ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি : পাচারে জড়িতরা শনাক্ত

অবৈধভাবে সমুদ্রপথে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার সময় তিউনিসিয়ার উপকূলে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে এখনও ৩৯ বাংলাদেশি নিখোঁজ রয়েছেন, যাদের নাম-পরিচয় জানা গেছে। পাশাপাশি এদের পাচারের সঙ্গে জড়িত নোয়াখালীর তিন ভাইয়ের একটি চক্র ও মাদারীপুরের দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। বুধবার নিজ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এসব তথ্য জানান।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, মানব পাচারের সঙ্গে যুক্ত নোয়াখালীর তিন ভাইয়ের একটি চক্র ও মাদারীপুরের দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া বৃহত্তর সিলেট থেকে যারা গেছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা বেশ কিছু দালালকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, জানা গেছে, নোয়াখালীর তিন ভাই এই চক্রের হোতা। মাদারীপুরের আছে আরও দুইজন। তাদের বিষয়ে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি।

তবে সন্দেহভাজন ওই মানব পাচারকারীদের নাম পরিচয় প্রকাশ করেননি মন্ত্রী।

অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের জানান, গত ৯ মে দুটি নৌকায় করে ১৩০ জনের মতো বাংলাদেশি লিবিয়া থেকে রওনা দেন। প্রথম নৌকাটি ইতালিতে পৌঁছে। অন্য একটি নৌকাটিতে ৭০-৮০ জনের মতো যাত্রী ছিলেন। সেই নৌকাটি ডুবে যায়।

তিনি বলেন, আহত অবস্থায় উদ্ধারকৃত ১৪ জনের মধ্যে চার জনের অবস্থা গুরুতর। তারা তিউনিসিয়ার জার্জিস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকি ১০ জন দেশটির রেড ক্রিসেন্ট ক্যাম্পে রয়েছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিদের কাছ থেকে জানা গেছে, তারা চার থেকে ছয় মাস আগে দুবাই হয়ে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া হয়ে ইতালিতে যাওয়ার জন্য লিবিয়ায় প্রবেশ করেন। তাদেরকে নিয়মিত নির্যাতন করা হতো। যারা আহত হয়েছেন তারা দেশে ফিরতে চাইলে তাদের নিয়ে আসা হবে এবং যেসব বাংলাদেশি নৌকাডুবির ঘটনায় মারা গেছেন, তাদের লাশ স্বজনরা চাইলে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, যাদের উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে কথা বলে নিখোঁজ বাংলাদেশিদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যার মধ্যে সিলেট বিভাগেরই ২২ জন।

তারা হলেন—আব্দুল আজিজ, ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট; আহমদ, ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট; লিটন আহমেদ, ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট; খোকন, বিশ্বনাথ, সিলেট; আফজাল হোসেন, গোলাপগঞ্জ, সিলেট; মমিন আহমেদ, বিশ্বনাথ, সিলেট; দিলাল আহমেদ, বিশ্বনাথ, সিলেট; কাশেম, গোলাপগঞ্জ, সিলেট; মৌলানা মাহবুবুর রহমান, সুনামগঞ্জ; জিল্লুর রহমান, বাংলাবাজার, সিলেট; কামরান আহমেদ মারুফ, সিলেট; রুকন আহমেদ, বিশ্বনাথ, সিলেট; হাফিজ শামিম আহমেদ, মৌলভীবাজারদ আয়াজ আহমেদ, ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট; ফাহাদ আহমেদ, বড়লেখা, মৌলভীবাজার, সুজন আহমেদ, বিয়ানীবাজার, সিলেট; ইন্দ্রজিত, সিলেট; জুয়েল, বড়লেখা, সিলেট; মুক্তাদির, হবিগঞ্জ; শোয়েব, বিয়ানিবাজার, সিলেট ও সাজু, সিলেট।

নিখোঁজ অন্যরা হলেন— সাব্বির, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ; আলি আকবর, বাগমারা, শিবচর, মাদারীপুর; জাকির হাওলাদার, শিবচর, মাদারীপুর; মনির, শরিয়তপুর; শাহেদ, রাজৈর, মাদারীপুর; নাইম, রাজৈর, মাদারীপুর; রাজিব, শরিয়তপুর; জালালউদ্দিন, কিশোরগঞ্জ; পারভেজ, শরিয়তপুর; স্বপন, মাদারীপুর; সজল, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ; জাহিদ, নরসিংদী; আব্দুর রহিম, নোয়াখালী; নাজির আহমেদ, সুনামগঞ্জ; নাদিম, রাজৈর, মাদারীপুর; নাসির আহমেদ, চাটখালি, নোয়াখালী ও সজিব, মাদারীপুর।