পুতিন-কিম বৈঠক : কী কথা হলো?
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রথমবারের মতো বৈঠক করেছেন। বৈঠকে পারস্পরিক সুসম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা।
রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় বন্দর নগরী ভ্লাদিভস্তকের কাছাকাছি প্রশান্ত মহাসাগরের রাস্কি দ্বীপে দুই নেতার এই বৈঠক হয়।
এর আগে বুধবার উত্তর কোরীয় নেতা রাশিয়ায় পৌঁছেন এবং দেশটিতে তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানানো হয়।
ভিয়েতনামের হ্যানয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ার পরই পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসলেন কিম।
বিবিসি বলছে, উদ্বোধনী বক্তব্যে রুশ ও উত্তর কোরীয় নেতা দুই দেশের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কের ইতিহাসের কথা উল্লেখ করেন।
পুতিন বলেন, তিনি কোরিয়ান অঞ্চলে বিরাজমান উত্তেজনা প্রশমনের ক্ষেত্রে সহায়তা করতে চান।
তিনি বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী যে, আপনার এই রাশিয়া সফরের ফলে কোরীয় উপদ্বীপের বর্তমান পরিস্থিতি কীভাবে সমাধান করতে পারি এবং চলমান প্রক্রিয়ায় রাশিয়া কীভাবে ইতিবাচক উপায়ে ভূমিকা রাখতে পারে তা ভালোভাবে অনুধাবনে আমাদের সাহায্য করবে।’
কিম বলেন, তিনি আশা করেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য একটি কার্যকর বৈঠক হবে যাদের দীর্ঘ বন্ধুত্বের ইতিহাস রয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্সিয়াল মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ক্রেমলিন বিশ্বাস করে, উত্তর কোরিয়ায় ছয়-জাতি আলোচনা যা বর্তমানে স্থগিত আছে, সেটাই এই উপদ্বীপের পরমাণু অস্ত্র বিষয়ক সমস্যা সমাধানের একমাত্র কার্যকর উপায়।
২০০৩ সালে ওই আলোচনা শুরু হয়েছিল, যাতে দুই কোরিয়া ছাড়াও চীন, জাপান, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র ছিল।
প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারিতে আমেরিকার সাথে পরমাণু আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পর এই সফরকে উত্তর কোরিয়ার জন্য একটি বিশাল সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে তাদের যে শক্তিশালী বন্ধু রয়েছে সেটা তুলে ধরা সম্ভব হবে।
উত্তর কোরিয়া হ্যানয়ের আলোচনা ভেস্তে যাবার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে দোষারোপ করেছে।
চলতি মাসের শুরুতে পিয়ংইয়ংয়ের পক্ষ থেকে পম্পেওকে ‘ফালতু বক্তব্যের’ অভিযোগ তুলে তাকে আলোচনার বাইরে রাখার জন্য এবং তার জায়গায় “অধিকতর সচেষ্ট” কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
তাছাড়া উত্তর কোরিয়ার অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ যে কেবল আমেরিকার ওপর নির্ভর করছে না- সেটি তুলে ধরারও একটি সুযোগ এই বৈঠক।
এ ছাড়া কিম নিজ দেশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার বিষয়ে মস্কোর ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করবেন বলেও মনে করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সম্মেলন রাশিয়ার জন্যও একটি সুযোগ নিয়ে এসেছে যেখানে তারা দেখাতে পারবে যে কোরীয় উপদ্বীপে তারাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়ানক।
প্রেসিডেন্ট পুতিন উত্তর কোরীয় নেতার সাথে সাক্ষাতের জন্য বেশ আগে থেকে আগ্রহী ছিলেন। এমনকি ট্রাম্প-কিম বৈঠকের সময় ক্রেমলিন কিছুটা সাইড-লাইনে থাকা সত্ত্বেও।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন তার কমিউনিস্ট মিত্র উত্তর কোরিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সামরিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে, মতাদর্শিক এবং কৌশলগত কারণে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার সাথে বাণিজ্যিক যোগাযোগ সঙ্কুচিত হয়ে যায় এবং উত্তর কোরিয়া প্রধান মিত্র হিসেবে চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন