ভারতে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ফাঁস, চুরি হয়ে যাচ্ছে টাকা

আধার কার্ড মানে জাতীয় পরিচয়পত্র। তবে আধার কার্ড বাধ্যতামূলক নয়। আগেই জানিয়েছিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু বাস্তবে আধার নম্বরের প্রয়োজন হয় প্রতিটি ক্ষেত্রে।

দেশটির প্রায় সব ডিজিটাল লেনদেনে আধার নম্বর যুক্ত করা বাধ্যতামূলক। আর তাতেই হয়েছে সমস্যা। আধার নম্বর থেকে খোলাবাজারে বেরিয়ে পড়েছে ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য। আর তা ব্যবহার করেই শুরু হয়েছে জালিয়াতি।

কলকাতা বিমানবন্দর থানা অঞ্চলের অধিবাসী এক নারী সম্প্রতি পাঁচ লাখ রুপি খুইয়েছেন। তিনি যে সাইবার প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন, আগেই তা বুঝতে পেরে পুলিশকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। তার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরি হয়ে গেছে।

ঘটনার সূত্রপাত মাস চারেক আগে। অনলাইনে একটি জিনিস কিনে সেটা ফেরত দেন ওই নারী। এরপর কুরিয়ার সংস্থা থেকে তার কাছে ফোন আসে। বলা হয় তিনি যে পার্সেল পাঠিয়েছেন, তাতে নিষিদ্ধ জিনিস আছে। এরপর মুম্বাই ক্রাইম ব্রাঞ্চের নাম করেও ওই নারীর কাছে ফোন আসে।

তারা ওই নারীর বহু তথ্য শেয়ার করেন। এরপর অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করার জন্য তাকে ব্যাংক থেকে টাকা পাঠাতে বলা হয়।
এই নারীর ক্ষেত্রে ভয় দেখিয়ে টাকা চুরি করা হয়েছে। বহু ক্ষেত্রে আধার নম্বর ও আঙুলের ছাপ ব্যবহার হয়েছে, যেখানে সেই লিংক ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।

রাজ্যের আরেক ব্যক্তি ট্রেড লাইসেন্স খুলবেন বলে কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। গিয়ে দেখেন তার নামে আস্ত একটি সংস্থা তৈরি হয়ে আছে। ওই সংস্থা তার আধার নম্বর, প্যান নম্বর ব্যবহার করে ভুয়া সংস্থা খুলেছে। সংস্থার যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছএ, তা-ও ভুয়া। শেষ পর্যন্ত অবশ্য পুলিশ অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে।

আধারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন সুমন সেনগুপ্ত। তিনি জানিয়েছেন, ‘আধার থেকে যে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার সুযোগ আছে, বহু বছর আগেই আমরা তা বলেছিলাম। সরকার সে সময় এসব অভিযোগ গুরুত্ব দেয়নি। মানুষ এবার সমস্যার মুখে পড়তে শুরু করেছে।’

বস্তুত এই ঘটনাগুলোর পর সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা ওঠে। সেখানে ভারতের নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছে, ভোটার কার্ডের জন্য আধার নম্বর আর বাধ্যতামূলক নয়। ওই সংক্রান্ত দুটি ফরম বাতিল করা হচ্ছে।

আধার নম্বর ডিজিটালি লক করার একটি ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অভিযোগ, বারবার চেষ্টা করেও তা অনলাইন করা যাচ্ছে না। লিংক ফেল হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কিভাবে কয়েক কোটি নাগরিকের আধার নম্বর নিরাপদ করা হবে, কিভাবে ফাঁস হয়ে যাওয়া তথ্য শনাক্ত করা হবে, কেউ তা জানে না।