পুতিনের ‘সোভিয়েত দৌড়’ ঠেকাতে পশ্চিমারা এক

২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়ার ১৩৯ কূটনৈতিককে বহিষ্কার করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমের ২৪ রাষ্ট্র। আরও কয়েকটি দেশেও ‘রুশ বহিষ্কারের’ তোড়জোড় চলছে। যুক্তরাজ্যে এক সাবেক রুশ গুপ্তচর ও তার মেয়েকে সামরিক বাহিনীর ব্যবহৃত বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস (নার্ভ এজেন্ট) প্রয়োগে হত্যাচেষ্টায় মস্কোর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এমন কঠোর অবস্থান নিয়েছে পশ্চিমারা।

মস্কোর বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন ও ইউরোপীয় দেশগুলোর এ পদক্ষেপকে নাটকীয় ও আকস্মিক বলে মনে হতে পারে। তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আগ্রাসী নীতির কারণেই রাশিয়ার ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিতে একমত হয়েছে ইউরোপ। বিশ্লেষকরা বলছেন, পুতিনের ‘সোভিয়েত দৌড়’ ঠেকাতেই একমাঠে এক ছাতার তলে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো।

প্রায় দুই দশক ধরে রাশিয়া শাসন করছেন রুশ গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির সাবেক কর্মকর্তা প্রেসিডেন্ট পুতিন। গত সপ্তাহেই দেশটিতে পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। নির্বাচনের মধ্যদিয়ে আরও ছয় বছরের জন্য ক্ষমতার মেয়াদ নিশ্চিত করেছেন তিনি। দীর্ঘ গত দুই দশকের শাসনে বৈশ্বিক ক্ষমতার বলয়ে রাশিয়াকে প্রতাপশালী হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছেন পুতিন। ক্ষমতা ও আধিপত্যের প্রশ্নে কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না তিনি। সোভিয়েত ইউনিয়নের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার স্বপ্নে বিভোর। আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে পশ্চিমাদের মিত্র ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত করেন।

এ ঘটনার পর এক সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের যে অপরিমেয় শক্তি আমি আমার শৈশবে দেখেছি, আমি তা আবার ফিরিয়ে আনতে চাই।’ পশ্চিমাদের ক্ষোভ বাড়িয়ে ২০১৫ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সামরিক সহযোগিতাসহ সার্বিক সহায়তার ঘোষণা দেন তিনি। পুতিনের এ আগ্রাসী নীতি নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর একাংশ ক্ষুব্ধ ছিল আগে থেকেই। অপর একটি অংশের রাশিয়ার সঙ্গে স্বার্থসংশ্লিষ্টতা থাকলেও রুশ গুপ্তচর ও তার মেয়ের হত্যাচেষ্টায় মস্কোর সংশ্লিষ্টতার দাবি ইউরোপীয় দেশগুলোকে এক কাতারে নিয়ে আসে।

এছাড়া রাশিয়াকে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ধোঁয়াশাপূর্ণ অবস্থান ও বন্ধুত্বপূর্ণ বাগাড়ম্বরের আড়ালে মার্কিন প্রশাসন দীর্ঘদিনের পরিকল্পনায় রুশবিরোধী এ পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সমন্বিত এ পদক্ষেপ সম্ভব হয়েছে।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মস্কোর প্রতি ট্রাম্পের বন্ধুত্বপূর্ণ কথাবার্তা যখন সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম দখল করছিল তখন বিশ্বজুড়ে রাশিয়াকে মোকাবিলায় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন ও হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতেই হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগনের নীতিবিষয়ক চূড়ান্ত নথিতে রাশিয়াকে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা হয়।

গত মাসে সিরিয়ায় মার্কিন সেনাবাহিনীর হামলায় রাশিয়া সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সামরিক প্রতিষ্ঠানের হয়ে কর্মরত অন্তত ৩০০ যোদ্ধা আহত বা নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও মার্কিন সমর্থিত যোদ্ধাদের ওপর হামলার পর এ পদক্ষেপ নেয় ট্রাম্প প্রশাসন। মার্চের শুরুতেই মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলার জন্য ইউক্রেনকে ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র প্রদান করে।