বাংলাদেশে কাজ করা ১৪ প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ করেছে বিশ্বব্যাংক

দুর্নীতি বিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রকল্পে কাজ করা বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ করছে বিশ্বব্যাংক। বুধবার সংস্থাটি থেকে জানানো হয়, অনুসন্ধানের মাধ্যম বাংলাদেশের বেশ কিছু প্রকল্পে তারা দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের আলামত পেয়েছেন।

২০১৮ অর্থবছরে বিশ্বে মোট ৭৮টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে নিষিদ্ধ করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির গ্রুপ স্যাংকশন সিস্টেমের বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়। ইন্টেগ্রিটি ভাইস প্রেসিডেন্সি (আইএনটি), অফিস অব সাসপেনশন অ্যান্ড ডিপার্টমেন্ট (ওএসডি) ও স্যাংকশন বোর্ড এই প্রতিবেদন তৈরি করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রত্যেকটি নিষেধাজ্ঞা যেকোনও প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির পাঁচটি দুর্নীতির অন্তত একটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে করা হয়েছে। সেগুলো হলো আত্মসাত, দুর্নীতি, আঁতাত, বলপ্রয়োগ বা ক্ষমতার অপব্যবহার, কিংবা দায়িত্বে বাধা দেওয়া। এই পাঁচটি ঘটনার যেকোনও একটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকলেই ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্বব্যাংক।

বাংলাদেশের প্রকল্পে বিনিয়োগ করা বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিষিদ্ধ হয়েছে ভারতীয় কোম্পানিগুলো। তিন মাস থেকে শুরু করে ১০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে পাঁচটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ করে বিশ্ব ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, অলিভ হেলথ কেয়ার (১০ বছর ছয় মাস), জয় মোদি (সাত বছর ছয় মাস), ফ্যামি কেয়ার লিমিটেড (চার বছর) এবং ম্যাসলেদোস ফার্মাসিউটিকালস লিমিটেড (তিন মাস)

এছাড়া অন্যান্য বিদেশি প্রতিষ্ঠান যারা বাংলাদেশে দুর্নীতির দায়ে নিষিদ্ধ হয়েছে তারা হলো, চীন প্রতিষ্ঠান মিডল সাউথ ইউনিয়ন ইলেকট্রিক কো লিমিটেড (চার বছর), ফ্রান্সের অবেরথার টেকনোলজিস (দুই বছর ছয় মাস), বেলজিয়ামের একার্ট এন্ড জিগলার বেবিগ (দুই বছর), সুইজারল্যান্ডের কনভাটেক ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস জিএমবিএইচ (এক বছর ছয় মাস), মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠান কনভাটেক মালয়েশিয়া এসডিএ বিএইচডি (এক বছর ছয় মাস), অস্ট্রেলিয়ার এসএমইসি ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড (এক বছর)।

এছাড়া দুর্নীতির দায়ে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান এসএমইসি বাংলাদেশ লিমিটেড ও এসিই কনসালটেন্টসকেও দুই বছর ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। জনতা ট্রেডার্সকে নিষিদ্ধ করা হয় এক বছরের জন্য। আর সৈয়দ আখতার হোসেনকে ১১ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে বিশ্বব্যাংক।

কোন প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে প্রতিবেদনে সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি বিশ্বব্যাংক। একটা পর্যায়ে তারা জানায়, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বেশ কিছু প্রকল্পে তারা অনুপযুক্ত বিনিয়োগের আলামত পেয়েছে। ভারত ও শ্রীলঙ্কাতেও এমন প্রমাণ পেয়েছে তারা।

বিশ্ব ব্যাংক থেকে ৪৪৮ মিলিয়ন ডলার পাওয়া একটি আন্তর্জাতিক ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১২ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। সংশ্লিষ্ট চারটি সংস্থাকেও ছয় মাস থেকে আড়াই বছর পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেন, ‘আমরা অপেক্ষাকৃত নিম্নবিত্ত ও সংহিসতায় জর্জরিত রাষ্ট্রগুলোতে আমাদের কার্যক্রম বাড়াচ্ছি। একইসঙ্গে আমাদের অর্থ যেন সঠিক খাতে বিনিয়োগ হয় সেই বিষয়টিও খেয়াল রাখাটাও আমাদের প্রতিশ্রুতির অংশ। তিনি বলেন, ‘এটা শুধুমাত্র আমাদের প্রকল্পের সাফল্যের জন্যই নয়, আমাদরে সংস্থার কাজই এমন। আমাদের চুক্তিই আমাদের বাধ্য করে যে যেন দুর্নীতির মাধ্যমে জনগণের কল্যাণে ব্যয়ে অর্থ হারিয়ে না যায় সেই বিষয়টা খেয়াল রাখা হয়। সূত্র : বাংলাট্রিবিউন