‘ভোটের বিভেদ’ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাগিদ শেখ হাসিনার

এবারের নির্বাচনে প্রধান বিরোধী শক্তি বিএনপিসহ কয়েকটি দল না আসায় শেষ পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে লড়তে হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে। আড়াই শতাধিক আসনে দলীয় প্রতীক নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হলেও প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এতে আওয়ামী লীগের নেতারা অনেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে লড়েছেন নিজ দলীয় প্রতীক নৌকার বিরুদ্ধে।

নির্বাচনে ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েও এসেছেন। স্বতন্ত্রের কাছে হেরেছেন অনেক হেভিওয়েট নেতাও। তবে এর ফলে দলের অভ্যন্তরে রেষারেষি ও বিভেদের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় সংঘাতের ঘটনাও ঘটেছে। এবার ভোটকে কেন্দ্র করে সেই সংঘাত ভুলে যেতে দলের নেতাকর্মীদের তাগিদ দিলেন দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বললেন, জয়-পরাজয়ের কষ্ট ভুলে সবাইকে আবার ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

সোমবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথসভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এই তাগিদ দেন।

টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের পর এটাই দলীয় নেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার প্রথম বৈঠক। সেখানে তিনি দলকে পুনরায় ক্ষমতায় আনার জন্য নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। পাশাপাশি আগামী দিনে কীভাবে জনসাধারণের ভালোবাসা নিয়ে চলতে হবে সেই নির্দেশনাও দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

এবারের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা নির্বাচন করেছি সবার সঙ্গে। হয়তো কেউ হেরেছি অথবা কেউ জিতেছি, কষ্ট আছে কারো, কারো আনন্দ আছে। কিন্তু ওই আনন্দ-দুঃখ-কষ্ট-হাসি-কান্না সব মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে আবার এক হয়ে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে, জনগণের স্বার্থে জনগণের কল্যাণে মানুষের জন্য। মানুষের যে আস্থা-বিশ্বাস আমরা অর্জন করেছি, সেটা যেন কোনোভাবে হারিয়ে না যায়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দলটা সবচেয়ে বড়। সংগঠন যদি পাশে না থাকে তো, কোনো অর্জন করা সম্ভব হয় না। প্রতিটা সাফল্যের পেছনে একটা শক্তি দরকার। আমার শক্তি বাংলাদেশের জনগণ, আওয়ামী লীগ ও আমাদের সহযোগী সংগঠনগুলো।’

এবারের নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনটা যাতে না হয়, সে জন্য অনেক চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র ছিল। ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমরা নির্বাচন করেছি। আমরা নির্বাচনে সবসময় মনোনয়ন দিই, মনোনয়ন দিয়েছি। আমাদের বড় দল, অনেকেই নির্বাচন করতে চায়, সেজন্য নির্বাচনটা উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। যে-যারা করতে চায়, করুক।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা নির্বাচন করেছে, কেউ জয়ী হয়েছে, কেউ পারেনি। সেক্ষেত্রে আমি সবাইকে অনুরোধ করব, একজন আরেকজনকে দোষারোপ করা, কার কী অপরাধ সেগুলো খুঁজে বেড়ানো বন্ধ করতে হবে।’

দেশের উন্নয়নের স্বার্থে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ী হওয়া প্রয়োজন ছিল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। আগামী দিনেও আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ তাদের হারাতে পারবে না বলে মনে করেন দীর্ঘ সময় ধরে দলটির নেতৃত্ব দেওয়া শেখ হাসিনা।

যৌথসভায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা এবং সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা অংশ নেন। স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।