পাবনার ভাঙ্গুড়ায় নির্বাচনী ডিউটি বণ্টনে ঘুষ-বাণিজ্য

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় স্মার্ট কার্ড ও সার্টিফিকেটধারী আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের নাম বাদ রেখে তালিকা করার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন দলনেতা ও নেত্রীদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী সদস্যদের অভিযোগ, টাকা না দেওয়ায় নির্বাচনী ডিউটি তালিকায় নাম দেয়নি দলনেতা ও দলনেত্রীরা।

সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল থেকে ভাঙ্গুড়া উপজেলা চত্বরে বাছাই অনুষ্ঠান হয়। এ সময় দলনেতা ও দলনেত্রীদের সাথে বাক-বিতন্ডে জড়িয়ে পড়েন তালিকা থেকে বাদপড়া অনেকেই। বাছাইয়ে উপস্থিত ছিলেন জেলা আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর (সার্কেল এ্যাডজুট্যান্ট) মো. আসিফ ইকবাল, ভাঙ্গুড়া উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা মোসা: মমতাজ মহল, প্রশিক্ষক সামিউল ইসলাম প্রমুখ।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, ইউনিয়ন দলনেতার মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে জন প্রতি ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা আদায় করা হয়েছে। টাকা দেওয়ার পরেও ডিউটিতে নাম দেয়নি দলনেতারা। বাছাইকালে স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন। এদিকে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

এর আগে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় এমন ঘুষ-বাণিজ্যের একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে ঘুষের টাকা ফেরত দিলেও তাদের নামের তালিকা দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, এ উপজেলায় মোট ৪৫টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন প্লাটুন কমান্ডার (পিসি), একজন সহকারী প্লাটুন কমান্ডার (এপিসি), ৬ জন পুরুষ ও ৪ জন নারীসহ মোট ১২ জন আনসার-ভিডিপি সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এসব কেন্দ্রে মোট ৫৪০ জন ডিউটি পালন করার কথা রয়েছে।

উপজেলার ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের নৌবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আনসার সদস্য আবেদা খাতুন বলেন, নির্বাচনে ডিউটি তালিকায় নাম দিতে তাদের ৪ জনের কাছ থেকে ৪,০০০ হাজার টাকা নিয়েছে পিসি জিল্লুর। পরে সবার টাকা ফেরত দিলেও ডিউটির তালিকায় নাম দেয়নি আমাদের।

ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের চর-ভাঙ্গুড়া গ্রামের হাফিজুল ইসলাম বলেন, আমার স্মার্ট কার্ড থাকার পরেও ঘুষের টাকা না দেওয়ার কারণে আমাকে তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে দলনেতা জিল্লুরকে বলা হলে সে আমার কথা এড়িয়ে যায়। বাছাইকালে এখানে স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে।

উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের কয়েকজন আনসার সদস্য বলেন, আমাদের সার্টিফিকেট থাকা সর্ত্বেও টাকা না দেওয়ার কারণে ডিউটি তালিকায় নাম দেয়নি দলনেত্রী আছিয়া। তারা অভিযোগ করেন, নির্বাচন, পূজা এলেই তালিকায় নাম দিতে আনসার অফিসে টাকা দিতে হয় দলনেতা ও দলনেত্রীদের। আমরা পেটের দায়ে কষ্ট করে ডিউটি করি। গত নির্বাচনেও তাদের টাকা দিতে হয়েছে।

ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন ভিডিপি দলনেতা (পিসি) জিল্লুর রহমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। আমি কোন টাকা নেইনি।

খানমরিচ ইউনিয়ন আনসার দলনেত্রী (পিসি) আছিয়া খাতুন বলেন, আজ পর্যন্ত আমি কারো কাছ থেকে ডিউটি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা চাইনি। যদি কেউ বলে থাকে সেটা আমার সামনে এসে বলতে বলেন।

উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা মোসাঃ মমতাজ মহল বলেন, টাকা নেওয়ার বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে যদি কেউ টাকা নিয়ে থাকে লিখিত অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে সার্কেল এ্যাডজুট্যান্ট মো. আসিফ ইকবাল বলেন, এখানে টাকা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।