পাবনার ঈশ্বরদীবাসী ৭০ বছর ধরে কলঙ্ক বয়ে বেড়াচ্ছেন
পাবনায় ৭০ বছর ধরে একটি কলঙ্ক বয়ে বেড়াচ্ছে উত্তরাঞ্চলের গুরত্বপূর্ণ জনপদের এলাকা ঈশ্বরদীবাসী। ১৯৪৮ সালে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দীনের নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ঈশ্বরদীতে। এরপর ভাষা আন্দোলনের সিঁড়ি বয়ে সংঘঠিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ।
ভাষা ও দেশমার্তৃকার জন্য জাতি অকাতরে প্রাণ দেয়। এরইমাঝে দেশ স্বাধীনেরও ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু বাংলা ভাষার বিরোধিতাকারী সেই নাজিম উদ্দিনের নামে এখনও রয়ে গেছে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি নাজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়’।
নাম পরিবর্তনের দাবীতে বেশ কয়েকদফা প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলেও এবারের মহান একুশেও ঈশ্বরদীবাসীকে কলঙ্ক বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। স্কুলটির নাম পরিবর্তনের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন ও পরবর্তীতে সেই তদন্ত কমিটির একটি প্রস্তাবিত প্রতিবেদক সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হলেও তা আজও পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
ঈশ্বরদীর মুক্তিযুদ্ধের গবেষক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে পূর্ব বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দীন বাংলা ভাষার বিরুদ্ধাচরণ করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।
১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি পল্টন ময়দানেও তিনি ‘একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ বলে এই ঘোষণা করেছিলেন।অথচ সেই নাজিম উদ্দীনের নামে স্কুল প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় গত ৭০ বছর ধরে কলঙ্ক বয়ে বেড়াচ্ছেন ঈশ্বরদীবাসী।
জানা যায়, ১৯৫২ সালে তৎকালীন পাকিস্তানি উর্দূভাষী প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দীনের নামে নামকরণ করে এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।পরবর্তীতে এটি ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি নাজিম উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়’ নামে প্রতিষ্ঠা পায় স্কুলটি। ঈশ্বরদীবাসীও এই স্কুলের নাম পরিবর্তন করার দাবীতে বিভিন্ন সময়ে সোচ্চার হন।
২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নিজেরাই স্কুলের প্রধান ফটক থেকে ‘নাজিম উদ্দীন’ নামটি কালো কালি দিয়ে মুছে দেয়। ছাত্রলীগের এই উদ্যোগ প্রশংসিত হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই স্কুলের নাম পরিবর্তন করার জন্য আমি এই এলাকার এমপি হিসেবে রেল মন্ত্রীকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছি।
এবিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলা ভাষার প্রতি সম্মান রেখে সরকারি রেলওয়ের এই স্কুলটির নাম পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে। আমরা সুপারিশমালা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলেই আনুষ্ঠানিক-ভাবে স্কুলটির নাম পরিবর্তন করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিএম ইমরুল কায়েস জানান, বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে অবস্থানকারী সেই খাজা নাজিম উদ্দীনের নামে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলটির নাম পরিবর্তন করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর মধ্যে সুপারিশপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন