বিকল্পের সন্ধানে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপনে দেরি : কাদের

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে কোটা থাকবে না- এ বিষয়টি আন্দোলনকারীদের আবার নিশ্চয়তা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তারপরও কেন প্রজ্ঞাপনে বিলম্ব হচ্ছে, সেই কারণটিও জানিয়েছেন তিনি।

মন্ত্রী জানান, কোটা বাতিল হলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী আছে, অনুন্নত জেলা, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও নারীদের জন্য সমন্বিত কিছু করার চিন্তাভাবনা চলছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের বিষয়ে প্রজ্ঞাপনের দাবিতে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নতুন করে কর্মসূচি ঘোষণার পরদিন রবিবার সচিবালয়ে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক এ কথা বলেন।

৫৬ শতাংশ থেকে কোটা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে গত ৮ থেকে তিন দিনের তুমুল আন্দোলনের মুখে ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী সংসদে কোনো কোটা থাকবে না বলে ঘোষণা দেন। তবে কোটা বাতিল হলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী ও নারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে বলে জানান তিনি। এরপর ছাত্ররা ক্লাসে ফিরে গেলেও প্রজ্ঞাপনের দাবিতে আবার তারা মাঠে নেমেছে।

প্রজ্ঞাপনের দাবিতে গত বুধবার ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে রবিবার থেকে আবার কর্মসূচিতে ফেরার হুমকি দেয় ছাত্ররা। সেদিন প্রজ্ঞাপন জারি না হলেও সেদিন কোটা বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কমিটি গঠনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নথি পাঠানোর কথা জানান জনপ্রশাসন সচিব।

এর মধ্যে শনিবার ঢাকার বাইরে একটি আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাধারণ মেধা কোটায় বরাদ্দ বেশি রেখে কোটা সংস্কারের পরিকল্পনার কথা জানান। এতে সরকার আসলে কী করতে চাইছে তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে আন্দোলনকরীরা। আর শনিবারের ঘোষণা মত রবিবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে দাবি জানাচ্ছে তারা।

এর মধ্যে গত ৯ এপ্রিল ছাত্রদের সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক করা ওবায়দুল কাদের নিজ দপ্তরে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। বলেন, ‘কোটার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ফয়সালা করে দিয়েছেন। কোটা থাকবে না।’

তাহলে প্রজ্ঞাপন হচ্ছে না কেন আর সেটি কখন হবে, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এখানে তো চিন্তা-ভাবনা আছে, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী আছে, অনুন্নত জেলা আছে, মুক্তিযোদ্ধা আছে, নারী আছে, তাই এখানে একটি সুসমন্বিত কিছু করার চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে।’

‘এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বিদেশেও ছিলেন। কিন্তু এই প্রক্রিয়াটা থেমে নেই। এই কোটার আন্দোলন যে কারণে, সেটাইতো বাতিল করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে যেটা বলেছেন সেটা আমাদের বিশ্বাস করা উচিত।’

ছাত্রদের নতুন আন্দোলনকে সমীচিন মনে করেন না কাদের। বলেন, ‘উনি (প্রধানমন্ত্রী) কথা দিতে কখনও কথা ব্রেক করে না। সংসদে যা বললেন সেটার গেজেট প্রকাশের জন্য আন্দোলনের জন্য হুমকি, এটা সমীচীন হচ্ছে না। আমি ছাত্র সমাজকে বলব, তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবির ব্যাপারে সরকার খুবই সহানুভূতিশীল এবং সক্রিয়। যৌক্তিক সমাধানের সবরকম প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে।’

‘তাই তাদেরকে বলবো, ধৈর্য ধরতে। অনতিবিলম্বে তারা সমাধান পেয়ে যাবে। এ নিয়ে আন্দোলন, পরীক্ষা, ক্লাস বর্জন করা, এমনিতেই অনেক ক্ষতি আমাদের হচ্ছে। আশা করি তারা ক্যাম্পাসে ফিরে যাবেন।’

কাদের আবারও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কথা এদিক-সেদিক হবে না। তবে, এখানে যদি কেউ রাজনীতি করতে চান, সেটা ভিন্ন কথা। গেজেট কখন হল কি হল না, প্রধানমন্ত্রীর মুখের কথায় আস্থা স্থাপন করা উচিত, বিশ্বাস করা উচিত।’

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য সংরক্ষিত। এর বাইরে ১০ শতাংশ করে নারী ও অনুন্নত জেলা কোটা, পাঁচ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা এবং এক শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা রয়েছে।

১৯৯৬ সালের আগ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটা কেবল একাত্তরের যোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত থাকলেও পরে তা তাদের সন্তান এবং নাতি নাতনিদেরকেও এই সুবিধার আওতায় আনা হয়।

তবে আওয়ামী লীগ সরকারের এই উগ্যোর পর ৯৭ সালে প্রথমে আন্দোলনে নামে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের অনুসারীরা। আর এরপর থেকে নানা সময় কেবল মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের আন্দোলন ব্যর্থ হয়।

তবে গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ কোনো বিশেষ কোটার কথা উল্লেখ না করে সামগ্রিকভাবে কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে মাঠে নামে। এরপর এই দাবি ছাত্রদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায়। আর ৮ এপ্রিল শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের সংঘর্ষের পর সারাদেশে শিক্ষাঙ্গনে ছড়িয়ে পড়ে ছাত্র আন্দোলন।