ভোটের অপেক্ষায় দেশ


রোববার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলবে ভোটগ্রহণ। উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে নির্বাচন হচ্ছে ২৯৯টি আসনে। একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে গাইবান্ধা-৩ আসনে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। আগামী ২৭ জানুয়ারি এ আসনে ভোটগ্রহণ নেওয়া হবে ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, নির্বাচন অবশ্যই উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, ‘সর্বাধিক সংখ্যক প্রার্থী এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। উৎসবমুখর ভোট হবে এটাই আশা।’
ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে এসে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের আহবান জানান সিইসি।
ইসি সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, নির্বাচনী সকল মালামাল ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে ৬ লাখ ৮ হাজার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে।
সচিব জানান, এবার ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোটকেন্দ্রে ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২টি ভোট কক্ষে ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৫ জন এবং মহিলা ভোটার রয়েছেন ৫ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৩১২ জন।
নির্বাচনে ইসিতে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সবগুলো দলই অংশগ্রহণ করছে। ২৯৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৮৬১ জন। এরমধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৭৩৩ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ১২৮ জন প্রার্থী।
ভোটকেন্দ্র এবং নির্বাচনী এলাকায় সেনাবাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত ফোর্স সংখ্যা- প্রায় ৬ লাখ ৮ হাজার। এর মধ্যে পুলিশ প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার, আনসার প্রায় ৪ লাখ ৪৬ হাজার, গ্রাম পুলিশ প্রায় ৪১ হাজার।
সেনাবাহিনী (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) ৩৮৯ টি উপজেলায় ৪১৪ প্লাটুন, নৌবাহিনী ১৮টি উপজেলায় ৪৮ প্লাটুন, কোস্টগার্ড (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) ১২টি উপজেলায় ৪২ প্লাটুন, বিজিবি (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) ৯৮৩ প্লাটুন, র্যাব (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) প্রায় ৬০০ প্লাটুন ভোটের মাঠে নিয়োজিত আছে।
এছাড়াও মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সংখ্যা (র্যাবসহ) প্রায় ২ হাজার প্লাটুন (প্রায় ৬৫ হাজার), এছাড়া সারাদেশে জেলা ও মেট্রোপলিটনে পুলিশের টহল দল নিয়োজিত রয়েছে।
এ নির্বাচনে নিয়োজিত ১ হাজার ৩২৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মধ্যে আচরণবিধি প্রতিপালনের জন্য ৬৫২ জন, অবশিষ্ট ৬৭৬ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্সের সাথে নিয়োজিত রয়েছেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৬৪০ জন, ১২২টি ইলেক্ট্রোরাল ইনকোয়ারি কমিটিতে ২৪৪ জন নিয়োজিত থাকবেন।
এছাড়াও প্রিজাইডিং অফিসার ৪০ হাজার ১৮৩ জন, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২ জন এবং পোলিং অফিসার ৪ লাখ ১৪ হাজার ৬২৪ জন দায়িত্ব পালন করবেন।
দেশী ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন এবং ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত ও অন্যান্য বিদেশী পর্যবেক্ষক ৩৮ জন, কূটনৈতিক/বিদেশী মিশনের কর্মকর্তা ৬৪ জন এবং বাংলাদেশস্থ দূতাবাস/হাইকমিশন বা বিদেশী সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশী ৬১ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন।
এবারই প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬টি আসনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এগুলো হলো-ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-৯, রংপুর-৩, খুলনা-২ ও সাতক্ষীরা-২ আসন।
নির্বাচন উপলক্ষে শনিবার মধ্যরাত (রাত ১২টা) থেকে ভোটের দিন দিবাগত মধ্যরাত (রাত ১২টা) পর্যন্ত বেবি টেক্সি/অটোরিকশা/ইজিবাইক, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিক-আপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পোসহ স্থানীয় যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। একই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে নৌযান চলচলের ওপর।
ভোটকে সামনে রেখে শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাত (রাত ১২টা) থেকে ১ জানুয়ারি দিবাগত মধ্যরাত (রাত ১২টা) পর্যন্ত মোট চার দিন সারাদেশে মোটরসাইকেল চালানোয় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে ইসির স্টিকার লাগানো মোটরসাইকেল এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।
তবে যান চলাচলের নিষেধাজ্ঞার সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশী-বিদেশী, পর্যবেক্ষকদের (পরিচয়পত্র থাকতে হবে) ক্ষেত্রে শিথিল যোগ্য। এছাড়া নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত সাংবাদিক (পরিচয়পত্র থাকতে হবে), নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক ও কতিপয় জরুরি কাজ যেমন- অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদির কাজে নিয়োজিত যানবাহনে নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
এছাড়া মহাসড়ক, বন্দর ও জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন