যুক্তরাজ্যে এবার ৪১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি, মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে

যুক্তরাজ্যের মানুষের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। প্রায় প্রতি মাসেই সে দেশের মূল্যস্ফীতির হার রেকর্ড উচ্চতায় উঠছে। গত সেপ্টেম্বরে দেশটির মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এবার জানা গেল, অক্টোবরে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৪১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

খাদ্য থেকে শুরু করে জ্বালানি-সবকিছুর দাম এখন বাড়তি। দুধ, পনির ও ডিমের দাম এখনো বাড়ছে। জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। খবর বিবিসির।

সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ১, ১৯৮১ সালের অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ। এর মধ্যে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ। দেশটির অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকসের (ওএনএস) প্রধান অর্থনীতিবিদ গ্রান্ট ফিটজনার বিবিসিকে বলেন, গত এক বছরে যুক্তরাজ্যে গ্যাসের মূল্য বেড়েছে প্রায় ১৩০ শতাংশ আর বিদ্যুতের মূল্য বেড়েছে প্রায় ৬৬ শতাংশ।

জ্বালানির মূল্যের রাশ টানতে যুক্তরাজ্য সরকার অক্টোবর থেকে এনার্জি প্রাইস গ্যারান্টি স্কিম চালু করেছে। এর মাধ্যমে দেশটির প্রায় সব নাগরিক ৪০০ পাউন্ড জ্বালানি ভর্তুকি পাবেন।কিন্তু তাতেও মানুষের দুরবস্থার যেন অবসান ঘটছে না। মূলত গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণেই মূল্যস্ফীতির হার প্রতি মাসেই রেকর্ড স্পর্শ করছে। ওএনএসের হিসাব, সরকার যদি এই ভর্তুকি না দিত, তাহলে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়াত ১৩ দশমিক ৮।

এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট আগামীকাল অর্থনীতি নিয়ে বড় ধরনের ঘোষণা দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের খবর, আগামীকাল সেই ঘোষণায় সরকারি ব্যয় হ্রাস ও করহার বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হবে।

জেরেমি হান্ট বলেছেন, তাঁর লক্ষ্য হচ্ছে, ক্রমবর্ধমান পণ্যমূল্যের রাশ টেনে ধরা। একই সঙ্গে অর্থনীতিকে সঠিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবেন না তিনি।

এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের মানুষের মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যে মজুরি বেড়েছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। আর সে মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ১। অক্টোবরে তা বেড়ে দাঁড়াল ১১ দশমিক ১ শতাংশ। সে মাসের মজুরি বৃদ্ধির হার জানা যায়নি। তবে মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম হলে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। কোন খাতে কত মূল্যস্ফীতি ওএনএসের তথ্যানুসারে, অক্টোবর মাসে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি ছিল গৃহায়ণ, জ্বালানি ও পানি খাতে-২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। খাদ্য ও নন-অ্যালকোহলীয় পানীয়ের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি ছিল ১৬ দশমিক ২ শতাংশ, আসবাব ও গৃহস্থালি পণ্যের ক্ষেত্রে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ, হোটেল ও রেস্তোরাঁ খাতে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ, যোগাযোগ খাতে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ, কাপড় ও জুতায় ৮ দশমিক ৫ শতাংশ।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটেনের বৃহত্তম সুপারমার্কেট টেসকোর এক জরিপে দেখা গেছে, ক্রেতারা এখন মেয়াদের শেষ দিকে থাকা পণ্য খোঁজ করছেন, কারণ এসব পণ্যে বেশি ছাড় পাওয়া যায়। টেসকো জানায়, তাদের ৩৩ শতাংশ গ্রাহক এখন ঘন ঘন এ ধরনের ছাড় খুঁজছেন।
সুপারশপের তাক খালি করার জন্য যেসব মাংস, তাৎক্ষণিক খাওয়া যায়, সবজি ও ডেজার্ট জাতীয় খাবার আলাদা রাখা হয়েছে, সেগুলোর প্রতি মানুষের তীব্র আকর্ষণ। টেসকো বলছে, এই প্রবণতার কারণে খাদ্যের উচ্ছিষ্ট কমেছে।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাইকারি বাজারে জ্বালানির দাম কমার কারণে গ্রাহকেরা কিছুটা স্বস্তি পাবেন ঠিক, কিন্তু জ্বালানির দাম এখনো প্রাক-যুদ্ধ সময়ের তুলনায় যথেষ্ট বেশি। সে জন্য ব্যাংক অব ইংল্যান্ড আশা করছে, আগামী কয়েক মাস যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের ওপরে থাকবে। এরপর মূল্যস্ফীতির হার কমতে শুরু করবে।

এর অর্থ হলো, ব্যাংক অব ইংল্যান্ড আগামী মাসে আবারও নীতি সুদহার যথেষ্ট বৃদ্ধি করবে। মন্দার আশঙ্কা সত্ত্বেও তারা মনে করছে, মূল্যস্ফীতির হার ২ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখা তাদের কর্তব্য।