বিরোধ তুঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি’তে !
বিধানসভা নির্বাচনে হারের ধাক্কায় পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি এখন বেসামাল। ৭৭টি আসন পেয়েও দলের ভেতর ক্ষোভ-বিক্ষোভ চরমে। ভোটের আগে যারা হুড়মুড়িয়ে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি’তে এসেছিলেন, তাদের অনেকেই আবার ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে নিয়মিত খবর প্রকাশিত হচ্ছে।
রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা তৃণমূল কংগ্রেসের সদ্য সাধারণ সম্পাদক হওয়া অভিষেক ব্যানার্জিও দাবি করেছেন, নেতারা তো বটেই, প্রচুর বিধায়ক তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
এই দাবিকে বিজেপি’র উপর চাপ সৃষ্টির জন্য অভিষেকের কৌশল বলা যেতে পারে, কিন্তু বিজেপি’র অন্দরের বিরোধকে উড়িয়ে দেয়া সম্ভব নয়। নিয়মিত নেতারা প্রকাশ্যে ঝগড়া করছেন। একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন।
রাজ্যের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী দিল্লিতে এসে মঙ্গলবার অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক সেরে শুভেন্দু দাবি করেন, যে কারণে ৩৫৬ ধারা জারি করা হয়, পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা তার থেকেও খারাপ। তবে তিনি জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি শাসন জারি নিয়ে কেন্দ্রীয় বা রাজ্য কমিটি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
তৃণমূল কিছু বলার আগেই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন সাবেক মন্ত্রী ও ভোটের আগে বিজেপি’তে যোগ দেয়া রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বিজেপি প্রার্থী হয়ে হাওড়ার ডোমজুড়ে ৪০ হাজারের বেশি ভোটে হেরেছেন।
তিনি টুইট করে বলেছেন, ”সমালোচনা তো অনেক হলো। মানুষের বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আসা নির্বাচিত সরকারের সমালোচনা ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা করতে গিয়ে কথায় কথায় দিল্লি ও ৩৫৬ ধারার জুজু দেখালে বাংলার মানুষ ভালোভাবে নেবে না। ”
রাজীবের পরামর্শ, ”আমাদের সকলের উচিত রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে, কোভিড ও ইয়াসে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। ”
রাজীবকে জবাব দিয়েছেন সাংসদ সৌমিত্র খান। তিনিও টুইট করে বলেছেন, ‘”৪২ হাজার ভোটে হারার পর মনে পড়ল? বিজেপির ৪২ জনের বেশি কর্মী মারা গিয়েছেন, তখন চুপ থাকা মানে শাসক দলকে সমর্থন করা।
মোদি সরকার করোনার জন্য ফ্রি’তে প্রতিষেধক, অক্সিজেনসহ সব রকম সাহায্য করছে। আর ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ের জন্য মোদিজি নিজে এসেছেন। ৪০০ কোটি রুপি দেওয়া হয়েছে রাজ্যেকে। ”
সৌমিত্র বলেছেন, ”আপনি নীরব না থেকে বিজেপি কর্মীদের পাশে থাকলে ভাল হয়। না হলে গাড়ির পিছনে যে ছবিটা আছে, সেটা আবার সামনের সিটে নিয়ে আসুন। ”
সাবেক বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত ভোটের আগে তৃণমূল থেকে বিজেপি’তে গেছেন, প্রার্থী হয়েছেন এবং হেরেছেন। নিউজ১৮ জানাচ্ছে, তিনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠিত কোনো মুখ তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি। তিনি বলেছেন, গত দশ বছর ধরে মমতা রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত মুখ। আমরা তার বিরুদ্ধে কোনো মুখ তুলে ধরতে পারিনি। তিনি মনে করেন, নেতিবাচক ভোটে নির্বাচন জেতা যায় না। ইতিবাচক দিকটা তুলে ধরতে হয়।
দিলীপ ঘোষ মঙ্গলবার রাজ্য কমিটির বৈঠক ডেকেছিলেন। বৈঠকের পর তিনি বলেন, শুভেন্দু কেন দিল্লি গেছেন তা তার জানা নেই। যারা ডেকেছেন তারা জানবেন। আর শুভেন্দু বিরোধী নেতা। তাই তার অনেক কাজ থাকতে পারে। এরপর শুভেন্দু বলেছেন, তিনি দলের সংগঠন সচিবকে জানিয়ে এসেছিলেন।
বৈঠকে মুকুল রায়ও আসেননি। তিনি বলেছেন, বৈঠকের কথা জানতেন না। তিনি নিজের যন্ত্রণা নিয়ে আছেন। আবার দিলীপ ঘোষের দাবি, বৈঠকের কথা তাকে জানানো হয়েছিল। তিনি আসার চেষ্টা করবেন বলেছিলেন।
দলের এই কোন্দল থামাতে রাজ্য বিজেপি একটা শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি গঠন করেছে। দিলীপ ঘোষ বৈঠকে বলেছেন, দলবিরোধী মন্তব্য বরদাস্ত করা হবে না। দলবিরোধী মন্তব্য করলেই তা শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি দেখবে।
বিজেপি নেতাদের মধ্যে বিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বলেছেন, বিজেপি নেতাদের উচিত, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বিরোধ মিটিয়ে নেয়া।
দিল্লিতে শুভেন্দু বলেছিলেন, তিনি অভিষেকের কোনো কথার জবাব দেবেন না। কারণ, অভিষেক তার পর্যায়ের নেতা নন। তার জবাবে অভিষেক বলেছেন, শুভেন্দুর পরিবারের বিরুদ্ধে ত্রিপল চুরির অভিযোগ রয়েছে। তিনিও ওই পর্যায়ে নামতে পারবেন না।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন