পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় কালের গর্ভে বিলীন হতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী কাউন

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় কালের গর্ভে বিলীন হতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী কাউন চাষ। সুস্বাদু একটি ফসলের নাম কাউন। যা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। এক সময় গ্রামেগঞ্জে ব্যাপকভাবে চাষ হলেও বর্তমানে উন্নত জাত ফসলের প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে হারিয়ে যাচ্ছে এই ঐতিহ্যবাহী কাউন। স্বল্প খরচ, পরিবেশবান্ধব, সহজ চাষ পদ্ধতি ও পানি সাশ্রয়ী হওয়ার পরও শুধুমাত্র মানুষের অবহেলা-অনাদরে কাউনের চাষ আর নেই বললেই চলে। ফসলটি যেন কালের গর্ভে বিলীন হতে চলেছে। কাউনের বৈজ্ঞানিক নাম ছিটারিয়া ইটালিকা গোত্র-গ্রামিনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর কাউন চাষের দেখা মেলে উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের কালদাসপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল জব্বারের জমিতে। কাছে গিয়ে দেখা যায়, বিলুপ্তপ্রায় কাউন ফসলটি তার অস্তিত্ব জানান দিয়ে বলছে, ‘এখনো আমার অস্তিত্ব শেষ হয়ে যায়নি। তবে আমি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে,পারলে আমাকে রক্ষা কর।’

কথা হয় তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছলেমান আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, আগে আমাদের এ অঞ্চলে অনেক জমিতেই কাউন চাষ হতো, এখন আর চোখে পড়ে না। ফসলটির চাষ পদ্ধতি সহজ, স্বল্প খরচ, পানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব। শুকনো জমিতে ঝুরঝুরে চাষের পর চৈত্র (এপ্রিল) মাসে বীজ ছিটিয়ে বপন করতে হয়। আষাঢ় (জুলাই) মাসে ফসল ঘরে ওঠে। তিনি আরও জানান, মাঝে একবার নিড়ানি দিলেই হয়, সেচের প্রয়োজন হয় না। ফলন হয় বিঘাপ্রতি ১০-১৫ মণ। বাজারে চাহিদা রয়েছে প্রচুর।

তাছাড়া কাউনের শীষ ছিঁড়ে নিয়ে অবশিষ্ট গাছ মাটির সঙ্গে মিশিয়ে জৈব সারের ঘাটতি মেটানো সম্ভব। আবার কেউ কেউ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করে। কাউনের ভাত অত্যন্ত সুস্বাদু ও মুখরোচক। জন্ডিস রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। পিঠা-পায়েস তৈরিতে এর কোনো জুড়ি নেই।

ভজনপুর ডিগ্রি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ মাসুদ জানান- লাভজনক, সুস্বাদু, পরিবেশবান্ধব, স্বল্প খরচে আবাদযোগ্য ও পানি সাশ্রয়ী কাউন নামের দেশি এ ফসলটি যাতে বিলুপ্ত হয়ে না যায়, এ জন্য সবার এগিয়ে আসা উচিত। দেশীয় জাতের এ ফসলটিকে আমাদের স্বার্থেই সংরক্ষণ করতে হবে। বর্তমানে বাজারে এর চাহিদা প্রচুর। কৃষি অধিদপ্তর কর্তৃক কৃষককে উৎসাহের মাধ্যমেই পারবে কাউনের আবাদ কে টিকিয়ে রাখতে। তা না হলে পরবর্তী প্রজন্ম জানতেই পারবে না কাউন নামটি।

উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, কাউন ফসলটি আসলেই বিলুপ্তির পথে। কয়েকজন কৃষক কাউনের আবাদ করেছেন জানাগেছে। এটি একটি উপকারী ফসল, চাহিদাও প্রচুর। আমাদের স্বার্থেই দেশীয় জাতের এই কাউন ফসলটিকে সংরক্ষণ করতে হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার জাহাঙ্গীর আলম জানান, কাউন নামের ফসলটি আর নেই বললেই চলে। পুরো উপজেলায় এবার ৪হেক্টর জমিতে কাউনের আবাদ করা হয়েছে। ফসলি জমি কমে যাওয়াই ফসলটি এখন বেশিরভাগ দেখায় যায় না। তিনি আরও জানান, উপজেলার মানুষ এখন বাদাম, ভুট্টা, তিল চাষে বেশি আগ্রহী হয়েছে। তবে প্রতিটি ইউনিয়নে বিলুপ্তির পথে এই ফসলটির চাহিদা বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন।