ভারতের সংখ্যালঘুদের আরেক আতঙ্ক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ!

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদি দ্বিতীয়মেয়াদে শপথ নেয়ার একদিন পরেই দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির প্রধান অমিত শাহকে। বৃহস্পতিবার তাকে এ দায়িত্ব দেয়ার পর ভারতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।-খবর আরব নিউজের

মোদির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত হচ্ছেন অমিত শাহ। পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু কেবল বিচারবহির্ভূত হত্যার জন্যই তার এ নিয়োগ বিতর্কিত না।

২০১০ সালে এক মুসলিম দম্পতিকে ভুয়া বন্দুকযুদ্ধে হত্যার প্রধান আসামি এই অমিত শাহ। সন্ত্রাসবাদে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তুলে সোহরাব উদ্দিন শেখ ও তার স্ত্রী ইশরাত জাহানকে বিনাবিচারে হত্যা করা হয়েছিল।

ওই বছর গুজরাট থেকে অমিত শাহকে তাড়িয়ে দেয় দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। এ মামলায় সাক্ষী ও সাক্ষ্যপ্রমাণ সুরক্ষায় এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল আদালতকে। কিন্তু প্রমাণের অভাবে ২০১৪ সালে এ মামলা খারিজ করে দেয়া হয়েছে।

লোকসভা নির্বাচনের সপ্তাহগুলোতে ফের খবরে শিরোনাম হন অমিত শাহ। ভারতের জাতীয় নাগরিক তালিকা(এনআরসি) ও নাগরিকত্ব সংশোধন নিয়ে বিবৃতির জন্য আলোচনায় আসেন তিনি। দেশটির সত্যিকার নাগরিকদের পরিচয় বের করতে আসামে এই বিতর্কিত নাগরিক তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গেও এটা বাস্তবায়নের কথা উঠেছে।

আসামের অধিকাংশ মুসলমানদের ধারনা, তাদের নাগরিক অধিকার কেড়ে নিতে এবং অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী আখ্যায়িত করতেই এনআরসি প্রস্তুত করা হয়েছে। ।

এই নাগরিকত্ব সংশোধনীতে নিজের পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন অমিত শাহ। কারণ এতে প্রতিবেশী দেশগুলোর হিন্দু, বৌদ্ধ, পারসি ও শিখ সংখ্যালঘুদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেয়ার কথা রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলেন, সরকার যদি ১৯৫০ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনে সফল হয়, তবে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এতে দেশটির মুসলমানরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পর্যবসিত হতে পারেন বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এছাড়া সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের দাবিতে সরব ভূমিকা রাখছেন অমিত শাহ। সংবিধানের এই ধারাটিতেই ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের কথা বলা হয়েছে।

শুক্রবার হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সভাপতিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়ার এ সিদ্ধান্তের ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে সামাজিক মাধ্যমেও।

গুজরাটের সংবাদ সংগ্রহ করেন সাংবাদিক রানা আইয়ুব। তিনি বলেন, অমিত শাহ হচ্ছে প্রথম কোনো গুজরাটের মন্ত্রী, যাকে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও লুণ্ঠনের অভিযোগে রাজ্য থেকে নির্বাসনে পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। এবার তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

লেখক মিতালি শরণ এক টুইটে বলেন, অমিত শাহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, একটা ভালো সময়েই আমরা বেঁচে আছি!

এছাড়া বিজেপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রতাপ চন্দ্র সারেঙ্গিকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়ার সিদ্ধান্তও ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে।

তিনি যখন কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠন বজরং দলের উড়িষ্যার নেতা ছিলেন, তখন গ্রাহাম স্টেইন নামের এক অস্ট্রেলীয় খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারককে তার দুই নাবালক শিশুসহ জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বজরং দল জড়িত বলে অধিকাংশ মানুষের মত। যদিও সরকারি তদন্তে কোনো দলের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অপূর্ব আনন্দ বলেন, অমিত শাহ এবং শারেঙ্গিকে মন্ত্রী হিসেবে অভিষিক্ত করায় আমি মোটেও আশ্চর্য হইনি।

কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে এই শিক্ষক বলেন, জনগণের ম্যান্ডেট যে বার্তা দিচ্ছে, তার অর্থ হচ্ছে-আপনাকে এসব লোককেই গ্রহণ করতে হবে। আপনাকে সন্ত্রাসবাদে অভিযুক্ত প্রজ্ঞা ঠাকুরকে নেতা হিসেবে মানতে হবে। মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারীকে যিনি দেশপ্রেমিক বলে আখ্যায়িত করেন, তাকেও আপনার নেতা বলে স্বীকার করতে হবে। এতে আমাদের আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই।

তিনি আরও বলেন, অতীতে সংখ্যালঘুদের নিপীড়নের ঘৃণ্য রেকর্ড আছে যাদের, তারাই যখন বড় বড় পদগুলো দখলে নিয়ে গেছে, তখন প্রধানমন্ত্রী ‘সবাই মিলে, সবার জন্য উন্নয়ন এবং সবার আস্থা অর্জন’ বলে যে বিবৃতি দিয়েছে, তা কোনো অর্থ বহন করে না।

ব্যাপক সহিংসতা থেকে বেঁচে যাওয়াদের নিয়ে কাজ করা সমাজকর্মী হারশা মানদার বলেন, সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষা এবং ভিন্নমত প্রকাশের ক্ষেত্রে এটা হতাশাজনক সঙ্কেত। আজ আমি একেবারে আশাবাদী নই।

সরকারের এনআরসি পরিকল্পনা ও নাগরিকত্ব সংশোধনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা হবে সাংবিধানিক কাঠামোকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া। যা সম্পূর্ণভাবে হতাশাজনক।