ফের সরকারে আসলে বস্তিবাসীদের ফ্ল্যাট দেওয়া হবে : শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আবারও সরকারে এলে নগরীর ঘিঞ্জি এলাকা সংস্কার এবং বস্তিবাসীদের বসবাসের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। তিনি বলেন, মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ যাতে দৈনিক, সাপ্তাহিক অথবা মাসিক মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে ফ্ল্যাটে থাকতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা হবে। সোমবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত নির্বাচনি জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, কামরাঙ্গীরচরের যারা ছিন্নমূল মানুষ, বস্তিবাসীদের জন্য এই এলাকায় ১০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা আমরা হাতে নিয়েছি। এই ফ্ল্যাটগুলোতে দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং মাসিক নামমাত্র ভাড়ায় থাকা যাবে। পুরো ঢাকার শহরকে ঘিরে আমরা একটা রিং রোড তৈরি করবো, যা হবে সম্পূর্ণ এলিভেটেড। এতে দ্রুতগতিতে যানবাহন চলতে পারবে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরকে ঘিরে যে পাঁচটি নদী আছে সেই নদীগুলোকে খনন করে এর নাব্য ফিরিয়ে আনা হবে। কামরাঙ্গীরচর খালটি শুকিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলাধারকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। এই খাল বন্ধ হওয়া উচিত নয়। তিনি জনসভায় উপস্থিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনকে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে এই খালটি উদ্ধার করে খালে যাতে আরও ভালো পানি থাকে সে ব্যবস্থা নিতে বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দেখতে পাচ্ছি ময়লা ফেলে ফেলে এই খালটি বন্ধ করা হচ্ছে এবং ভূমিখেকোরা এর অনেক অংশ দখল করে নিয়েছে। আমি মনে করি কোনও জলাধার বন্ধ করা উচিত নয়, বরং এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা, দুই পাড় বাঁধিয়ে দেওয়া, পানিটা যাতে নিষ্কাশন হয় তার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তাহলে পরিবেশটা ভালো হবে, বাতাসটাও স্বাস্থ্যকর থাকবে এবং মানুষের বসবাস আরও আরামদায়ক হবে। আমরা সেই ব্যবস্থাটা করতে চাই।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে সমাবেশে ঢাকা দক্ষিণের সংসদ সদস্য প্রার্থীরা বক্তৃতা করেন। ঢাকা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলাম মুরাদ সমাবেশ পরিচালনা করেন। শেখ হাসিনা সমাবেশে ঢাকা দক্ষিণের নৌকা এবং মহাজোটের সকল প্রার্থীর সঙ্গে জনগণের পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি বলেন, যেহেতু এই ঢাকা-২ আসনের সঙ্গে সাভারের কিছু অংশ আছে, কেরানীগঞ্জের কিছু অংশ আছে, তাই সাভারেরও আমরা ব্যাপক উন্নয়ন করেছি এবং সেখানে ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১২টি উচ্চবিদ্যালয় ভবন করে দিয়েছি, কলেজ-মাদ্রাসার উন্নয়ন করা হয়েছে। তেতুলঝড়া ডিগ্রি কলেজ এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। আমিনবাজার কবরস্থান সংস্কার করা হয়েছে। ৩৪টি সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। তিনটি সেতু নির্মাণ করা করা হয়েছে। এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকাটা একান্তভাবে দরকার। কারণ, ইতোমধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হয়েছে। মেট্রোরেল নির্মাণ করে যাচ্ছি। যানজট দূর করার জন্য ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছি এবং বিভিন্ন কর্মসূচি নিচ্ছি।

ঢাকাকে নিয়ে ভবিষ্যৎে পরিকল্পনা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ঢাকায় আমরা পাতাল রেল করবো। তার সমীক্ষার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আর নদীগুলো খনন করে এর নৌপথটাও আমরা সচল করে দেবো। এইভাবে ঢাকার যেমন সৌন্দর্য বৃদ্ধি হবে, যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত এবং যানজট মুক্ত হবে। সেদিকে লক্ষ রেখেই আমরা মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, যে জনগণের জন্য আমার বাবা জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছেন, নিজের জীবনটা পর্যন্ত দিয়ে গেছেন, সেই জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনই আমার লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে দেশের মানুষের ভাগ্য আমরা পরিবর্তন করতে শুরু করেছি। আগামী নির্বাচনে যদি আমরা জয়ী হয়ে আসতে পারি তাহলে দেশে আর কোনও মানুষ দরিদ্র থাকবে না। প্রত্যেকটি মানুষ সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারবে। আমরা সেভাবেই পরিকল্পনা নিয়েছি।

ঢাকার অতীত দুরবস্থার কথা স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, পানির জন্য হাহাকার ছিল, ওয়াসার দেড়শ’ টাকার পানির গাড়ি ১৫শ’ করে টাকা দিয়ে কিনতে হতো। দিনভর চলতো বিদ্যুতের লোডশেডিং, বিদ্যুৎ ছিল না। রাস্তাঘাটের আরও করুণ অবস্থা ছিল। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বলতে গেলে ছিলই না, একটি অসহনীয় অবস্থা ছিল।

গত ১০ বছরে তাঁর সরকার পানি ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেমন উৎপাদন বাড়িয়ে মানুষের খাদ্য সংস্থান করেছি তেমনি সঞ্চালন লাইন তৈরি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়ে গ্রাম পর্যন্ত আমরা মানুষকে বিদ্যুৎ দিয়েছি এবং দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। এই কামরাঙ্গীরচর চরম অবহেলিত একটি এলাকা ছিল, যার জলাবদ্ধতা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল। শেখ হাসিনা বলেন, কামরাঙ্গীরচরের ১৭টি ইউনিয়কে আমরা ঢাকা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি করেছি। তিনি তাঁর সরকারের সময়ে কামরাঙ্গীরচরের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, কামরাঙ্গীরচরের ব্যাপক উন্নয়ন আমরা করেছি। সুলতানগঞ্জকে সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করেছি। তাছাড়া এখানে আমরা শেখ জামাল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়সহ সরকারি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। ৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন ভবন নির্মাণ করে দিয়েছি। আগে এখান এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল না, তারও ব্যবস্থা করেছি। ৬টি স্কুল কলেজ এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। ইস্পাহানি ডিগ্রি কলেজ এবং শাক্তা উচ্চবিদ্যালয়কে আমরা জাতীয়করণ করেছি এবং ৩১ শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতালও করে দিয়েছি। তারানগরে আমরা একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করছি এবং এই কামরাঙ্গীরচরে আমরা একটি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় করে দেবো। ৯৯ কিলোমিটার রাস্তা এবং ৯৫ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ফলে বৃষ্টিতে এখানে আর কোনও জলাবদ্ধতা নাই। ১৯৯টি সড়ক নির্মাণ এবং সব সড়কে এলইডি বাতি সংযোজন করা হয়েছে। ৩৯টি ছোট-বড় কালভার্ট এবং উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে।

তিনি প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে পাঠ্যবই, ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে প্রায় দুই কোটির বেশি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি এবং উপবৃত্তি প্রদান এবং কমিউনিটি ক্লিনিক সৃষ্টি করে সেখান থেকে ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংস্কার এবং সম্প্রসারণে তাঁর সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বহু পুরনো, আমরা মূল ভবনটা ঠিক রেখে এর সামনের দিকে আরও সম্প্রসারণের জন্য ইতোমধ্যে প্রকল্প গ্রহণ করেছি। এর নকশাও আমি দেখে রেখেছি। আগামীতে সরকারে আসতে পারলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে আমরা নতুন আঙ্গিকে সাজাবো এবং অত্যন্ত আধুনিক একটি হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজ আমরা নির্মাণ করে দেবো। তাছাড়া, ঢাকার আশপাশের যেসব এলাকায় চিকিৎসাসেবা নাই সেসব স্থানে হাসপাতাল নির্মাণ করে দিচ্ছি। অর্থাৎ সমগ্র দেশেই আমরা সার্বিকভাবে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা নিয়েছি। এ সময় তিনি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য ঢাকা দক্ষিণের মতো ঢাকা উত্তরেও আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দেওয়ার সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন।

তিনি জনগণের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের কাছে আমার আবেদন থাকবে ঢাকা দক্ষিণে আমরা আওয়ামী লীগ এবং মহাজোট থেকে যাদের প্রার্থী করেছি তাদের জয়যুক্ত করতে হবে। এ সময়ে তিনি এই সভার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ এবং মহাজোটের প্রার্থীদের জনগণের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

তারা হচ্ছেন, ঢাকা-২ আসনে নৌকার প্রার্থী খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম, ঢাকা-৩ (কেরানীগঞ্জ) আসনে নৌকার প্রার্থী বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নসরুল হামিদ, ঢাকা-৪ আসনে মহাজোটের প্রার্থী লাঙ্গল মার্কায় আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা-৫ আসনে নৌকা মার্কার প্রার্থী হাবিবুর রহমান মোল্লা, ঢাকা-৬ আসনে মহাজোটের প্রার্থী লাঙ্গল মার্কায় অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ, ঢাকা-৭ আসনে নৌকার প্রার্থী হাজী সেলিম, ঢাকা-৮ আসনে মহাজোটের প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং সমাজকল্যাণমন্ত্রী নৌকা মার্কা প্রতীকে রাশেদ খান মেনন, ঢাকা-৯ আসনে নৌকার প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরী এবং ঢাকা-১০ আসনে নৌকার প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। সূত্র: বাসস