প্রধানমন্ত্রী কলা ঝুলিয়ে মুলা খাওয়ালেন : হেফাজত

হাইকোর্ট প্রাঙ্গণের ভাস্কর্য বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ওপর নাখোশ হয়েছেন মৌলবাদী গোষ্ঠী হেফাজতে ইসলামের নেতারা। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে আয়োজিত সুপ্রিম কোট থেকে ভাস্কর্য অপসারণের দাবিতে হেফাজতে ইসলামের এক বিক্ষোভ সমাবেশে তারা নানা ধরনের আবদার জানান।

সুলতানা কামালকে তসলিমা নাসরিনের মতো দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আবদার জানিয়েছে মৌলবাদী গোষ্ঠী হেফাজতে ইসলাম। সুলতানা কামালকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের আবদারও করেছে তারা।

ঢাকা মহানগর হেফাজতের সহ সভাপতি মুজিবুর রহমান পেশওয়ারী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, আপনি কলা ঝুলিয়ে মুলা খাওয়ালেন। তিন চারজন লোকের কারণে আপনার ভোট বাক্স কমছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সামনে আশা করবেন না। আগামী নির্বাচনে স্বয়ং মোদি এসে আপনাকে ক্ষমতায় বসাতে পারবেন না।’

শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে আয়োজিত সুপ্রিম কোট থেকে ভাস্কর্য অপসারণের দাবিতে হেফাজতে ইসলামের এক বিক্ষোভ সমাবেশে সহ-সভাপতি জুনায়েদ আল হাবীব ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুলতানা কামালকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন মৌলবাদী গোষ্ঠী হেফাজতে ইসলামের নেতারা।

সংগঠনের ঢাকা মহানগরের সহ-সভাপতি জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মসজিদগুলোয় সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছেন, প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে মসজিদ বানাবেন ঘোষণা দেন, মসজিদের নগরী বলে আপনিও মানেন। সুলতানা কামালকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করুন না হয়। তাকে তসলিমা নাসরিনের মতো দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেন। সুলতানা কামালের দেশ বাংলাদেশ নয়।’

মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, ‘সাহস কত সুলতানা কামালের! তিনি (সুলতানা কামাল) বলেছেন, ভাস্কর্য থাকতে না দিলে মসজিদ থাকতে দেওয়া হবে না। সুলতানা কামাল রাজপথে নেমে দেখুন, হাড্ডি-গোস্ত রাখা হবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই, বদরের যুদ্ধ কিন্তু রমজান মাসে হয়েছে। মক্কায় যত মূর্তি সরনো হয়েছে, সেটা রমজান মাসেই সরানোর হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি মূর্তি কি এখান থেকে সরাবেন? নাকি আমরা আসব? যদি আমাদের আসতে হয়, বাংলাদেশে পূজা মÐপ ছাড়া আর কোথাও মূর্তি রাখা হবে না। প্রশাসন ও সরকারকে বলতে চাই, আমরা যে আসতে পারি, আপনাদের নিশ্চয় তা জানা আছে। ২৪ ঘণ্টায় কোটি মানুষ ঘেরাও করবে হাই কোর্ট। মেহেরববানি করে আমাদের আসতে বাধ্য করবেন না। আমরা যে দিন আসব, পুলিশ ঠেকাতে পারবে না। আমরা যে দিন আসব, কাফনের কাপড় হাতে নিয়ে আসব।’

হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ স্পষ্টভাবে দু’টি শিবিরে বিভক্ত। একটি মূর্তির পক্ষে, অন্যটি মূর্তির বিরুদ্ধে। সুপ্রিম কোর্টের সামনে মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে ভিনদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য। সুপ্রিম কোটের কোন স্থানেই মূর্তি থাকতে দেওয়া হবে না।’ হেফাজতের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘সেদিনের জন্য প্রস্তুত থাকুন, প্রয়োজনে আল্লামা আহমদ শফী ডাক দেবেন। এ দেশের আলেম সমাজ রাজপথে নামবে। থেমিসের গলা রশি বেঁধে প্রয়োজনে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হবে।’

সংগঠনটির সহ-সভাপতি মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। তিনি বিচারপতি থাকতে পারেন না। সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, অবিলম্বে প্রধানবিচারপতিকে অপসারণ করতে হবে। যদি অপসারণ না করা হয়, তবে তৌহিদা জনতা ঈদের পর বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে মূর্তি আর মূর্তি পূজকদের বাংলাদেশ থেকে তাড়াতে বাধ্য হবে।’

মাওলানা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘ওরা বলে ভাস্কর্য আর মূর্তি এক জিনিস না। মূর্তির চেয়ে ভাস্কর্য আরও খারাপ। মূর্তির পূজা করে সামান্য গুটি কয়েক হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা। আর ভাস্কর্য পূজা করে মৃণাল হক, সুলতানা কামাল, শাহরিয়ার কবির, ইমরান এইচ সরকাররা। এসব নাস্তিক-মুরতাদরা ভাস্কর্য পূজা করে। এসব ডিজিটাল নাস্তিকদের বাংলার জমিন থেকে ভাস্বর্যসহ ভারতে পাচার করে দেওয়া হবে। মৃণাল হক সুপ্রিম কোর্টের সামনে জঙ্গিবাদ শুরু করেছে। সুপ্রিম কোর্টের সামনে দেবীর হাতে তরবারি দিয়েছে। এদের গ্রেফতার করে শাস্তি দিতে হবে।’

বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, ঢাকা মহানগর হেফাজতের সহ সভাপতি মুফতি মাহফুজুল হক, মুজিবুর রহমান পেশওয়ারী, গোলাম মুহিউদ্দীন ইকরাম, আতাউল্লাহ আমিন, হাকিম আব্দুল করিম প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা নূর হোছাইন কাসেমী বলেন, ‘গ্রিক দেবী অপসারণের কারণে আমার গত শুক্রবার ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রীকে। কিন্তু অত্যন্ত ব্যথা বেদনার সঙ্গে আজ আমাদের প্রতিবাদ সমাবেশে সমবেত হতে হয়েছে। মূর্তি অপসারণের পর আবার প্রতিস্থাপন তামাশা, এছাড়া আর কিছু নয়। অনতিবিলম্বে মূর্তি অপসারণ করা হোক, না হলে রমজানের পর বৃহৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী, জ্বালাও-পোড়াও এ বিশ্বাসী না।’