জরুরি অবস্থা ঘোষণা

পানিতে ভাসছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহর; বাস, ট্রেন ও বিমান চলাচলে বিঘ্ন

পানিতে ভাসছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহর বাস, ট্রেন, বিমান চলাচলে বিঘ্ন জরুরি অবস্থা ঘোষণা।

বৃহস্পতিবার রাত থেকেই মুষলধারে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। তারপর সারারাত এবং শুক্রবার বিরতিহীনভাবে ঝরেছে বৃষ্টি বিঘ্নিত হয় জনজীবন। স্কুলের খোলা থাকায় স্কুলে যায় ছেলেমেয়েরা। কিন্তু অধিকাংশ স্কুলের ফার্স্ট ফ্লোর এবং বেসমেন্ট বন্যার পানিতে ডুবে যায়। স্কুল চ্যান্সেলর ডেভিড ব্যাংকস জানিয়েছেন নগরের ১৪০০ পাবলিক স্কুলের মধ্যে প্রায় ১৫০টিতেই বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু মাটির নিচের অনেক ট্রেন স্টেশনে রেল লাইন ডুবে যাওয়ায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আর ওপর থেকে পানি পড়ায় প্লাটফর্মগুলোতেও দাঁড়ানো সম্ভব ছিল না। নিউইয়র্ক সিটির মত অভিজাত এই মহানগরীর রাস্তাগুলো এক ফুট থেকে দুই ফুট পানির নিচে ডুবে যায়। হাইওয়েগুলোর অবস্থাও তথৈবচ। দোকানে ঢুকে পড়ে পানি। বিপাকে পড়ে ফুড ভেন্ডররা। গাড়ি এবং মানুষ আটকা পড়ে যেখানে সেখানে।

নিউইয়র্ক স্টেটের গভর্নর ক্যাথি হকুল ও মেয়র এরিক অ্যাডামস জরুরি এই অবস্থা দেখে দ্রত নিউইয়র্ক সিটিতে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে । বেশি প্রয়োজন না থাকলে বাড়ি থেকে বের না হওয়ার অনুরোধ জানান। গভর্নর ক্যাথি হকুল জানান নিউইয়র্ক স্টেটের ২৭ মিলিয়ন বা ২ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ এই দুর্যোগের শিকার।

এই অঝর ধারায় বৃষ্টির কারণে কুইন্স, ব্রকলীন, ব্রংক্স ম্যানহ্যাটানের এলাকায় ৭ ইঞ্চি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয় ২৪ ঘন্টায়। বলা হয় তিন মাসেও সাধারণত এত বৃষ্টি হয় না। হাডসন নদী ফুলে ওঠায় পার্শ্ববর্তী পশ্চিম দিকে হবোকেন সিটি তলিয়ে যায় ২ ফুট পানির নিচে। ম্যানহ্যাটানের সেন্ট্রাল পার্কের জু থেকে বন্যার পানিতে ভেসে এক সি-লায়ন বাইরে চলে আসে।

র‌্যান্ডেলস আইল্যান্ডে নির্মিত অস্থায়ী শেল্টারের ছাদ ধরে রাখতে পারেনি বৃষ্টির পানি। একদিকে গ্রাউন্ড ভেসে যাওয়া, অপরদিকে ওপর থেকে পানি পড়া মাইগ্রান্টদের জীবন অতীষ্ট করে তোলে। নিউজার্সির গভর্নর ফিলি মারফিও তার স্টেটে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন। নিউইয়র্কের পার্শ্ববর্তী ন্যাসাউ, সাফোক ও ওয়েস্টচেস্টার কাউন্টিতেও ব্যাপক বন্যা দুর্বিসহ করে তোলে জনজীবন।

পুলিশ অনেক রাস্তা চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেয়। অনেক সাবওয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অনেক ট্রেন বিলম্বে চলে। সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা, লাগোয়ার্ডিয়া এয়ারপোর্টের গ্রাউন্ড ফ্লোরের এরাইভাল টার্মিনালের লবি এক ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেলে সকালে অনেক যাত্রী এসে বিপাকে পড়েন। জেএফকে ও লাগোয়ার্ডিয়া এয়ারপোর্টে অনেক ফ্লাইট বাতিল করা হয়।

জানা গেছে, এমন বৃষ্টি নিউইয়র্কে গত পঞ্চাশ বছরে খুব কমই হয়েছে। ১৮৮২ সালে হয়েছিল ৮.২৮ ইঞ্চি, ১৯৭৭ সালে ৭.৭৪ ইঞ্চি। ১৯৪৮ সালে হয়েছিল ৮ ইঞ্চি। শনিবারেও একই ধরনের বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে। আর রোববারে সূর্যের দেখা মিলবে নিউইয়র্কে।