বিদেশে কি যেতে পারবেন খালেদা জিয়া?

বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আরথ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি জটিলতাসহ বিভিন্ন অসুস্থতায় ভুগছেন তিনি। কয়েকদফা হাসপাতালে নেওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসনকে গত ১৩ নভেম্বর থেকে আবারো এভার কেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

শুরু থেকেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছে দলটি। এ জন্য ফের অনশন-মানববন্ধন-বিক্ষোভ সমাবেশের মতো আন্দোলনে সরব দলটি। ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে সোমবারও (২২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করেছে। সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী বুধবার (২৪ নভেম্বর) সারা দেশে জেলা প্রশাসকদের কাছে স্মারকলিপি দেবে বিএনপি।

অন্যদিকে সরকার ও আওয়ামী লীগের ভাষ্য মতে, আদালতে সাজাপ্রাপ্ত আসামি খালেদা জিয়াকে মানবিক কারণে জামিন দেওয়া হলেও বিদেশ যেতে দিলে সেটা হবে আইনের লঙ্ঘন। আইনের মধ্য থেকেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসাসেবা শতভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে। খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে হলে সাজার স্বঅবস্থানে (কারাগারে) ফিরে যেতে হবে।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আসলে কতটা সংকটজনক? চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়া কতটা প্রয়োজন? আইন অনুযায়ী এই অনুরোধ কতটা গ্রহণযোগ্য?
সেই বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক।

আনিসুল হক বলেন, বিএনপি বা খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আইনটা আগে ভালো করে দেখুন। তারপর আলোচনা হতেই পারে। শর্ত বদলাতে হলে যথার্থভাবে আবেদন করতে হবে। কারণ আগের আবেদন আর বিদেশ যাওয়ার বিষয়টির মধ্যে বহু তফাৎ আছে।

তিনি বলেন, আগের আবেদন শুনানির পর নিষ্পত্তি হয়েছে এবং সাজা স্থগিত করার পর জেলখানা থেকে ছাড়া পেয়েছেন। এখন যদি শর্ত যুক্ত করতে হয় এবং বাতিল করতে হয়, তাহলে স্বঅবস্থানে ফিরে গিয়ে আবেদন করতে হবে। আইনে তাই বলা আছে। আইনে ফিরে গিয়ে তো কথা বলতে হবে।

খালেদা জিয়ার সাজা যে শর্তে স্থগিত করা হয়েছে, তা বদলাতে হলে তাকে জেলখানায় গিয়ে ফের আবেদন করতে হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ড. শাহদীন মালিক বলেন, প্রথমত এরকম কথা আইনের ৪০১ ধারায় বলা নেই। দ্বিতীয়ত, প্রথম যে শর্তে তার সাজা স্থগিত করা হয়েছে তা তো বদলানো হয়েছে। শর্ত ছিল সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত এবং বাসায় বসে চিকিৎসা করাতে পারবেন। এই শর্ত তো থাকেনি। সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে এবং খালেদা জিয়া বাসায় থেকেই আবেদন করেছেন। শর্ত বদলাতে খালেদা জিয়া ফের জেলখানায় যাননি। স্পষ্টতই প্রথম শর্তের একাধিকবার পরিবর্তন করা হয়েছে। সুতরাং আরেকবার পরিবর্তনে আমি কোনো আইনি বাধা দেখছি না। আমি প্রথম থেকেই এ কথা বলে আসছি।

বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে কোথায় চিকিৎসা করানো হবে, তা কিন্তু আমরা এখনো জানতে পারিনি। তিনি মালদ্বীপ যাবেন নাকি সিঙ্গাপুরে যাবেন নাকি লন্ডনে যাবেন, তা তো বলছেন না। বিদেশে যে কোনো ডাক্তারের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েও কিন্তু পরামর্শ নেওয়া যায়। আসলে কোথায় গেলে ভালো হবে… যদি আবেদন করে বলে যে আমি চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথে যেতে চাই, তাহলে কিন্তু এক ধরনের বার্তা পাওয়া যায়। সরকার তো খোলা আদেশ দিতে পারে না। আপনি অফিস থেকে ছুটি চাইলেও কোথায় যাবেন, কেন যাবেন, তা স্পষ্ট করতে হয়। বিএনপি খোলাসা করেনি। সরকারও ঠিক বুঝতে পারছে না।

এরআগে গত ১৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সংসদে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়ার করা আবেদনটি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী আগেই নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে যেতে অনুমতি দেয়ার আইনি কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের আইনের বইয়ে এটা নেই।

এছাড়া গত ১৭ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার বিষয়ে তার পরিবারের করা আবেদন সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা অমানুষ না। অমানুষ না বলেই তাকে অন্তত তার বাসায় থাকার ব্যবস্থাটুকু, নির্বাহী ক্ষমতা আমার হাতে যতটুকু আছে, আমি সেটুকু দিয়ে তাকে বাসায় থাকার, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বাকিটা আইনগত ব্যাপার। আর কত চান?’

খালেদা জিয়াকে যে বাসায় থাকার সুযোগ দেয়া হয়েছে, বাসায় রেখে চিকিৎসা করতে দেয়া হচ্ছে- এটাই কি বেশি নয়? এমন মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তথ্যসূত্র: সময় সংবাদ