল করছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে শনিবার সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণ। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া-হুগলী ছাড়াও কোচবিহার আলিপুরদুয়ারের ৪৪ আসনে ভোটের মধ্যে সবার নজর ছিল কোচবিহার জেলার শীতলকুচি আসনের দিকে।

তবে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে চলে গুলি, বোমা, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। এতে হতাহত হন বেশ কয়েকজন। শনিবার সকালে শীতলকুটিতে জীবনের প্রথম ভোট দিতে গিয়ে প্রাণ হারান এক যুবক। এরপর ওই এলাকায় শুরু হয় ব্যাপক সংঘর্ষ। নিহতরা সবাই তৃণমূল সমর্থক বলে দাবি পরিবারের।

এ ঘটনায় তৃণমূল এবং বিজেপি পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর ছুড়েছে। আগামী ১৭ এপ্রিল পঞ্চম দফার ভোটের প্রচারে যোগ দিয়ে মমতা-মোদি দুজনই দুজনার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমার পাঁচটা ভাইকে মেরে দিয়ে বলছে গ্রামবাসীরা নাকি বন্দুক কাড়তে এসেছিল। লজ্জা করে না গলায় দড়ি দিয়ে মরা উচিত বিজিপি তোমায়।

এদিকে চতুর্থ দফার ভোটে অংশ নেন সবচেয়ে বেশি তারকা প্রার্থী। এ দফায় ভাগ্য নির্ধারণ হবে অভিনেতা ইয়াশ দাশগুপ্ত, কাঞ্চন মল্লিক, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, পায়েল সরকার, লাভলী মৈত্রী, লকেট চট্টোপাধ্যায়ের। এদের মধ্যে লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং পায়েল সরকারের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

চতুর্থ দফার ভোটের নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রায় ৮ হাজার সদস্যের পাশাপাশি মাঠে ছিলেন রাজ্য পুলিশের ১২ হাজার সদস্য। পাঁচ জেলার ৪৪টি আসনে ভোট নেওয়া হয়।

এ দফায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোট ৩৪৫ প্রার্থী। ভাগ্য নির্ধারণ হবে অভিনেতা যশ দাশগুপ্ত, কাঞ্চন মল্লিক, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, পায়েল সরকার, লাভলী মৈত্রী, লকেট চট্টোপাধ্যায় মতো তারকা প্রার্থীদের। আগামী ১৭ এপ্রিল পঞ্চম দফায় ৪৫টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে মঙ্গলবার দিনভর বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, হামলা-পাল্টা হামলা আর বুথ দখলের মতো ঘটনার মধ্য দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ শেষ হয়।

নির্বাচন কমিশনের হিসাব মতে, মঙ্গলবার ভোট পড়ে প্রায় ৭৭ শতাংশ। তৃতীয় দফায় মঙ্গলবার সকালে কলকাতা লাগোয়া দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলী জেলার ৩১ আসনে একযোগে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে উত্তেজনা। কোথাও চলে প্রার্থীর ওপর হামলা, আবার কোথাও কোথাও এজেন্টকে মারধর করে আতঙ্ক তৈরির মতো ঘটনাও সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়।

তৃতীয় দফায় ৩১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোট ২০৫ জন প্রার্থী। নির্বাচনের তৃতীয় দফায় কলকাতা লাগোয়া দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং হুগলী জেলার ৩১ আসনে ২০৫ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে। উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, পাপিয়া অধিকারী ও তনুশ্রী চক্রবর্তীর মতো তারকা এবং রাজনীতিকরা।

গত ২৭ মার্চ প্রথম দফা এবং ১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হন। আগের দুই দফায় ৬০ এবং তৃতীয় দফায় ৩১ আসনের ভোটগ্রহণ শেষ হলেও পরবর্তী পাঁচ দফায় বাকি ২০৩ আসনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করবে নির্বাচন কমিশন। এদিকে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা করোনার সংক্রমণ মোকাবিলা করেই ভোট উৎসব শেষ করতে চায় নির্বাচন কমিশন। আগামী ১০ এপ্রিল চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ৮ দফা শেষে ২ মে প্রকাশ করা হবে ১৭তম পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল।