পিঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে গ্রীষ্মকালীন পিঁয়াজের চাষ ছড়িয়ে দিতে হবে: কৃষিমন্ত্রী
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, প্রদর্শনী প্লট থেকে নমুনা পিঁয়াজ সংগ্রহে দেখা যাচ্ছে হেক্টর প্রতি প্রায় ১৯ মেট্রিক টন গ্রীষ্মকালীন পিঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে, যা খুবই আনন্দের ও আশাব্যাঞ্জক। পিঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হলে এই উচ্চফলনশীল বারি-৫ জাতের পিঁয়াজের চাষ সারা দেশে দ্রুত ছড়িয়ে দিতে হবে। কারণ, পিঁয়াজে আমরা অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে চাই না, পিঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চাই।
তিনি বলেন, দেশে পিঁয়াজ নিয়ে সংকট চলছে। পিঁয়াজ রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর পিঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার সবচেয়ে সম্ভাবনা তৈরি করেছে গ্রীষ্মকালীন পিঁয়াজ। পিঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হলে আমাদের গ্রীষ্মকালীন পিঁয়াজ উৎপাদন করতে হবে।
মন্ত্রী রবিবার বিকেলে অনলাইনে সচিবালয় থেকে মেহেরপুরের সদর উপজেলার কালিগাংনি গ্রামে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) আয়োজিত ‘গ্রীষ্মকালীন পিঁয়াজের’ মাঠ দিবসে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং কৃষি সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম।
মাঠদিবসে প্রদর্শনী প্লট থেকে গ্রীষ্মকালীন পিঁয়াজের নমুনা হার্ভেস্টে দেখা যায়, বারি-৫ জাতের গ্রীষ্মকালীন পিঁয়াজের উৎপাদন অনেক ভাল, হেক্টর প্রতি প্রায় ১৯ মেট্রিক টন। এবছর মেহেরপুরে ১৭৯জন কৃষক প্রায় ২৫ একর জমিতে বারি-৫ জাতের গ্রীষ্মকালীন পিঁয়াজের চাষ করেছেন।
অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী বলেন, পিঁয়াজ অত্যন্ত পচনশীল পণ্য। মজুত করে রাখা যায় না। সহজে মজুত করে রাখতে পারলে পিঁয়াজ নিয়ে সংকট হতে না। পিঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য কোল্ড স্টোরেজের সুবিধা বাড়াতে হবে অথবা গ্রীষ্মকালীন পিঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে হবে। বিশেষ কোল্ড স্টোরেজে মজুত করতে পারলে পিঁয়াজ নিয়ে সংকট কমতো, তবে সেক্ষেত্রে পিঁয়াজের দাম বেড়ে যেতে পারে। সে তুলনায় তুলনামূলকভাবে গ্রীষ্মকালীন পিঁয়াজের চাষ সহজতর ও অধিক সম্ভাবনাময়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনকে দ্রুত সম্প্রসারণের নির্দেশ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, এই উচ্চফলনশীল বারি-৫ জাতের পিঁয়াজের চাষ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে গ্রীষ্মকালীন পিঁয়াজ চাষীদের বীজ, উপকরণ, প্রযুক্তিসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।
তিনি বলেন, স্বল্পসুদে পিঁয়াজ চাষীদের কৃষিঋণ নিশ্চিত করতে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের সমন্বয়ে কমিটি করে দেয়া হবে। পিঁয়াজ, রসুনসহ মসলাজাতীয় ফসলের চাষে মাত্র ৪% সুদে কৃষকেদেরকে কৃষিঋণ দেয়া হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলো এ কৃষিঋণ প্রকৃত কৃষক পায় না। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব কৃষিঋণ নিয়ে কৃষিবাদে অন্যান্য কাজে লাগায়। এ কৃষিঋণ যাতে প্রকৃত কৃষক পায়; পিঁয়াজ, রসুনসহ মসলাজাতীয় ফসলের চাষে কাজে লাগে তা কঠোরভাবে এসব কমিটির মাধ্যমে মনিটর করা হবে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, মেহেরপুর কৃষিতে অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল। এখানকার মাটি খুবই উর্বর হওয়ায় প্রায় সব ধরনের ফসল প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন হয়। অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি পিঁয়াজের ফলনও অনেক। দেশে পিঁয়াজের ঘাটতি পূরণে এই অঞ্চলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই স্বল্প খরচে যেন অধিক পরিমাণ পিঁয়াজ উৎপাদন করা যায় সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। এজন্য, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, পিঁয়াজের পচনরোধে আধুনিক সংরক্ষণ ব্যবস্থাও গড়ে তুলতে হবে।
কৃষি সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম বলেন, আগামী ৩ বছরে দেশে পিঁয়াজের উৎপাদন ১০ লাখ টন বাড়ানো হবে। সেজন্য গ্রীষ্মকালীন পিঁয়াজ উৎপাদন বাড়াতে হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় এ লক্ষ্য অর্জনে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
বারির মহাপরিচালক ড. মো. নাজিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন