ফেরত যাচ্ছে বৈদেশিক ঋণের প্রকল্পের উদ্বৃত্ত ডলার
ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় বৈদেশিক ঋণে চলমান সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে ডলার ছাড় কমেছে। একই সঙ্গে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ডলার। এদিকে বৈদেশিক ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে পরিশোধের অঙ্ক। এসবের প্রভাবে আরো ঘনীভূত হচ্ছে ডলারসংকট।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে ২০২২ সালের মার্চ থেকে দেশে ডলারের দাম বাড়ছে, কমছে টাকার মান। ২০২২ সালের মার্চে দেশে এক ডলারের দাম ছিল ৮৬.২০ টাকা। বর্তমানে এক ডলারের দাম ১১৭ টাকা। অর্থাৎ দুই বছরে ডলারের দাম বেড়েছে ৩০ টাকার বেশি।
জাপানি ঋণদাতা সংস্থা জাইকার ঋণে বাস্তবায়ন হওয়া ক্রস-বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পে দুই হাজার ১৬৬ কোটি টাকার চুক্তি রয়েছে। প্রকল্পটি আগামী জুনে শেষ হবে। তবে ডলারের তুলনায় টাকার মান কমে যাওয়ায় এক হাজার ৯৮৫ কোটি টাকায় প্রকল্পের কাজ হয়ে যাচ্ছে। বাকি ১৮০ কোটি টাকা খরচ না হওয়ায় ছাড় হয়নি।অর্থাৎ ফেরত যাচ্ছে। এই প্রকল্পে শুধু এক হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির পরিচালক শ্যামল কুমার ভট্টাচার্য বলেন, প্রকল্পে দুই হাজার ৬৬ কোটি টাকার চুক্তি থাকলেও খরচ হচ্ছে এক হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। বাকি টাকা আর লাগছে না। তবে শুধু ডলারের তুলনায় টাকার মান কমার কারণে যে এই টাকা কম লেগেছে তা নয়।বৈদেশিক ঋণের প্রকল্পে কিছু খাতে বেশি ব্যয় ধরা হচ্ছে। না লাগলে সেটা ফেরত যায়।
একই ঘটনা বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে পায়রা নদের ওপর লেবুখালী সেতু নির্মাণ প্রকল্পে। এই প্রকল্পের জন্য কুয়েত ওএফআইডি ফান্ডের সঙ্গে এক হাজার ৭৮ কোটি টাকা ঋণ চুক্তি হয়েছে। প্রকল্পটি আগামী জুনে শেষ হচ্ছে। তবে এখন প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ৯১৫ কোটি টাকা লাগছে। বাকি ১৬৩ কোটি টাকা খরচ না হওয়ায় ফেরত যাচ্ছে। এই প্রকল্পে শুধু ৯১৫ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
প্রকল্পটির পরিচালক আব্দুল হালিম বলেন, প্রকল্প আগেই শেষ হয়েছে। প্রকল্পের ডিফেক্ট লায়াবিলিটির ২৫ কোটি টাকা রাখা ছিল। সেটা এ বছর পরিশোধ করা হয়েছে। প্রকল্পের কিছু টাকা প্রয়োজন না হওয়ায় ছাড় হয়নি।
এ ছাড়া ‘হেলথ অ্যান্ড জেন্ডার সাপোর্ট ইন কক্সবাজার ডিস্ট্রিক্ট (এইচজিএস-সিএক্সবি)’ শীর্ষক অপারেশন প্ল্যান প্রকল্পে ৭০ কোটি টাকা কম খরচ হচ্ছে। একই অবস্থা চলতি অর্থবছরে শেষ হতে যাওয়া বৈদেশিক ঋণের অন্যান্য প্রকল্পেও।
বড় অঙ্কের বৈদেশিক ঋণ আছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) এমন এক প্রকল্পের একজন প্রকৌশলী বলেন, ‘টাকার মান কমে যাওয়ায় আমার প্রকল্পে ১০০ মিলিয়ন ডলার বেঁচে গিয়েছিল। এডিবি কাজে খুশি হয়ে প্রকল্পে আরো ২০০ মিলিয়ন দিয়েছে। সেই আলোকে কাজ বাড়িয়ে প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। আমার প্রকল্পে যেহেতু কাজ বাড়ানোর সুযোগ ছিল, তাই সেটা কাজে লেগেছে। দেশের লাভ হয়েছে। তবে যেসব প্রকল্পে কাজ বাড়ানোর সুযোগ নেই, সেসব প্রকল্পের অতিরিক্ত ডলার ফেরত যাচ্ছে।’
এ পর্যন্ত কোনো প্রকল্পে ডলার বেঁচে যাওয়ায় ফেরত গিয়েছে কি না? জানতে চাইলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঢাকা অফিসের জনসংযোগ কর্মকর্তা গোবিন্দ বার বলেন, ডলার বেঁচে গেলে সেটা প্রকল্প সংশোধন করে কাজে লাগানো হয়। ডলার ফেরত এসেছে, তেমনটা এখনো হয়নি।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, দেখা যায়, কোনো প্রকল্পে অর্থ বেঁচে গেলে সেটা প্রয়োজন না থাকলেও অন্য খাতে ব্যয় করা হয়। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অনুমোদিত অর্থ পারতপক্ষে খরচ না করে ফেরত দিতে চান না।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পের কাজ করার পর অর্থ বেঁচে গেলে প্রকল্পের কাজ বাড়িয়ে খরচ করা হয়। আবার অনেক প্রকল্পে অর্থ খরচ না হলে অন্য প্রকল্পে সুযোগ থাকলে ব্যবহার করা হয়। তবে কাজ বাড়াতে হলে পরিকল্পনা কমিশনকে জানিয়ে করতে হয়। অনুমোদন না নিয়ে অতিরিক্ত অর্থ খরচের কোনো সুযোগ নেই।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন