বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে : অধ্যক্ষ সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেছেন, সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের মুখে দেশের উন্নয়নের কথা শুনতে শুনতে দেশবাসী আজ চরম অতিষ্ঠ। গত কয়েক মাস পূর্বে সংসদে দাঁড়িয়ে সরকার দলীয় এমপি বলেছিলেন, বাংলাদেশে এমন সময় আসতেছে যখন গ্রামেগঞ্জে ঝুড়িতে করে বিদ্যুৎ বিক্রি করবে। অথচ সেই সরকারেরই জ্বালানি উপদেষ্টা গত কয়েকদিন আগে জানিয়ে দিলেন ‘আসুন আমরা শপথ করি দিনের বেলা বিদ্যুৎ ব্যবহার করব না’।

তিনি তাদের অক্ষমতার কথা প্রকাশ করে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন রিজার্ভ খরচ করে তেল গ্যাস ক্রয় করার মত সক্ষমতা তাদের নেই। জ্বালানি উপদেষ্টা এত উন্নয়নের গল্পের মধ্যে যে শপথ করাতে চান তাতে প্রমাণিত হয় সরকার দেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে গেছে। তার মুখ দিয়ে প্রকৃত কথাটাই বের হয়ে এসেছে। কারণ, বঙ্গবন্ধুর ভাষায় চাটার দলেরা দেশকে চাটতে চাটতে আর কিছু বাকি রাখেনি।

শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) বাদ জুম’আ রাজধানীর মিরপুর-১ গোলচত্বর সংলগ্ন স্বাধীন বাংলা সুপার মার্কেটের সামনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবিচ্ছন্ন সরবরাহের দাবি এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশে যেখানে লোডশেডিংয়ের কথা চিন্তাই করা যায় না। মুহূর্তের জন্যও বিদ্যুৎ যায় না। সেখানে আমাদের দেশে শহরেই গড়ে প্রতিদিন ৫-৬ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। গ্রামাঞ্চলে তো বিদ্যুৎ মাঝে মাঝে আসে। অথচ সরকারের তরফ থেকে শতভাগ বিদ্যুৎ আর উন্নয়নের মুখরোচক গল্প প্রচার করা হয়। জনগণের সাথে মিথ্যাচারেরও একটা সীমা থাকা উচিত। এসব মিথ্যাচার বাদ দিয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করুন। অন্যথায় দেশের জনগণ সুযোগ পেলে সমুচিত জবাব দিতে ভুল করবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইএবি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, শুধু বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের বিপর্যয় নয়, দেশের জনগণ ইতিমধ্যে অঘোষিত দুর্ভিক্ষে পতিত হয়েছে। অধিকাংশ মানুষই বর্তমানে খাবার কিনতেই হিমশিম খাচ্ছে। খাবার কিনতে গিয়ে কেউ কেউ বিক্রি করছেন পরিবারের কোনো সম্পদ। কেউ আবার হচ্ছেন ঋণে জর্জড়িত। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। ব্যর্থতার দায়ে সরকারের এখনই পদত্যাগ করা উচিত।

যুগ্ম মহাসচিব প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) এক জরিপের বরাত দিয়ে বলেন, দেশের ৮৮ শতাংশ মানুষ মনে করছে খাদ্যের চড়া দাম একটি বড় আঘাত। এছাড়া রয়েছে রোগ ও চিকিৎসা ব্যয়, তেলের দাম ও পরিবহন ব্যয় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ। খাবার কিনতে হিমশিম খাওয়া মানুষের হার ৬৮ শতাংশ। নি¤œ আয়ের পরিবারগুলো খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এবং আয় কমে যাওয়ায় নানাভাবে সাশ্রয়ের চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে পরিবারের খাদ্য কেনার জন্য ৬৪ শতাংশ মানুষ ঋণ নিয়েছেন। ২৯ শতাংশ পরিবার তাদের সঞ্চয় ভেঙেছে। আবার খাবার কিনতে গিয়ে ১০ শতাংশ পরিবার তাদের গত ১২ মাসের সব সঞ্চয় ভেঙ্গে ফেলেছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারকেই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো এবং দরিদ্রদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম শুরু করতে হবে। অন্যথায় দেশে হাহাকার লেগে যাবে। মানুষ না খেয়ে মারা যাবে।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর সহকারী মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, অসঙ্গতি আর দূর্নীতিতে নিমজ্জিত রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান। দেশের মানুষকে দুর্ভিক্ষের জন্য সচেতন হতে বলা হলেও পত্রপত্রিকার মাধ্যমে যখন দেখা যায় হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হচ্ছে তখন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমাদের লজ্জা লাগে। সরকার ও প্রশাসন দূর্নীতিবাজ ও রাষ্ট্রীয় চোরদের চোখে দেখেও দেখেন না। জ্বালানি সংকটের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এই সংকট দীর্ঘমেয়াদি হলে তা পুরো অর্থনীতিকে স্থবির করে দিতে পারে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ-সংকটের কারণে দেশের শিল্পকারখানায় উৎপাদন কমেছে। যা দেশের জন্য অশনি সংকেত। অবিলম্বে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে এবং নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। নচেৎ জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার আদায়ে রাজপথে গণআন্দোলনের মাধ্যমে দূর্নীতিবাজদের আশ্রয়দাতা আওয়ামী সরকারকে সমুচিত জবাব দিতে কৃপণতা করবে না।

নগর উত্তরের সেক্রেটারী মাওলানা আরিফুল ইসলামের সঞ্চালনায় অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আইএবি ঢাকা মহানগর উত্তরের জয়েন্ট সেক্রেটারী মাওলানা নূরুল ইসলাম নাঈম, সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মুরাদ হোসেন, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতী ফরিদুল ইসলাম, প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার গিয়াস উদ্দিন পরশ সহ নগর নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশ শেষে মিরপুর-১ গোলচত্বর থেকে কিয়াংসি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট হয়ে মুক্তিযোদ্ধা সুপার মার্কেট, মাজার রোড, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবি হয়ে শাহ্-আলী মাজার সংলগ্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে বিক্ষোভ মিছিলটি মিরপুর নিউমার্কেটের সামনে দোয়া ও মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হয়।