সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে
বৃক্ষপ্রেমিকের বিষ্ময়কর ঝুলন্ত বাগান!
প্রাচীন পৃথিবীর সপ্তম আশ্চার্য্য ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগানের কথা কমবেশি সবারই জানা! অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্য যে, প্রায় দেড় যুগ ধরে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌর এলাকার জিরো পয়েন্ট দিলরুবা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিজ বাড়ি ও ২৫/২৬ টি দোকানের সামনে অদ্ভূত, বিচিত্র ও বিষ্ময়কর ঝুলন্ত বাগান গড়ে তুলেছেন শামীম হোসেন নামের এক বৃক্ষপ্রেমিক।
শনিবার (১৬ এপ্রিল) সরেজমিন শামীমের ঝুলন্ত বাগান পরিদর্শন করে এরই সত্যতা পাওয়া গেলো।
এলাকাবাসী জানায়, শাহজাদপুর পৌর এলাকার দিলরুবা মহল্লার হাজী আবু শামার ছেলে বৃক্ষপ্রেমিক শামীমের গাছের সাথেই দেড় যুগ বসবাস। গাছকে ভালোবেসে যৌবনের সিংহভাগ সময়ই ব্যয় করেছেন ঝুলন্ত বাগানের পেছনে তিনি।
বাড়ির প্রবেশ পথ থেকে শুরু করে বাড়ির উঠান, শয়ন কক্ষ, বারান্দা, দেয়াল দেয়ালে, গাছের ডালে ডালে, দোকনের সামনে এমনকি বাথরুমেও অদ্ভূদ অদ্ভূদ পাত্রে বিচিত্র নানা গাছ ঝুলিয়ে রেখেছেন তিনি।
শামীম জানালেন, ছোটবেলায় শুনেছিলেন ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যানের কথা। সেই শূন্য উদ্যানের কল্পনাই এ বাগান তৈরিতে তাকে প্রেরণা জুগিয়েছে। তার ঝুলন্ত বাগানের বিশেষতঃ এই যে, সুদীর্ঘ সময় ধরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শামীম ক্যাকটাস, মানি প্লান্ট, বাগান বিলাস, বাঁশ পাম্প, পাতাবাহার, কাঠগোলাপ, শতমূল, ঝাউ, তুলসি, এ্যালোভেরা, কয়েনলিলি (ওয়াটার প্লান্ট), পাথরচূড়া, জবা, গোলাপ, হাসনাহেনা, মেঘকুমারী, দুধকম্বল, আঙ্গুরসহ নান্দনিক, বাহারী ও বিরল জাতের শতশত গাছের চারা সংগ্রহ করে তা ডিমের খোসা, বৈদ্যুতিক ভাল্ব, নারিকেলের খুলি, ফ্লাক্সের ভ্যাকিয়্যুম টিউব, ছাইদানী, পরিত্যাক্ত পিকচার টিউব, খেলনা নৌকা, ছোট ছোট অদ্ভূদ নানা কাচ ও প্লাষ্টিকের পরিত্যাক্ত নানা পাত্রে চারা রোপন করে নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে বিষ্ময়কর এ ঝুলন্ত বাগান তৈরি করেছেন শামীম।
এ অসাধ্য সাধন করতে তাকে বেশ বেগ পোহাতে হলেও যে কোন অদ্ভূদ পাত্রে গাছ রোপন ও তা বাঁচিয়ে রাখার কৌশল করায়াত্ব করেছেন তিনি। এমনটি শুনতে কল্পবাক্য মনে হলেও বাস্তবতা কখনও কখনও কল্পনাকেও হার মানায়।
সরেজমিন শামীমের অদ্ভূদ ও বিষ্ময়কর ঝুলন্ত বাগান পরিদর্শন করে এরই সত্যতাও পাওয়া গেলো।
শামীমের এ বাগান দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আশপাশের অনেক যুবকও এ ধরনের বাগান গড়ে তোলার কাজে হাত দিয়েছেন। গাছের প্রতি শামীমের নিঃখাদ ভালোবাসা দেখে বাড়ির বড়দের পাশাপাশি কোমলমতি শিশুরাও বাগান পরিচর্যায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।
শামীমের ভাতিজি আলভী (১২) ও জেরিন (১০) জানায়,‘আমরা গাছ খুব ভালোবাসি, গাছের যত্ন করি, ফুল সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তাই এগুলো কাউকে ছিঁড়তে দেই না।’
বিষ্ময়কর এ ঝুলন্ত বাগান তৈরির পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে বৃক্ষপ্রেমিক শামীম হোসেন জানান, ‘গাছকে ভালোবেসেই পরিত্যাক্ত পাত্রে গাছ লাগাতে শুরু করি। তাছাড়া সৌন্দর্য বর্ধন, পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র রক্ষায় গাছের অসামান্য ভূমিকার কথা মাথায় রেখে দিনে দিনে বাগানের পরিধি বৃদ্ধি করেছি। বিশুদ্ধ অক্সিজেন প্রাপ্তিতেও গাছের বিকল্প নাই। সবারই বেশি বেশি গাছ লাগানো উচিত।’
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, ‘বর্তমান বিশ্ব উষ্ণায়নের যুগে বায়ু দূষণ বাড়ছে, পরিবেশ ভারসাম্যতা হারাচ্ছে। বসতবাড়ি, অফিস, দোকানপাটে কৃষক শামীমের মতো গাছ লাগালে বায়ু দূষণ কমবে ও পরিবেশের ভারসাম্যতা রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। শামীম নিজের মেধা মনন দিয়ে সৃজনশীল যে ঝুলন্ত বাগান বানিয়েছেন তা সত্যই প্রসংশার দাবী রাখে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন