লুটপাটের টাকা সুইস ব্যাংকে পাচার করেছে ক্ষমতাসীনরা : রিজভী

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের হিসাবে যে টাকা জমা দিয়েছে সেটা ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি ও লুটপাটের বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লুট হওয়া টাকাই সেখানে জমা হয়েছে বলেও অভিযোগ তার।

শুক্রবার নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ কথা বলেন। তিনি বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) অর্থমন্ত্রী সংসদে যে বলেছেন ব্যাংকিং খাত অত্যন্ত নাজুক। লালবাতি জ্বলার উপক্রম হয়েছে। সে ব্যাংক লুটের টাকাই সুইস ব্যাংকে পাচার হয়েছে বলে সবাই বিশ্বাস করে।’

এক বছর আগের তুলনায় সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা প্রায় ২০ শতাংশ বাড়ার কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।’

সুইস ব্যাংকের সবশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশিদের হিসাবে এক হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ জমা হয়েছে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে। ২০১৬ সালে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ থেকে জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল ৬৬ কোটি ১০ লাখ সুইস ফ্রাঁ। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় হয় প্রায় পাঁচ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। আগের বছর এই জমার পরিমাণ ছিল প্রায় ৫৫ কোটি সুইস ফ্রাঁ বা চার হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি)বৃহস্পতিবার ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড ২০১৬’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আর বাংলাদেশের প্রতিটি গণমাধ্যম গুরুত্বের সঙ্গে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

রিজভী বলেন, ‘সারা দুনিয়া থেকে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে অর্থ জমার পরিমাণ কমেছে। অথচ বাংলাদেশ থেকে এটা বেড়েছে।…মূলত: দুর্নীতি আর লুটপাটের টাকা সুইসব্যাংকে পাচার করেছে ক্ষমতাসীনরা। ’

‘টাকা পাচারের পিছনে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায়ের লোকেরা জড়িত। তা না হলে অর্থমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অসহায়ের ভুমিকায় অবতীর্ণ হতেন না’-বলেন রিজভী। সুশাসনের অভাবে বিনিয়োগ পরিবেশের ঘাটতি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে দেশ থেকে বিদেশে অর্থ নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রিজভী বলেন, ‘ভোটারবিহীন সরকার জোর করে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর দেশকে দূর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। লুটপাটের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সমস্ত আর্থিকখাত ধ্বংস করে দিয়েছে। যা গতকাল অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে কিছুটা ফুটে ওঠেছে।’

‘বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, সোনালীব্যাংক কেলেঙ্কারি, অগ্রণীব্যাংক কেলেঙ্কারি, রুপালীব্যাংক কেলেঙ্কারির মতো বড় বড় ঘটনা ঘটেছে । অথচ একটিরও বিচার হয়নি বা সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি।’

‘অবৈধ ভোটারবিহীন সরকার কেলেঙ্কারি ছাড়া জনগণকে আর কিছুই উপহার দিতে পারেনি’ মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘এর পিছনে কারা জড়িত তা সরকার ভাল করেই জানে, জনগণও জানে। কারা সুইস ব্যাংকে টাকা পাচার করছে, কারা কানাডায় বেগম পল্লী গড়ে তুলেছে, কারা মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম বানাচ্ছে তার জবাব জনগণ একদিন দেবে।’

‘আর সেজন্যই তাদের জনগণকে এত ভয়। তাই কি করে ভোটছাড়া আরেকটি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখা যায় সে পৈশাচিক ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে’- বলেন রিজভী।

‘কিন্তু কোন ষড়যন্ত্রই সফল হবে না’ মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘ভোটারবিহীন সরকার জনগণকে জবাব দেয়ার সময় হয়ে গেছে। জনগণের হাত থেকে পালানো আর সহজ হবে না।’

দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা সুইসব্যাংকসহ বিদেশে পাচারের জন্য দায়ীদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলেও বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে।

ঈদযাত্রা নিয়ে কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা

এবার ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম ছিল- সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর এমন দাবিতে অসাড় বলেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘অন্ধ হলে কিন্তু প্রলয় বন্ধ থাকে না। যানজটের যে বিভীষিকাময় প্রলয়ের ধাক্কা ঈদমুখী মানুষকে পোহাতে হয়েছে, মন্ত্রীর বক্তব্য মানুষের সে কষ্টকে উপহাস করা।’

রিজভী বলেন, যানজটে মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগের খবর গণমাধ্যমের সকল শাখায় ছবিসহ ছাপা হয়েছে। যানজটের শিরোনামাঙ্কৃত সচিত্র সংবাদগুলো কি সড়ক মন্ত্রীর চোখে পড়েনি?’ তিনি বলেন, ‘ঢাকা-টাঙ্গাইল-উত্তরবঙ্গ, ঢাকা -চট্রগ্রাম, ঢাকা- আরিচা-খুলনা-যশোর সড়কে ঘরমুখী মানুষকে দিরে পর দিন রাস্তায় থেকে কতই না দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।’

‘সড়ক পরিবহনে অব্যবস্থাপনা, আইন অমান্যের ধারবাহিক পরিস্থিতিতে ঈদের প্রাক্কালে মানুষের যাতায়াতে বিপজ্জনক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। যার কারণে সড়ক দূর্ঘটনা এবার ভয়াবহ রুপ ধারণ করে। ঈদের আনন্দ কারবালার মাতমে পরিণত হয়’-দাবি রিজভীর।

ঈদের আগে পড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০ জনের প্রাণহানি হয়েছে-সংসদে সড়ক মন্ত্রীর এমন বক্তব্যকেও মিথ্যাচার বলেন রিজভী। তিনি দোবি করেন, ঈদের আগে ও পরে এখন পর্যন্ত ১২৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।