মওলানা ভাসানীর সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ধারা অনুস্মরণ করতে হবে : ন্যাপ মহাসচিব

স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর জীবনের সমস্ত কর্মকাণ্ড একটি গভীর সাংস্কৃতিক বিপ্লবের লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রবাহিত হয়েছিল বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, মওলানা ভাসানীর সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ধারা অনুস্মরণ করতে হবে। একদিকে তিনি যেমন সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ, আধিপত্যবাদ, পুঁজিবাদী শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করেছেন, অন্যদিকে একটি গভীর সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মাধ্যমে এই ঘুনেধরা সমাজকে পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি শান্তি ও ভ্রাতৃত্বময় বিশ্ব গড়তে চেয়েছেন।

মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) নয়াপল্টনের যাদু মিয়া মিলনায়তনে ভাসানী সাহিত্য-সাংস্কৃতিক পরিষদের নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, একটি শোষণহীন সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে মওলানা ভাসানী তাঁর কর্মসূচিকে সাধারণ জনগণের কাছে নিয়ে গিয়েছেন। শাসক ও শোষক শ্রেণীর দীর্ঘদিনের শাসন ও শোষণ কাঠামো ভেঙে একটি নতুন সমাজব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য আজীবন লড়াই সংগ্রাম করেছেন। কারণ তিনি জানতেন পুরোনো, ঔপনিবেশিক আমলের শোষণ কাঠামো বজায় রেখে কেবলমাত্র বাহ্যিক সংস্কার দ্বারা আর যাই হোক সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের মুক্তি আসবে না।

ন্যাপ মহাসচিব বলেন, ১৯৫৭ সালের ঐতিহাসিক কাগমারী সাংস্কৃতিক সম্মেলন মওলানা ভাসানীর সাংস্কৃতিক বৈপ্লবিক চিন্তাধারার এক উজ্জ্বল ও অনন্য উদাহরণ। এই সম্মেলনে পশ্চিম পাকিস্তানীদের লক্ষ্য করে এবং পূর্ববঙ্গ বা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে তাদের বিদায় জানাতে মওলানার কন্ঠে স্বাধীনতার প্রথম উচ্চারণ ছিল ‘আসসালামু আলাইকুম’। পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির সাথে বিশ্ববাসীকে পরিচয় করিয়ে দিতে টাঙ্গাইলের সন্তোষ ও কাগমারিতে আয়োজন করেছিলেন এক মহাযজ্ঞের। দেশী-বিদেশী ভদ্রলোকদের টেনে এনেছিলেন চিরায়ত গ্রাম-বাংলার নিভৃত এই পল্লীতে।

তিনি আরো বলেন, আবহমান বাংলার মাটি, মানুষ, জলবায়ু, আবহাওয়া, ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সভ্যতা ও সংস্কৃতির শেকড় কত গভীর, মানবীয় এবং বিপ্লব উপযোগী তাই তিনি উপলব্ধি করাতে চেয়েছেন সকলকে। গ্রামের খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের ওপর থেকে শোষণের জগদ্দল পাথর সরাতে একত্রিত করেছিলেন কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, রাজনীতিকসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষের জাগ্রত কন্ঠস্বরকে।

তিনি বলেন, মওলানা ভাসানীর প্রদর্শিত পথে নতুন প্রজন্মের দিনবদলের প্রচেষ্টার মাঝে তাঁর সাংস্কৃতিক বিপ্লবের আকাঙ্খা প্রতিফলিত করতে হবে। আশা করি আমাদের তরুণ প্রজন্ম ও যুব সমাজ ভাসানীর সাংস্কৃতিক বিপ্লবের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে মেহনতি ও মজলুম মানুষের কল্যাণে দিন বদলে এগিয়ে আসবে। সত্যিকারের দিনবদলের যাত্রীরা মওলানা ভাসানীর অসমাপ্ত বিপ্লব সংগঠিত করে বাংলাদেশকে একটি শোষণহীন কল্যাণকামী আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলবেই।

সংগঠনের আহ্বায়ক মতিয়ারা চৌধুরী মিনু’র সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহন করেন ন্যাপ ভাইস চেয়ারম্যান স্বপন কুমার সাহা, যুগ্ম মহাসচিব এহসানুল হক জসীম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কামাল ভুইয়া, মহানগর সভাপতি মো. শহীদুননবী ডাবলু, ভাসানী সাহিত্য-সাংস্কৃতিক পরিষদ কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপিকা শিউলী সুলতানা, রিভা আক্তার, মনি বেগম প্রমুখ।