প্রতিষ্ঠার ৩৯ বছর, ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বিএনপি
রাজনৈতিক নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে চল্লিশে পা রাখছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি।শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) দলটির ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন সময় সংকটে পড়লেও বিগত কয়েক বছর ধরে ক্ষমতাসীনদের দাপটের কাছে অনেকটাই কোণঠাসা বিএনপি। আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দেশের অন্যতম রাজনৈতিক এই দলটি।
বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর থেকে নিরপেক্ষ সরকার দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। কিন্তু কোনো কাযর্করি আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারায় ফল ঘরে তুলতে পারেনি দলটি।
আন্দোলন করতে দিয়ে উল্টো মামলা-হামলার শিকার হয়ে কারাবরণ করতে হয়েছে দলটির শত শত নেতাকর্মীকে।এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলা বিএনপির নেতাদের আদালতে হাজিরা দেওয়া ‘রুটিন ওয়ার্ক’ এ পরিণত হয়েছে।
মুলত: ২০১৪ সালর ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে যায়। আগাম নির্বাচনের দাবি আদায়েও ব্যর্থ হয় দলটি। পরবর্তিতে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এসে সহায়ক সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দাবি করছে।
এ লক্ষ্য অর্জনে দেশের ভেতরে এবং আন্তর্জাতিকভাবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে নানা আঙ্গিকে কাজ করে যাচ্ছেন দলের শীর্ষ নেতারা।
দলটির নেতাকর্মীদের দাবি, ২০০৭ সালের এক-এগারোর পর থেকে বিএনপি বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঝুলছে মামলার খড়গ। শীর্ষপর্যায়ের অধিকাংশ নেতাকে আগামীতে নির্বাচন করতে দেয়া হবে কি না তা নিয়ে আছে সংশয়।
তবে একটি বিষয় পরিস্কার সরকারের নানা অপচেষ্টার বিএনপিতে ভাঙন ধারাতে পারেনি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি তার আর্দশকে সামনে নিয়েই এগিযে যাবে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এরপর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের এক পটভূমিতে ওই বছরের ৭ নভেম্বর ক্ষমতায় চলে আসেন জিয়াউর রহমান। প্রথমে তিনি ১৯ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল), পরবর্তীকালে ডান-বাম বিভিন্ন রাজনৈতিক মত ও পথের অনুসারীদের এক মঞ্চে এনে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিতে রূপান্তরিত করেন।
বিএনপি গঠনের মাত্র ৩ বছরের মাথায় ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে একদল বিপথগামী সেনা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে। পরে দলের হাল ধরেন জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দলটির ৩৯ বছরের ইতিহাসে প্রায় ৩৬ বছর ধরে দলের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করছেন খালেদা জিয়া।
জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর দলটি প্রথমবারের মতো নেতৃত্ব সংকটে পড়ে। তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তার দলের হাল ধরেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদের সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। বিচারপতি সাত্তারের ক্ষমতাচ্যুতির মাধ্যমে বিএনপির অস্তিত্ব সংকটে পড়ে।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ বিএনপির অনেক নেতাই তখন জেনারেল এরশাদের সরকারে যোগ দেন। সংকটকালে ১৯৮৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বিএনপির হাল ধরেন খালেদা জিয়া।
জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপোসহীন ভূমিকা ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। এরপর ২০০১ সালে আবারও ক্ষমতায় আসে দলটি। বর্তমানে প্রায় ১১ বছর ধরে দলটি ক্ষমতার বাইরে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘মানুষের প্রত্যাশা এখন এই সরকার পতন। এটা নির্বাচন ছাড়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। আমরা সহায়ক সরকারের কথা বলেছি। এ দাবি আদায়ে চ্যালেঞ্জ আছে।’
দল প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বিএনপির এই প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য বলেন, ‘বাংলাদেশ সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পাশে মাথা উঁচূ করে দাঁড়াবে, গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া, মানুষের খাদ্য-বস্ত্র, শিক্ষার নিশ্চিয়তা প্রদানের লক্ষ্যেই বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পহেলা সেপ্টেম্বর আমরা সারাদেশে দলের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবো।’
দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, বিগত ১০ বছরে বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা যেভাবে হামলা-মামলা গুম, খুন শিকার হয়েছেন। তাদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। ত্যাগ-তিত্তিক্ষার বিনিময়ে আমরা গণতান্ত্রিক বাংলদেশ উপহার দিবো এটা হবে আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শপথ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন