পাবনায় গরুর বদলে অটোরিকশা দিয়ে ঘানিতে তেল উৎপাদন!
একসময় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ছিল ঘানির সরিষার তেল। গরু দিয়ে ঘানি টেনে সরিষার তেল উৎপাদন করা হতো। কালের বিবর্তনে আধুনিক যন্ত্রপাতির ছোঁয়ায় বর্তমানে সরিষার তেল উৎপাদনের ক্ষেত্রে এসেছে আমূল পরিবর্তন। ফলে গরু দিয়ে ঘানি টেনে সরিষার তেল উৎপাদন সচরাচর খুব একটা দেখা যায় না।
এবার গরুর বদলে অটোরিকশা দিয়ে সরিষার তেল উৎপাদনের খবর পাওয়া গেলো।
কিছু কিছু এলাকায় অবশ্য এখনো দেখা মেলে ঘানি টেনে সরিষার তেল উৎপাদন। তবে অতীতের মতো এখনো রয়েছে ঘানির সরিষার তেলের ব্যাপক চাহিদা।
তাইতো ঘানির সরিষার তেল উৎপাদনে গরুর বদলে অটোরিকশা ব্যবহার করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন পাবনার এক নারী।
পাবনা জেলার আটঘরিয়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম গোকুলনগরে ঘানির কারখানা গড়ে তুলেছেন সফল নারী উদ্যোক্তা শারমিন আক্তার। এখানে ঘানি টানতে ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।
শিক্ষা জীবন শেষ করে চাকরির পিছে না ছুটে নিজের প্রচেষ্টায় স্বাবলম্বী হতে চেয়েছেন শারমিন। তার এই উদ্যমী সাহসিকতা আর প্রচেষ্টায় নিজ গ্রামেই স্থাপন করেন সরিষা তেলের ঘানিঘর। করোনাকালীন ফেসবুক পেজের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাঠের ঘানিতে ভাঙানো সরিষার তেল সরবরাহের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেন তিনি।
শারমিন আক্তার জানান, ‘ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে প্রতিদিন বোতলজাত করে চাহিদা অনুপাতে তেল পাঠিয়ে দিচ্ছি। অনেকেই আবার আমার ঘানিঘর থেকেই তেল নিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি আরও আধুনিক ও বড় করার ইচ্ছা আছে। সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমি এই প্রতিষ্ঠানটিকে সারা বাংলাদেশের মডেল হিসেবে দাঁড় করাতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘একবার ব্যাটারি চার্জ দিলে তা দিয়ে প্রায় ৮ ঘন্টা ঘানি চালানো যায়। এতে সরিষার তেলের গুণাগুণ অক্ষুন্ন থাকে। আর তিন ঘণ্টায় ১০ কেজি সরিষার বীজ ভাঙিয়ে গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার সরিষার তেল উৎপাদিত হয়।
শারমিন আক্তার জানান, ‘গরুর চোখ বেঁধে যখন ঘন্টার পর ঘন্টা ঘানি টানা হতো তখন গরুর কষ্ট দেখে নিজেদের খুব খারাপ লাগত। তাই চিন্তা করে বিকল্প পদ্ধতির কথা ভাবি আমরা। অতঃপর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দিয়ে ঘানি টানার ব্যবস্থা করি। এর ফলে সরিষার তেলের গুণাগুণ কোন পরিবর্তন হয়নি। তাই অনেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে ঘানির সরিষার তেল কিনে নিয়ে যাচ্ছে। ঘানিতে তৈরি খাঁটি সরিষার তেল কিনতে পারে এলাকাবাসীও খুব সন্তুষ্ট।’
এদিকে অভিনব পদ্ধতিতে ঘানির সরিষার তেল উৎপাদনে সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন পাবনা বিসিক নগরীর সহকারি পরিচালক রফিকুল ইসলাম।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন