পাবনার ঈশ্বরদীতে ধান সিদ্ধতে রাবার-প্লাস্টিক কারখানার ক্ষতিকারক ঝুট ব্যবহার!
পাবনার ঈশ্বরদীতে চাতালে ধান সিদ্ধ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষতিকর ঝুট। অতিরিক্ত লাভের আশায় হাসকিং মিলের চাতাল মালিকরা পরিবেশের বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে বিভিন্ন জুতা, রাবার, ফোম ও প্লাস্টিক জাতীয় কারখানার ঝুটের ব্যবহার করে পরিবেশ ও মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
ঝুট ব্যবহার শুরু হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই বয়লারের আশেপাশের গাছপালার পাতা রঙ বদলে গেছে এবং কুঁকড়ে যাচ্ছে। বাজারে তুষের ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাতাল মালিকরা অটো রাইচ মিল আর গরু ও মুরগির খাদ্য প্রস্তুতকারীদের কাছে এখন তুষ বিক্রি করছে। দুয়েকটি চাতাল বাদে প্রায় সাড়ে তিনশত চাতালে জ্বালানী হিসেবে এখন তুষের পরিবর্তে ঝুট ব্যবহার করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক কেজি ঝুটের দাম ৫ টাকা। আর তুষের দাম ১০-১২ টাকা। ধান সিদ্ধ করতে তুষের চেয়ে রাবার, প্লাস্টিক ও ফোমের ঝুটের জ্বালানীর তাপ ও স্থায়িত্ব অনেক বেশি। তুষের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং ঝুটের দাম কম থাকায় চাতাল মালিকরা পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে ঝুট ব্যবহার শুরু করেছেন। সব মিলিয়ে প্রতি ২৫০ বস্তা ধান সিদ্ধতে ১০-১২ হাজার টাকা বেশি লাভ হয়।
চাউলকল মালিক সমিতির সভাপতি জুলমত হায়দার জানান, বর্তমানে ৩০৮টি হাসকিং ও ১৭টি অটো রাইচ মিল গুদামে খাদ্য সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। চুক্তির বাইরেও বেশ কিছু চাতাল রয়েছে। ধান সিদ্ধতে খরচ কম হওয়ায় এবং তুষ বিক্রি করে বেশি লাভ হওয়ায় তুষের পরিবর্তে ঝুট ব্যবহার হচ্ছে।
বর্তমানে ধান ভেজা থাকায় অটো রাইচ মিলে জ্বালানীর জন্য অতিরিক্ত তুষ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। এছাড়া গরু ও মুরগির খাদ্য প্রস্তুতকারী কারখানাগুলো তুষ কিনে রিফাইন করে ৩৮-৪০ টাকা কেজি দরে পশু খাদ্য বাজারে বিক্রি করছে। চাতাল মালিকরা ১০-১২ টাকা কেজি দরে তুষ বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জয়নগর সম্পদ ট্রেডার্সের মালিক মনজুর রহমান জানান, তিনি আর দুয়েকজন ছাড়া সবাই তুষের পরিবর্তে ঝুট ব্যবহার করছেন। তিনি জার্মান প্রযুক্তির বয়লার ব্যবহার করে ২৫০ বস্তা ধান থেকে জ্বালানীর তুষ বাদ দিয়ে প্রায় ১৫০ বস্তা বাইরে বিক্রি করেন। যেসব মিলে ঝুট ব্যবহার হচ্ছে তার আশেপাশের গাছপালায় ইতোমধ্যেই ক্ষতিকারক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বলে জানান তিনি।
ঈশ্বরদীর অরোণকোলা এলাকাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ঢাকা থেকে এসব ঝুট কিনে ঈশ্বরদীর চাতালগুলোতে সরবরাহ করছেন। ঝুট সরবরাহকারী শফিকুল ইসলাম জানান, ঢাকা থেকে ঝুট এনে চালকলে সাড়ে পাঁচ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
তিনি তুলার ঝুটের ব্যবসা করলেও কাপড়ের ঝুটে আগুনের তাপ ক্ষণস্থায়ী হওয়ায় বিভিন্ন জুতা, রাবার, ক্যাপ, ফোম ও প্লাস্টিক জাতীয় কারখানার ঝুট সরবরাহ করছেন। এগুলো ব্যবহার করলে আগুন অনেকক্ষণ জ্বলে বলে জানান। পরিবেশের ক্ষতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সকলেই তো জ্বালাচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরের। তারপরও আমরা মনিটরিং করবো।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিএম ইমরুল কায়েস বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পাবনার সহাকারী পরিচালক নাজমূল হোসাইনের সঙ্গে মোবাইলে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন