‘বাড়ি ফিরে যেতে চাই, আমরা শান্তি চাই’
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর তাণ্ডবে রাখাইন রাজ্য ছেড়ে কয়েক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন ২২ বছর বয়সী রাহিমুল মুস্তফা। বাংলাদেশে আসার আগে রাখাইনের স্থানীয় একটি মাদরাসায় পড়াশোনা করতেন তিনি।
রোহিঙ্গা তরুণ রাহিমুল মুস্তফা আল জাজিরাকে বলেন, ‘মাদরাসায় ধর্মীয় বিষয়ে পড়াশোনা উপভোগ করতাম এবং কখনও কখনও আমাদের প্রতিবেশী ছোট ছেলেমেয়েদের পড়াতাম। আমি যেখানে বেড়ে উঠেছি সেখানকার বেশিরভাগ মানুষ নিরক্ষর।’
সেনাবাহিনী তাণ্ডব চালানোর আগ পর্যন্ত আমাদের ফইরা গ্রামে আমি খুবই আনন্দেই ছিলাম। আমার স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়ার।
‘সেদিন রাত ৩টায় সেনাবাহিনী আমাদের গ্রামে গুলি চালাতে শুরু করে এবং অামাদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওই সময় বাড়িতে থাকা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না; কারণ তারা আমাদের দেখলেই গুলি করত। সে কারণে আমরা অন্যস্থানে লুকিয়ে ছিলাম।’
‘তারপরও তারা আমাদের বাড়িতে এসে জানালা দিয়ে গুলি চালাতে শুরু করে। আমার হাঁটুতে এসে গুলি লাগে। সেই রাতে আমাদের গ্রামে বহু মানুষ মারা যায়। আমার চোখের সামনে তিনজন প্রতিবেশীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।’
আমার বাবা এবং ভাই মিলে চিকিৎসার জন্য আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু সহিংসতা চলার কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার চিকিৎসা করেনি। আত্মীয়রা আমাকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে। সেনাবাহিনীর নজর এড়াতে তারা আমাকে নিয়ে পাহাড়ি রাস্তা ধরে এসেছে।
সেটা খুবই দীর্ঘ এবং বেদনাদায়ক পরিস্থিতি ছিল। আমার ক্ষতস্থানটি গুরুতরভাবে সংক্রমিত হয়ে পড়েছে। আমার খুবই খারাপ লেগেছে যে, সেখানে সবকিছু ফেলে পরিবারকে আমার বোঝা বয়ে নিয়ে আসতে হয়েছে।
আমি খুবই খুশি যে, নিরাপদে বাংলাদেশে পৌঁছাতে পেরেছি। এমএসএফ এর মাধ্যমে আমি কিছু চিকিৎসা সেবাও পেয়েছি। কিন্তু এখানে আমরা তেমন কোনো সমর্থন পাচ্ছি না এবং আমাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
‘যদি আমাদের সেখানকার বাড়িতে শান্তি থাকে তবেই আমাদের ভবিষ্যৎ থাকবে। আমার চোখের সামনে যা ঘটেছে সেটা খুবই দুঃখজনক। আমরা বাড়ি ফিরে যেতে চাই এবং আমরা শান্তি চাই। আমি বিশ্বাস করি, বিশ্ব আমাদের সঙ্কট দেখছে এবং তারা আমাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছে।’
বাংলাদেশের কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রে রাহিমুল মুস্তফার সঙ্গে কথা বলেন আল জাজিরার কেটি অারনল্ড। পরিষ্কারভাবে রাহিমুলের কথাগুলো তুলে ধরার জন্য অর্থ ঠিক রেখে সম্পাদনা করা হয়েছে।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তাণ্ডবে জীবন বাঁচাতে গত দুই সপ্তাহে তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। তাদের মধ্যে নারী এবং শিশুর সংখ্যাই বেশি।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা সেখানে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ এবং গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়াকে জাতিগত নিধন হিসেবে উল্লেখ করেছে। সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমার সরকার এবং অং সান সু চিকে চাপ দিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক মহল। তারপরও সহিংসতা সমানহারে চলছে। বাংলাদেশে আসছে হাজার হাজার শরণার্থীর ঢল।
এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করতে এক জরুরি বৈঠক ডেকেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
আগামীকাল বুধবার ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রধান জেইদ রাদ আল হুসেইন রাখাইন প্রদেশের সহিংসতার ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে সতর্ক করার পরই জরুরি বৈঠক ডাকল সংস্থাটি।
সূত্র : আল জাজিরা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন