বাংলাদেশ থেকে এক বছরেই পাচার ৫০ হাজার কোটি টাকা

বাংলাদেশ থেকে চার প্রক্রিয়ায় শুধুমাত্র ২০১৫ সালে ৫৯০ কোটি ডলার (প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা) পাচার হয়েছে।

বিগত ১০ বছরে (২০০৬-২০১৫) পাচারের এই পরিমাণ ৬ হাজার ৩০৯ কোটি ডলার (৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা), যা দেশের চলতি বছরের (২০১৮-২০১৯) জাতীয় বাজেটের চেয়েও বেশি।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট বাজেট ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।

সোমবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

জিএফআই’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চারটি প্রক্রিয়ায় এই অর্থ পাচার হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে— বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি মূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং), রপ্তানিতে মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং), হুন্ডি ও অন্য মাধ্যমে বিদেশে লেনদেন এবং ভিওআইপি ব্যবসা।

প্রতিবেদনে ২০০৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১৪৮টি দেশের অর্থ পাচারের তথ্য উঠে এসেছে। আলোচ্য সময়ে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে ১ ট্রিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে, টাকার অঙ্কে যা ৯০ লাখ কোটি টাকা। আর ২০১৪ সালে পাচার হয়েছে ১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলার, যা টাকার অঙ্কে দাঁড়ায় ৯১ লাখ কোটি টাকা। প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে এ হিসাব করা হয়েছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা জিএফআই উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবৈধ আর্থিক প্রবাহ বা মুদ্রা পাচার নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণ করে থাকে। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকার নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের সঙ্গে অর্থ পাচাররোধে বিভিন্ন পরামর্শ ও নীতিগত সহায়তা দিয়ে থাকে। এরই অংশ হিসেবে প্রতিবছর তারা এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে।

মূলত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পার্থক্য থেকে এ রিপোর্ট করে জিএফআই।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে পাচার হয়েছে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা। টাকা পাচারে বিশ্বের শীর্ষ ৩০ দেশের তালিকায়ও রয়েছে বাংলাদেশের নাম।

এ ছাড়া অর্থ পাচারে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের প্রায় ২০ শতাংশই কোনো না কোনোভাবেই পাচার হচ্ছে। তবে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশেও ২৮০ কোটি ডলার এসেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

জিএফআই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবছর গড়ে ৬৫১ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ থেকে পাচার হচ্ছে। ২০১০ সালে ৫৪০ কোটি ডলার অর্থ পাচার হয়েছিল। তিন বছরের (২০১১ সালে ৫৯২ ও ২০১২ সালে ৭২২ কোটি ডলার) ব্যবধানে এ অর্থ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৯৬৬ কোটি ডলারে। তবে ২০১৪ সালে ৯১১ কোটি ডলার। আর ২০১৫ সালে তা ৫৯০ কোটি ডলার।

এর আগে বাংলাদেশ থেকে ২০০৫ সালে ৪২৬ কোটি ডলার, ২০০৬ সালে ৩৩৭ কোটি, ২০০৭ সালে ৪০৯ কোটি ডলার, ২০০৮ সালে ৬৪৪ কোটি ডলার এবং পরের বছর ২০০৯ সালে ৫১০ কোটি ডলার পাচার হয়।

জিএফআই বলছে, এটি আনুমানিক হিসাব। প্রকৃত পাচারের পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অর্থ পাচারে ভারতের পরের অবস্থানে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে ভারত থেকে অর্থ পাচারের পরিমাণ ৯৮০ কোটি ডলার।

জিএফআই প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৫ সালে পাচারের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে মেক্সিকো। দেশটি থেকে পাচার হয়েছে ৪ হাজার ২৯০ কোটি ডলার, দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মালয়েশিয়া ৩ হাজার ৩৭০ কোটি ডলার, ভিয়েতনাম ২ হাজার ২৫০ কোটি ডলার, থাইল্যান্ড ২ হাজার ৯০ কোটি ডলার, পানামা ১ হাজার ৮৩০ কোটি ডলার এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে ১ হাজার ৫৪০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে।

তবে, জিএফআই’র দেয়া অর্থ পাচারের তথ্যকে পুরোপুরি স্বীকার করতে নারাজ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান।

তিনি বলেন, ‘জিএফআই পাচারের যে তথ্য দেয়, তা পুরোপুরি সত্য নয়। তা আমরা স্বীকার করি না।’