বৃটিশ সাবেক রাষ্ট্রদূত সহ ৬ হাজার বন্দিকে মুক্তি দিচ্ছে মিয়ানমার
বৃটেনের সাবেক একজন রাষ্ট্রদূত, জাপানের একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা, মিয়ানমারের বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচির অস্ট্রেলিয়ান উপদেষ্টা, বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী সহ ৬ হাজার বন্দিকে মুক্তি দিচ্ছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা।
গত বছর ১লা ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচির সরকারকে উৎখাত করে জান্তা সরকার। এরপর বৃটিশ সাবেক রাষ্ট্রদূত মিস ভিকি বোম্যান এবং জাপানের তোরু কুবোটাকে এ বছর জেল দেয়। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার সিন টারনেলকে আটক করা হয় অভ্যুত্থানের পরপর। আটক এসব বিদেশিকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর কথা রয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
মিয়ানমারের জাতীয় দিবস উপলক্ষে এসব নেতাকর্মী ও বিদেশিকে ক্ষমা দিতে যাচ্ছে জান্তা সরকার। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার পর কমপক্ষে ১৬ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে সরকার। অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছে এই সরকারের সেনারা। হত্যা করেছে বিপুল সংখ্যক মানুষকে।
২০০২ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে মিয়ানমারে বৃটিশ রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন মিস বোম্যান। তাকে যখন গ্রেপ্তার করা হয় তখন তিনি ইয়াঙ্গুনভিত্তিক মিয়ানমার সেন্টার ফর রেসপন্সিবল বিজনেস পরিচালনা করছিলেন।
তিনি চমৎকার বার্মিজ ভাষা জানেন এবং অনর্গল এ ভাষায় কথা বলতে পারেন। তার স্বামী হতেইন লিন সাবেক একজন রাজনৈতিক বন্দি। শান রাজ্যে তাদের একটি বাড়ি আছে। সেখান থেকে ইয়াঙ্গুনে ফেরার পরই এই দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়। মিস বোম্যান ভিন্ন ঠিকানায় বসবাস করেন- এ বিষয়টি সরকারের কাছে নিবন্ধন করাতে ব্যর্থতার কারণে সামরিক কর্তৃপক্ষ তাদের দু’জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ গঠন করে। কিন্তু এই মামলাকে অভিবাসন বিষয়ক অপরাধের চেয়ে রাজনৈতিক হিসেবেই দেখা হয় বেশি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অস্ট্রেলিয়া ইম্প্যাক্ট পরিচালক টিম ও’কনর বলেন, অভ্যুত্থানের পর থেকে হাজার হাজার মানুষকে জেলে পাঠানো হয়েছে মিয়ানমারে। এসব মানুষ কোনো অপরাধ করেননি। তাদেরকে প্রথমেই জেলে পাঠানো উচিত হয়নি। তিনি আরও মনে করেন এখন এসব মানুষকে মুক্তি দেয়ার ফলে তাতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নৃশংসতা থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি অন্যখাতে নেয়া যাবে না। তিনি আরও বলেন, সামরিক বাহিনীর অধীনে মিয়ানমারে খেয়ালখুশি মতো গ্রেপ্তার, বেআইনি আটক এবং আটক করে গোপন করা, রুদ্ধদ্বার বিচার পরিণত হয়েছে রুটিনে। যেসব মানুষ কোনো অন্যায় করেননি তাদেরকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর ইয়াঙ্গুন থেকে আটক করা হয় টারনেলকে। অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের অধীনে তাকে তিন বছরের জেল দেয়া হয়। তিনি ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা। অন্যদিকে বিভিন্ন অজুহাতে সুচিকে কমপক্ষে ২০ বছরের জেল দিয়েছে জান্তা সরকার। ওই সময়ে টারনেলের মামলায় আদালতের রায়কে প্রত্যাখ্যান করেছিল অস্ট্রেলিয়া সরকার। তারা সাফ জানিয়ে দেয় কোনো রুদ্ধদ্বার সামরিক আদালতে তাদের কোনো নাগরিকের বিচার করা যাবে না।
টারনেলের মুক্তির খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং। তিনি টুইটারে বলেছেন, প্রফেসর সিন টারনেলকে নিয়ে যে রিপোর্ট পেয়েছি তাকে স্বাগত জানাই আমরা। প্রফেসর টারনেল আমাদের প্রথম অগ্রাধিকারে আছেন। তা হলেও এই মুহূর্তে আমরা এটা নিয়ে আর মন্তব্য করতে চাই না।
ডকুমেন্টারি বা প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা তোরু কুবোটা (২৬)কে ইয়াঙ্গুনে সরকার বিরোধী এক বিক্ষোভের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় জুলাইয়ে। রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং ইলেকট্রনিক কমিউনিকেশন আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে দেয়া হয় ১০ বছরের জেল। রিপোর্টর্স উইদাউট বর্ডার্সের মতে, এই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আগে মিয়ানমার আটক করেছে কমপক্ষে ৬৮ জন সাংবাদিককে। জুলাই মাসে প্রথমবার মিয়ানমারে পৌঁছেন কুবোটা। তিনি মিয়ানমারের একজন ব্যক্তির ওপর প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করছিলেন।
চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সাইট ফিল্ম ফ্রিওয়ের মতে, কুবোটা ২০১৪ সালে জাপানে একজন রোহিঙ্গা শরণার্থীর সাক্ষাৎ পান। তখনই তিনি নিজের এই ক্যারিয়ার শুরু করেন। তখন থেকেই তিনি মিয়ানমারের শরণার্থী এবং জাতিগত বিষয়ে বেশ কিছু ছবি নির্মাণ করেন। যাদেরকে এ দফায় ছেড়ে দেয়া হচ্ছে তার মধ্যে আছেন সাবেক মন্ত্রী কাইওয়া তিন্ট সয়ে। তিনি অং সান সুচির ঘনিষ্ঠ একজন সহযোগী।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন