বিএনপির নামে কোনো মিথ্যা মামলা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির নামে কোনো মিথ্যা মামলা দেয়া হয়নি। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা আমরা করিনি। এতিমের টাকা খেয়ে পার পেতে পারেননি। নিজের লোকের দেয়া মামলায়ই তিনি জেলে।
তিনি বলেন, নির্বাচনে বিএনপি নমিনেশন বাণিজ্য করেছে। জনগণ তাদের ওপর আস্থা রাখেনি। তাই তাদের ভরাডুবি হয়েছে।
শুক্রবার বিকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভার শুরুতে তিনি একথা বলেন।
বৈঠকের শুরুতেই অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের প্রতি শোক প্রস্তাব আনা হয়। প্রস্তাব পেশ করেন আওয়ামী লীগ দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।
অগ্নিকাণ্ডের স্থানে সেলফি তোলার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোথাও আগুন লাগলে কিছু মানুষ অযথাই ভিড় করে। অনেকে সেখানে যান, সেলফি তোলেন। আগুন নেভানোর কাজ না করে সেলফি তোলায় যে কী আনন্দ তা আমি বুঝি না! তা না করে সবাই এক বালতি করে পানি আনুক, আগুন নেভানোর চেষ্টা করুক।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস যখন অগ্নিনির্বাপণে যায়, তখনও কিছু লোক সেখানে ভিড় করেন, তাদের মারতে যান। বনানীর আগুন নেভানোর সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পর্যন্ত ভাঙা হয়েছে। একেকটা গাড়ির দাম আট থেকে দশ কোটি টাকা। যারা উদ্ধার করতে যান তাদের বাধা দেয়া ও মারা এটা কেমন কথা?’
সম্প্রতি কয়েকটি আগুনের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও কিছু লোকের দায়িত্ববোধের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশিক্ষিত ভলান্টিয়ারের পাশাপাশি অনেক সাধারণ মানুষও নিজের দায়িত্বের জায়গা থেকে উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছেন। ইউনিভার্সিটির ছেলেরা এসেছিল, পরে তাদের বললাম ভলান্টিয়ার হয়ে কাজ করতে। তবে কিছু মানুষ অযথা ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকে, তারা দাঁড়িয়ে না থেকে জায়গাটা খালি রাখলেও উদ্ধারকারীদের জন্য কাজ সহজ হয়।’
বনানী এখন বিএনপি পল্লী হয়েছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আগে বনানীতে অনেক খাল, পুকুর ছিল। তারা (বিএনপি) ক্ষমতায় আসার পর ভরাট করে প্লট বানিয়েছে। জিয়া এবং এরশাদের আমলে গুলশান লেক ভরাট করে অর্ধেক বানিয়ে প্লট বরাদ্দ দিয়েছে। যারাই ভবন নির্মাণ করবেন তারা আগুনের বিষয়, জরুরি এক্সিট গেট রাখার বিষয়গুলো মাথায় রেখে নির্মাণ করবেন।’
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আয়-বৈষম্য কমিয়ে এনে উন্নয়নের ছোঁয়া যেন আনাচে-কানাচে পৌঁছে যায়, আমরা সেই কাজগুলো করে যাচ্ছি। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি, এগুলো শেষ হলে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। হতদরিদ্র বলে কেউ থাকবে না।’
আমেরিকাতে একটা সার কারখানা থেকে শুরু করে হাসপাতাল সবই পুড়ে শেষ হওয়ার ঘটনা উলেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কতজন মারা গেছে সেই খবর কেউ জানেও না। এ রকম বহু ঘটনা ঘটেছে। লন্ডনে আগুন লেগে ৭০ জন মারা গেল। আরও যে কত লোক মারা গেছে সেটার হিসাবও নেই। সেখানে হিসাবও হয় না। উদ্ধার কাজও আমাদের মতো এতদিন কেউ চালায় না।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সতর্ক বার্তা জানিয়েছে, কিন্তু কেন তারা এ ধরনের সতর্ক বার্তা দিল তা বুঝতে পারলাম না। এ ধরনের কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি যদি থেকেই থাকে তাহলে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাকে অবহিত করলেই পারত।’
দেশ উন্নত হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রবৃদ্ধি অর্জনে শীর্ষ ৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ স্বাধীনতার অর্ধশত বার্ষিকীতে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি। গ্রামের মানুষ যেন শহরের সুবিধা পায় সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশকে ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। ২০৭১ সালে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার শতবার্ষিকীতে যারা থাকবেন তারা উন্নত ও আধুনিক বাংলাদেশ পাবেন। এজন্য ২১০০ সালে ডেল্টা প্ল্যান দিয়েছি আমরা।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, মতিয়া চৌধুরী, শেখ সেলিম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আবদুর রহমান, সংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিএম মোজাম্মেলসহ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন