আতঙ্ক বাড়াচ্ছে সীমান্ত জেলার সংক্রমণের উর্ধ্বগতি, বাড়ছে মৃত্যু

বাড়াচ্ছে ভারত-সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর করোনা সংক্রমণের উর্ধ্বগতি। দেশের পশ্চিমাঞ্চলের ওই জেলাগুলোতে দিন দিন বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সীমান্তের আশপাশে প্রায় ৩২টি জেলায় করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালগুলোতে দেখা দিয়েছে শয্যা সঙ্কট।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গে সর্বোচ্চ ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে ৬ জন। কুষ্টিয়ায় ৪, সাতক্ষীরায় ৪, মোংলায় ৪ ও নাটোরে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সাতক্ষীরায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তের হার ছিল সর্বোচ্চ ৫৯.৩৪ শতাংশ। সংক্রমণ ঠেকাতে আক্রান্ত জেলাগুলোতে কঠোর লকডাউন দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে, সাতক্ষীরা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় ১৮২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনায় আক্রান্ত ১০৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানিয়েছেন, রামেক হাসপাতালে করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এদের মধ্যে ৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে ও বাকি ৪ জন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান। মারা যাওয়া ৫ জনের বাড়ি রাজশাহী ও ৩ জনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে।

এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে করোনা ইউনিটে নতুন ৩৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৭ জন রাজশাহীর, ৯ জন চাঁপাইবাবগঞ্জের, নওগাঁর ৩ জন, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গার একজন করে রোগী ভর্তি হয়েছেন। গেল ২৪ ঘণ্টায় ৪৮৮টি নমুনা পরীক্ষায় আক্রান্ত হয়েছে ১৯৯টি। করোনা শনাক্তের হার ৪০ শতাংশ। এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২৭৭ জন।

এদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে পিসিআর মেশিনে ২৭৯ নমুনায় ৮১ জনের পজিটিভ এসেছে। যার মধ্যে খুলনার ১৯৩ নমুনায় ৩৯ জন শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়া বাগেরহাটের ২৬ জন, যশোরের ২ জন, পিরোজপুরের ২ জন, গোপালগঞ্জের একজন ও ঝিনাইদহের একজন করোনা পজিটিভ হয়েছেন।

বাগেরহাট জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসা কর্মকর্তা ও করোনাভাইরাস তথ্য কর্মকর্তা সুব্রত দাস বলেন, জেলায় সবচেয়ে ঝুঁকিতে পড়েছে মোংলা উপজেলা। মোংলায় ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তের হার ৫৮.৮৩ শতাংশ। এই সময়ে জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। সংক্রমণ ধরা পড়েছে আরও ৬৭ জনের মধ্যে। বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এ উপজেলায় ৫১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩০ জনের ‘পজিটিভ’ এসেছে। তাতে শনাক্তের হার দাঁড়াচ্ছে ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, যা আগের দিনের চেয়ে ৫ শতাংশ পয়েন্ট বেশি।

এদিকে নাটোর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নাটোর জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দুজন। একই সময়ে ৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনায় আক্রান্ত আরও ৪৬ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৫২ দশমিক ২৭ শতাংশ। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ছিল ৬৭ দশমিক ৩০ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভারত সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা ও ওই সকল জেলায় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কাজে যাতায়াতকারী মানুষের মধ্যে করোনা শনাক্ত হচ্ছে। দেশের পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে প্রতিবেশী ভারতের সীমান্ত রয়েছে। রয়েছে স্থল ও নৌবন্দর। সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলায় বৈধ পাসপোর্ট ছাড়াও অবৈধভাবেও বিপুলসংখ্যক লোকজনের যাতায়াত রয়েছে।

তাদের অনেকেই ফিরে কোয়ারেন্টিনে থাকার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। লক্ষণ ও উপসর্গ না থাকায় তাদের সঙ্গে মিশে অজ্ঞাতসারেই অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে ধীরে ধীরে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে করোনার সংক্রমণ। সীমান্তের ওই জেলাগুলো কঠোর লকডাউন দেয়া ছাড়া সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না।