মহামারির মধ্যে প্রথম বিদেশ সফর ছিল বাংলাদেশে : শ্রিংলা

করোনা মহামারির মধ্যে তার প্রথম বিদেশ সফর ছিল প্রতিবেশী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাংলাদেশে বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।

রবিবার ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স (আইসিডব্লিউএ) আয়োজিত এ মতবিনিময়ে অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন।

আইসিডব্লিউএ ‘মহামারি চলাকালীন ভারতীয় কূটনীতির বিস্তৃত পরিসর’ শীর্ষক এ মতবিনিময়ের আয়োজন করে।

এতে অংশ নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, নভেল করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব একটি বড় ভূ-রাজনৈতিক ধাক্কা হিসাবে এসেছে।
এটি বিশ্ব রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে। আমরা হয়তো সামনে বৈশ্বিক শক্তিতে ভারসাম্যগত পরিবর্তন দেখতে পাবো। নতুন বহুপাক্ষিক কথোপকথনের উত্থান হবে। এই কথোপকথনে অংশীদারদের আপেক্ষিক শক্তিতে পরিবর্তন ও বিশ্বজুড়ে শক্তি, সংস্থান এবং ক্ষমতার বিস্তরণ ঘটবে।
এই নতুন বৈশ্বিক পরিবেশে ভারতের পছন্দ, চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগগুলিও প্রভাবিত হবে। তবে কিছু জিনিস পরিবর্তন হবে না। আমাদের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতিও তেমন একটি বিষয়। আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের প্রতিবেশীদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছি। এর প্রমাণ এই মহামারির শুরুতেই আমরা পেয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রীর প্রথম আঞ্চলিক/বৈশ্বিক সংশ্লিষ্টতা ছিল দক্ষিণ এশিয়ার নেতাদের সঙ্গে। আমি বলতে পারি, মহামারির মধ্যে আমার প্রথম বিদেশ সফর ছিল আমাদের প্রতিবেশী এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাংলাদেশে।’

শ্রিংলা বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতির অন্য গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভটি হলো অ্যাক্ট ইস্ট, যার মাধ্যমে আমরা আসিয়ানভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য একটি নতুন উদ্যোগ নিয়েছি। একাধিক চ্যানেলের মাধ্যমে আমাদের এই দেশগুলির সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সংলাপ রয়েছে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর সম্প্রতি ভারত ও আসিয়ান চিন্তাবিদদের এক বৈঠকে বলেছিলেন যে, আসিয়ান বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির অন্যতম আন্তঃপথ। ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। আমরা কেবল একে অপরের নিকটবর্তীই নই, একসঙ্গে এশিয়া ও বিশ্বকে রূপদান করতেও সহায়তা করি। এই মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন একসঙ্গে কাজ করা।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শ্রিংলা বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর ‘সুরক্ষা ও অঞ্চলের সবার জন্য প্রবৃদ্ধি’ বা ‘সাগর’ দৃষ্টিভঙ্গির অধীনে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে আমাদের অংশীদারিত্ব জোরদার করেছি। বিগত পাঁচ বছরে উপসাগর ও পশ্চিম এশীয় দেশগুলিতে আমাদের থিঙ্ক ওয়েস্ট নীতি পররাষ্ট্রনীতির ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হয়ে উঠেছে। মহামারিকালীন উপসাগর ও পশ্চিম এশিয়ায় আমাদের অংশীদাররা আমাদের অবিচ্ছিন্নভাবে সহযোগিতা করেছে। এতে পারস্পরিক সুবিধার পাশাপাশি বেড়েছে বিশ্বাস।’

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর স্তরে আফ্রিকান দেশগুলিতে ৩০টিরও বেশি সফর নিয়ে আফ্রিকার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আরও বেড়েছে। গত দশকে ভারতের লাইন অব ক্রেডিটের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি দেওয়া হয়েছে আফ্রিকার দেশগুলিতে।’

‘কোভিড সংকটের এই কঠিন সময়ে আমাদের বন্ধুবান্ধব ও অংশীদারদের সাহায্য করার জন্য আমাদের আগ্রহ দেখিয়েছি, বিশেষত যখন মহামারি মোকাবিলা করার জন্য বেশ কয়েকটি দেশের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’

শ্রিংলা বলেন, ‘আমাদের আশপাশের প্রচুর সুযোগের পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এগুলি সমাধানে আমরা যথাযথভাবে কাজ করবো। তবে এটি অবশ্যই লক্ষণীয় যে, আমাদের সক্ষমতা ও সংস্থান বাড়ছে এবং প্রয়োজনীয় কৌশল গ্রহণ করার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত থাকবো।’

‘আমি আবারো প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিতে চাই। ইকোসকের উচ্চ পর্যায়ের সভায় তিনি বলেছিলেন, ভারত দৃঢ়়ভাবে বিশ্বাস করে যে টেকসই শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জনের পথটি বহুপাক্ষিকতার মধ্য দিয়ে আসবে। পৃথিবীর বাসিন্দা হিসেবে, অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে এবং অভিন্ন লক্ষ্য অর্জন করতে আমাদের অবশ্যই হাত মিলিয়ে যেতে হবে। বহুপক্ষীয়তাকে সমসাময়িক বিশ্বের বাস্তবতার প্রতিনিধিত্ব করা দরকার। কেবল জাতিসংঘকে সংস্কার করে নতুন বহুপক্ষীয়তার মাধ্যমে মানবতার আকাঙ্ক্ষাগুলো পূরণ সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জিং এবং ব্যস্ততাপূর্ণ এজেন্ডা রয়েছে। আমাদের ৭৫তম বার্ষিকীতে ভারত জাতিসংঘের সুরক্ষা কাউন্সিলের সদস্য এবং জি-২০ এর সভাপতি হবে। আগামী দুই বছরে আমরা ব্রিকস ও সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সভাপতিত্ব করবো। এগুলো আমাদের বর্ধিত বৈশ্বিক অবস্থানের স্বীকৃতি। একই সঙ্গে এগুলি আমাদের উপলব্ধি, আমাদের প্রত্যাশা ও আমাদের অগ্রাধিকারগুলি বিশ্বের কাছে প্রকাশ করারও সুযোগ দেবে।’

সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ ক্রমবর্ধমানভাবে হুমকি হিসেবে সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করে চলেছে। আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে ভুগতে থাকা দেশ হিসেবে আমরা সন্ত্রাসী ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে অবিচল রয়েছি। যদিও এক্ষেত্রে আমাদের প্রচেষ্টাগুলির প্রতি বিশ্বব্যাপী সমর্থন বেড়েছে, তবুও আমাদের নিশ্চিত করা দরকার যে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটি নিরঙ্কুশ ও দ্ব্যর্থহীন পদ্ধতি অনুসরণ করে।

‘জাতিসংঘের তালিকাভুক্তির মতো বৈশ্বিক ব্যবস্থার রাজনৈতিককরণ এড়ানো দরকার। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, বিশ্বসম্প্রদায় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কিত বিস্তৃত ধারণাকে চূড়ান্ত করে।’