বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুর অসম্প্রদায়িক চেতনার উপর চরম আঘাত : ওলামা লীগ

কুষ্টিয়ায় সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী অপশক্তি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাংচুর করে মুক্তিযুদ্ধের অসম্প্রদায়িক চেতনার উপর চরম আঘাত করেছে। যা বাঙ্গালি সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। এই ভাংচুরে যারা জড়িত এবং পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে তাদেরকে চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এক যৌথ বিবৃতি দেন।

বিবৃতিতে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব মুফতী মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী বলেন, সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদীদের ধৃষ্টতা ক্রমশ বেড়েই চলছে। এই অপশক্তিকে দমন করা এখন সময়ের দাবি। এমনকি ওরা বহুবার রাষ্টযন্ত্রকেও ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংগঠিত করেছে। আমরা বহুবার বলার চেষ্টা করেছি এরা স্বাধীনতাবিরোধী একাত্তরের ঘাতক চক্রের খালাতো ভাই। এদের চিন্তা-চেতনার জায়গাটিও এক ও অভিন্ন। তাদের একের সাথে অপরের স্বার্থগত কিছুটা মতপার্থক্য থাকলেও ওরা একই মায়ের সন্তান নাম পৃথক মাত্র। ধর্মীয় দিক থেকেও এরা এজিদের অনুসারী।

এই উগ্রবাদীরা নিজেদেরকে আলেম পরিচয় দিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতি ও বিশ্বাসকে পুঁজি করে ফতোয়াবাজীর মাধ্যমে কোরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যার দ্বারায় সমাজের মানুষকে বিভ্রান্ত করে। যা চরম ঘৃণিত ও নির্লজ্জ কাজ। ওরাতো ভাস্কর্যকে মূর্তি আখ্যা দিয়ে বাঙ্গালি সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে আঘাত করবেই। এটি হলো তাদের জম্মগত গুণ। ওদের বিষয়ে রাষ্ট্রের সমাধানমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। রাষ্ট্র যদি সিদ্ধান্ত নিতে কালক্ষেপণ করে তাহলে আরো কঠিন অবস্থার সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ওদের মাদরাসাগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না। জাতীয় সংগীতকে বলে কুফরী সংগীত। জাতীয় দিবসগুলোকেও বলে বেদায়াত ও নাজায়েজ। শুধু তাই নয় ধর্মীয় অনেক অনুষ্ঠানকেও বেদায়াত বলে মুসলিম সম্প্রদায়ের সরল-সহজ মানুষকে অনুষ্ঠান থেকে বিমুখ করার চেষ্টা করে। এরা একদিকে উগ্রবাদী এজিদ অনুসারী অন্যদিকে স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক। ওহাবী মতবাদের সাথেও রয়েছে দারুণ মিল। এরা বাংলাদেশে বসবাস করলেও চিন্তা-চেতনায় পাকিস্তানি। দেশের সংবিধান মানবে না অথচ দেশে থাকবে এটা কি করে হয়?

ওরা কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাংচুর করেছে। এ ভাংচুর মুক্তিযুদ্ধের অসম্প্রদায়িক চেতনার উপর চরম আঘাত। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি। এ অকল্পনীয় ঔদ্ধত্যপূর্ণ ধৃষ্টতার দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানাই। আমরা লক্ষ্য করে দেখেছি ওরা এই মাদরাসায় সেই মাদরাসায় মিটিং করছে। সংবাদ সম্মেলন করেও নাটক মঞ্চায়িত করেছে। হেফাজত হয়েছে দুই গ্রুপে বিভক্ত যার মূল কারণ হলো এদিকেও খাবে সেদিকেও খাবে। এখন আবার নতুন ফর্মুলায় পকেট ভারি করার জন্য ফন্দি এঁটেছে। মিটিং করে আর বারবার একই রেকর্ডের প্রতিধ্বনি দেয় এই হলো তাদের মিটিং এর সারাংশ।

মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে থাকতে হলে অবশ্যই বাঙ্গালি সংস্কৃতি ও চেতনাকে মেনেই থাকতে হবে। আর যদি তা না হয় তারা যে দেশের চেতনা লালন ও বিশ্বাস করে সেদেশে যাওয়াই তাদের জন্য শ্রেয়। তাছাড়াও বাংলাদেশ তো ইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিক দেশ নয়। নচেৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কথায় কথায় ফতোয়াবাজীর মাধ্যমে তাণ্ডব চালিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে বাঁধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টার সমীচীন জবাব দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন সংগঠনের মুখপাত্র ক্বারী মাওলানা আসাদুজ্জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক হাফেজ মাওলানা আনোয়ার হোসেন জুয়েল, মুফতী আলিম বিজয় নগরী, মাওলানা রফিকুল ইসলাম আশরাফী, কাজী মাওলানা আবু মুসা ভূইয়া, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুছ, মাওলানা আতাউর রহমান আনসারী, মুফতী আবু সুফিয়ান নঈমী, মাওলানা আব্দুর রহিম, মুফতী ইলিয়াস হোসেন, মুফতী আব্দুর রহিম চাটগামী ও সুফী আব্দুল করিম প্রমুখ।