বিশ্ব পরিবেশ দিবসে প্রধানমন্ত্রীর বাণী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৩’ উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন:
“পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বাংলাদেশে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। বিশ্ব পরিবেশ দিবসের এবছরের প্রতিপাদ্য ‘Solutions to Plastic Pollution’ অর্থাৎ ‘প্লাস্টিক দূষণ সমাধানে সামিল হই সকলে’ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হয়েছে বলে আমি মনে করি।

পরিবেশই প্রাণের ধারক ও বাহক। পরিবেশ ও প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রুত নগরায়ন এবং সম্পদের অপরিমিত ব্যবহারের ফলে প্রকৃতি ও পরিবেশ আজ অনেকটাই বিপর্যস্ত, হ্রাস পাচ্ছে জীববৈচিত্র্য, বিঘ্নিত হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। বিশ্বব্যাপী গত ৭০ বছরে প্লাস্টিকের বহুমুখী ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, বিশেষ করে একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অত্যধিক উৎপাদন, যত্রতত্র ব্যবহার ও অব্যবস্থাপনার ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে এবং উর্বর কৃষি জমি থেকে শুরু করে জলাশয়ের প্রতিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। ফুড চেইনের মাধ্যমে সামুদ্রিক মাছ থেকে শুরু করে অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী, গবাদি পশু ও মানুষের দেহে মাইক্রো প্লাস্টিক প্রবেশ করছে। এর ফলে সামুদ্রিক প্রাণীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে এবং মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণী ক্যান্সার ও বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। কাজেই, প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহার হ্রাস, প্লাস্টিকের পুনঃব্যবহার ও পুনঃচক্রায়ন বৃদ্ধি এবং প্লাস্টিকের কার্যকর বিকল্প উদ্ভাবনের এখনই সঠিক সময়।

প্লাস্টিক দূষণ ও এর সমাধানের বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে United Nations Environment Assembly (UNEA) ইতোমধ্যে একটি Intergovernmental Negotiating Committee (INC) গঠন করেছে; যা প্লাস্টিক দূষণ বন্ধের লক্ষ্যে আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে একটি Legally Binding Agreement- এর খসড়া প্রণয়নের কাজ করে যাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, এর মাধ্যমে প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে বিশ্ববাসী সঠিক দিক-নির্দেশনা পাবে। টেকসই প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে Multisectoral Action Plan 2021-2030 প্রণয়ন করেছে, যেখানে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনে Circular Material- এর ব্যবহার বৃদ্ধি, একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস, প্লাস্টিক বর্জ্যের পুনঃচক্রায়নের হার ধাপে ধাপে বৃদ্ধি এবং বাৎসরিক প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ হ্রাসে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকার প্লাস্টিকের উৎপাদন হ্রাস ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ২০২৩- এর মাধ্যমে পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, পরিবহন, মজুত ও ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ এবং পণ্যে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক আইন, ২০১০ ও পণ্যে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক বিধিমালা, ২০১৩- এর মাধ্যমে পলিথিনের বিকল্প পাটের শপিং ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-২০৩০ অর্জনে আমাদের সরকার প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নানাবিধ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। নতুন নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং শিল্প-প্রতিষ্ঠান স্থাপনে যাতে প্রতিবেশ ও পরিবেশসম্মত বিধিব্যবস্থা পরিপালন করা হয় সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সমুদ্র প্রতিবেশ সংরক্ষণ, সমুদ্র দূষণরোধ ও সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে উন্নয়নের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে আমরা ব্লু-ইকোনমি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এছাড়াও, সমন্বিতভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার অংশ হিসেবে আমাদের সরকার ইতোমধ্যে ‘National Adaptation Plan ( NAP) 2023-50, Updated Nationally Determined Contribution (NDC) 2021 এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষার জন্য ‘Mujib Climate Prosperity Plan (MCPP) 2022-41’ প্রণয়ন করেছে।

আমি আশা করি, বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদ্‌যাপনের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণ ও প্রতিবেশের টেকসই ব্যবস্থাপনায় জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা আরো বৃদ্ধি পাবে। আমি ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৩’- এর সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।