প্রথম দেশ হিসেবে করোনা ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিল যুক্তরাজ্য

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্য। অনুমোদনের পরে দেশজুরে ব্যাপকভাবে প্রয়োগের পথে রয়েছে দেশটি।

ব্রিটেনের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমএইচআরএ জানিয়েছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ৯৫ শতাংশ সক্ষম এই ভ্যাকসিনটি এখন ব্যবহারের জন্য নিরাপদ। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা মানুষজনের ওপর টিকার প্রয়োগ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যম বিবিসি।

এর মধ্যেই চার কোটি ভ্যাকসিনের জন্য চাহিদা দিয়েছে যুক্তরাজ্য, জনপ্রতি দুইটি করে ডোজ দিয়ে দুই কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া যাবে। খুব তাড়াতাড়ি এক কোটি টিকার ডোজ পাওয়া যাবে।

ভ্যাকসিন যেসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দশকের বেশি সময় লেগে যায়, সেখানে মাত্র ১০ মাসে এই ভ্যাকসিনের আবিষ্কারের প্রক্রিয়া শেষ করা হলো।

বেলজিয়ামে ফাইজার ভ্যাকসিন নিয়ে হ্যানকক বলেন, প্রথম ডোজটি ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের শেষের দিকে এবং তারপরে পুরো ডিসেম্বর জুড়ে কয়েক মিলিয়ন ডোজ দেয়া হবে। ২০২০ সাল ভয়াবহ ছিল তবে ২০২১ সাল আরও ভালো হতে চলেছে বলে আমি বিশ্বাস করি।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, এ ভ্যাকসিনের মাধ্যমে আমাদের জীবনকে পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নেবে এবং অর্থনীতিকে আবারো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার গতি ফিরে পাবে।

তবে ফ্রি ভ্যাকসিনগুলো সবার জন্য বাধ্যতামূলক হবে না। তিন ধাপে দেশজুরে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। তার জন্য প্রায় ৫০ টি হাসপাতাল, স্টেডিয়াম, কনফারেন্স রুম প্রস্তুত করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু হলেও মানুষজনকে এখনো সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে এবং করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে স্বাস্থ্য সতর্কতার নিয়মকানুন কড়াকড়িভাবে পালন করতে হবে।

এর মানে হলো, এখনো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সেই সঙ্গে উপসর্গ দেখা গিলেই পরীক্ষা করাতে হবে এবং তাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখতে হবে।

এখনও পর্যন্ত ছয়টি দেশে ৪৩,৫০০ জনের শরীরে ফাইজার ও বায়োএনটেক ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে এবং এতে ঝুঁকিপূর্ণ কিছু দেখা যায়নি।

সারা বিশ্বে বেশ কিছু ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে। তার মধ্যে কয়েকটি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তার মধ্যে এই প্রথম এই ভ্যাকসিনটির এরকম সাফল্যের কথা জানা গেল।

এই ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে একেবারে ভিন্ন ধরনের একটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে যাতে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে প্রশিক্ষিত করে তোলার জন্য ভাইরাসটির জেনেটিক কোড শরীরে ইনজেক্ট করা হয়।

আগের পরীক্ষাগুলোতে দেখা গেছে ভ্যাকসিন দেওয়ার ফলে শরীরে এন্টিবডি এবং রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থার আরও একটি অংশ যা টি সেল নামে পরিচিত সেটিও তৈরি হয়। তিন সপ্তাহ ব্যবধানে এই ভ্যাকসিনের দুটো ডোজ দিতে হয়।

যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং তুরস্কে এই টিকার পরীক্ষা চালানো হয়েছে।

পরীক্ষায় দেখা গেছে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার সাত দিন পর ভাইরাসটি প্রতিরোধে মানবদেহে ৯০ শতাংশ সক্ষমতা তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাজ্য ছাড়াও সংস্থা দুটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ আরো কয়েকটি দেশেও তাদের ভ্যাকসিন অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে।

আগামী সপ্তাহ থেকে ব্যাপক হারে ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু করার কথা ভাবছে জার্মানি।

যুক্তরাষ্ট্রে সবার আগে স্বাস্থ্যকর্মীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগের সুপারিশ করেছে বিশেষজ্ঞরা। তবে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, যারা ভ্যাকসিন নিতে ইচ্ছুক তারা আগামী জুনের মধ্যেই তা পাবেন।