বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কের নির্মাণ ব্যয় ও সময় বাড়ছে

রাজশাহীতে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কের নির্মাণকাজের মেয়াদ আবারও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় আরও একবছর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করা হয়েছে। এতে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে নির্মাণ ব্যয়ও।

হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, রাজশাহী মহানগরীর জিয়ানগরে ৩১ একর জমির ওপর নির্মাণাধীন ১২ তলা বিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক নির্মাণের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল জুলাই ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। সেই সময় নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৩৮ কোটি টাকা। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য প্রথম দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। ফলে নির্মাণ ব্যয় বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২৮৭ কোটি ৭১ লাখ টাকায়। প্রথম দফায় নির্মাণ ব্যয় বাড়ে প্রায় ৪৯ কোটি টাকা। প্রথম দফায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় আরও একবছর মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয় দ্বিতীয় দফায়। এর ফলে আরও ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।

সরেজমিনে হাইটেক পার্কে গিয়ে দেখা যায়, ইতোমধ্যে ১০ তলার কাঠামো তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। পাশেই লাগোয়া সিনেপ্লেক্স ও অডিটোরিয়াম ভবন তৈরির কাজও শেষ পর্যায়ে। এছাড়া পার্কের ভেতরে চাওড়া সড়ক নির্মাণের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজশাহীতে জ্ঞানভিত্তিক আইটি ইন্ডাস্ট্রি স্থাপন করা, জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীকে আকৃষ্ট করার মাধ্যমে ব্যবসায়ীক পরিবেশ সৃষ্টি করা, নতুন আইটি উদ্যোক্তাদের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। এই পার্ক তৈরির পর এখানে ১৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। এছাড়া দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী যাতে এখানে তাদের কার্যক্রম শুরু করেন এজন্য সাতটি প্লটও রাখা হয়েছে পার্কে। যাতে বড় আইটি কোম্পানিগুলো তাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক একেএএম ফজলুল হক বলেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৭০ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। করোনাভাইরাস ও লকডাউনের কারণে তিন মাস কাজ বন্ধ ছিল। এছাড়া গতবছর বর্ষা ও বন্যার কারণেও কয়েক মাস কাজ শুরু করতে দেরি হয়ে যায়। সবমিলিয়ে গতবছর ৬ থেকে ৭ মাস কাজ বন্ধ ছিল। এজন্য ২০২১ সালের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। কাজ শেষ করার জন্য আরও একবছর মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। মৌখিকভাবে তা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনও পাওয়া গেছে। এজন্য আরও ৩৫ থেকে ৪০ কোটি নির্মাণ ব্যয় বাড়বে। প্ল্যানিং কমিশন থেকে অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে।

প্রথম দফায় মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ফজলুল হক বলেন, একনেক সভায় কাজ অনুমোদিত হওয়ার একবছর পর সরকারি আদেশ জারি করা হয়। সরকারি আদেশের পর অন্যান্য আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া মেনে প্রকল্পের স্থানটি পেতে আরও একবছর লেগেছে। কারণ প্রকল্পের স্থানে বস্তি ছিল। ৭৪২ টি পরিবার সেখানে বসবাস করতো। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসিত করতে এই একবছর লাগে। ফলে নির্মাণ কাজ শুরু করতেই দুই বছর সময় শেষ হয়ে যায়।

নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে ফজলুল হক বলছেন, প্রকল্পে নতুন নতুন বিষয় যুক্ত হওয়ার জন্য নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে। প্রথমবার যখন প্রকল্প অনুমোদিত হয় তখন সিনেপ্লেক্স ও অডিটোরিয়াম নির্মাণের বিষয় ছিল না। প্রথম দফায় মেয়াদ বৃদ্ধির সময়ে সিনেপ্লেক্স ও অডিটোরিয়াম যুক্ত করায় নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে। যেখানে আইটি পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে সেই এলাকাটি নিচু ছিল। মাটি ও বালু দিয়ে ভরাট করার পর এলাকাটি উঁচু হয়ে যাওয়ায় কোর্ট ও আরআরএফের পানি বের করে দেওয়ার কোনো ড্রেন না থাকায় সেই এলাকাটি ডুবে যাচ্ছিল। আমাদের নতুনভাবে একটি ড্রেন নির্মাণ করে দিতে হয়। যা প্রকল্পে ছিল না। এখন নতুনভাবে আবার পার্কের ভেতর সড়ক ১৩০০ মিটার থেকে ১৮০০ মিটার করতে হবে। এজন্য ব্যয় বাড়বে।

তিনি যোগ করেন, এছাড়াও পার্কের ভিতরে সড়ক সংলগ্ন ড্রেন নির্মাণ, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন ভূগর্ভস্থ করা, বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল মিউজিয়াম ও মসজিদ নির্মাণসহ নানা কাজের জন্য নতুনভাবে আরও ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকা বাড়বে। অন্যদিকে প্রকল্পে সূয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের বিষয় না থাকলেও এখন নতুনভাবে তা নির্মাণ করতে হচ্ছে। এসব কারণে প্রকল্প ব্যয় বাড়ছে। পরিকল্পনা কমিশন অনুমোদন দিলেই তা হবে।