এবার কে বসবে ভারতের সিংহাসনে

আর মাত্র কয়েক দিন পরেই ভারতের লোকসভা নির্বাচন। আর এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভারত জুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এটা এখন শুধু ভারতেই নয়, এখন সারা বিশ্বেই এই নির্বাচন নিয়ে আলোচনা চলছে। বাংলাদেশেও চলছে ব্যাপক আলোচনা। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা ভারতের এই লোকসভা নিয়ে বেশ আগ্রহী। বাংলাদেশের মানুষ ভাবছে কে বসবে এবার ভারতের সিংহাসনে।

ইতোমেধ্যে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন ৩৭ দলের এনডিএ জোটের প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ২০ দলের ইউপিএ। মোদির বিচক্ষণ নেতৃত্ব, দুর্নীতি বিরোধী পদক্ষেপসহ নানা ইস্যুকে নিজেদের শক্তিমত্তা ভাবছে বিজেপি। আর রাহুলের ক্লিন ইমেজ, দলিত, মুসলিম ভোটব্যাঙ্ককে নিয়ে এগিয়ে যেতে চায় কংগ্রেস। তাই বলা যায় কোনো পক্ষই কম নয়। এখন সমীকরণে কে এগিয়ে এটা নিয়ে বেশ আলোচনায় রয়েছে।

প্রতিটি জোটের যেমন রয়েছে শক্তি তেমনি রয়েছে দুর্বলতাও। বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে প্রায় একই রকম তথ্য। এসব জরিপ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় ভারতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির শক্তি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিচক্ষণ নেতৃত্ব, তার ব্যক্তিগত ইমেজ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়। মোদির বিজয়ের নেপত্বে কাজ করতে পারে মোদির নেতৃত্ব। মোদি নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। তার এই নেতৃত্বের গুণে তিনি শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বেই তার একটা বলয় তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। তাছাড়াও তার পাশে ‍রয়েছে অমিত শাহের মতো নেতা। যিনি ভারতের একটা শ্রেণির কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদি নিজেকে পাকিস্তান বিরোধী ও হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে ভারতের কাছে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ফলেই তার একটা বড় বলয় রয়েছে। আর এই বলয়কে কাজে লাগিয়ে তিনি আবারও ভারতের মসনদে বসতে পারেন। এমন ধারণা অনেকেই করছেন।

তবে শক্তির পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন দুর্বলতাও। যা কপালে চিন্তার রেখা এনেছে বিজেপির বড় বড় নেতাদের। এসবের মধ্যে, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মোদি সরকারের চরম ব্যর্থতা দেখেছেন। আরএসএস, শিব সেনা, গো-রক্ষা কমিটির মত চরম পন্থী দলগুলোকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়ায় নানামুখী চাপে থাকবে বিজেপি।

যদিও শক্তি বা দুর্বলতার পাশাপাশি বিজেপির রয়েছে বেশি কিছু সম্ভাবনাও। মোদি সরকারের সময় অর্থনৈতিক উন্নয়ন এর মধ্যে অন্যতম। এছাড়া প্রতিবেশী দেশগুলোকে নিয়ন্ত্রণে মোদির দক্ষতা চোখে পড়ার মতো।

এদিকে পিছিয়ে নেই দেশটির সবচেয়ে প্রাচীন দল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোটের। জরিপ উঠে এসেছে কংগ্রেসের বেশ কিছু শক্তি ও দুর্বলতার চিত্র।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাহুল গান্ধীর ক্লিন ইমেজ, আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনি জোট, দলিত, মুসলিমসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট আর রাহুল গান্ধীর প্রধানমন্ত্রী পদ না গ্রহণের ঘোষণা এগিয়ে রাখবে কংগ্রেসকে।

তবে শক্তির পাশাপাশি কংগ্রেসকে মোকাবেলা করতে হবে বেশকিছু দুর্বলতার। এর মধ্যে রয়েছে, দুর্বল কর্মীবাহিনী, মোদির বিরুদ্ধে রাফায়েল দুর্নীতি ও সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের সফলতা নিয়ে সন্দেহের মতো গতানুগতিক অভিযোগ, দলিত এবং মুসলিমদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতা।

তবে দুর্বলতার সত্ত্বেও বেশ কিছু দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে কংগ্রেস। সম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে চমক দেখিয়েছেন, রাহুল গান্ধী। আর নির্বাচনি ইশতেহারে কৃষকবান্ধব প্রতিশ্রুতি কাছে টানবে গ্রামীণ ভোটারদের। কংগ্রেস এবার অন্যবারের চেয়ে ভালো করবে বলে মনে করেন অনেকেই। আর কংগ্রেস এবার তাদের জয়ের মালা পড়তে পারবে বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে এবার জয়ের ব্যাপারটা নির্ভর করবে আঞ্চলিক দলগুলো। আঞ্চলিক দলগুলো যে জোটকে সমর্থন দিবেন সেই দলেই এবার সরকার গঠন করবে বলে মনে করছেন।

লোকসভা নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ভর করবে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল, উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টি, তামিলনাড়ুতে ডিএমকে ও এআইডিএমকে, দিল্লিতে আম আদমি পার্টি, পাঞ্জাবে শিরোমণি আকালি দল এবং উড়িষ্যায় বিজু জনতা পার্টি। এই দলগুলো যে জোটকে সমর্থন করবে সেই দলেই এবার জয়ের মালা পড়বে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। তবে, ইতোমধ্যে জানা গেছে, তৃণমূল কংগ্রেস কংগ্রেসকে সমর্থন দিবে। ইতোমধ্যে মমতা বিভিন্ন জনসভায় মোদির কঠোর সমালোচনা করে বক্তব্য দিচ্ছেন। তাতে পশ্চিমবঙ্গে বিজিপির ভরাডুবি হবে বলেই অনেকেই মনে করেছেন আর এতে ভালো করতে পারে কংগ্রেস। সেই দিক বিবেচনা করলে অনেকেই কংগ্রেসকে এগিয়ে রেখেছেন এবারের লোকসভা নির্বাচনে।