মাদারীপুরে ৮ম শ্রেনীর স্কুল ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে নারীসহ আহত ১৫
মাদারীপুরে ৮ম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করা নিয়ে দুই পরিবারের লোকজনের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারীসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন।
শুক্রবার (২১ জুলাই) সকালে সদর উপজেলার ছিলারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে আহত ১১ জন মাদারীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তারা হলেন ছিলারচর এলাকার আমজাত শিকদারের ছেলে মহিবুল শিকদার (৩৫) ও মিজান শিকদার (১২), নজরুল শিকদারের স্ত্রী সেলিনা আক্তার (৩১), হেলউদ্দিন শিকদারের ছেলে আজাহার শিকদার (৪০), সোনামুদ্দিন শিকদারের ছেলে সাহাবুদ্দিন শিকদার (৫০), ইউনুস ফকিরের ছেলে তুমান ফকির (৩০) ও স্ত্রী সুরাতন বেগম (৫০), মৃত ইসমাইল মাতুব্বরের স্ত্রী রানু বেগম (৫০), মহিদুল শিকদারের স্ত্রী রিনা বেগম (২৮), রাজ্জাক ঘরামির স্ত্রী বাহাতুন বেগম (৫০) ও সদর উপজেলার কালিকাপুর এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে সালাউদ্দিন (৩২)। এদের মধ্যে সুরাতন বেগমকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ছিলারচর এলাকার নজরুল শিকদারের ৮ম শ্রেণিতে পড়–য়া মেয়ে নুসরাত জাহানকে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতো প্রতিবেশি সাহাবুদ্দিন শিকদারের ছেলে শাকিল শিকদার। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার এলাকায় সালিশ বৈঠকে মীমাংসা হয়। এরই জেরে সকাল ১০টার দিকে শাকিল লোকজন নিয়ে প্রথমে নজরুলের ঘরে প্রবেশ করে পরিবারের ওপর হামলা চালায়। এ সময় বাঁধা দিতে গেলে নজরুল শিকদারসহ তার স্ত্রী, ভাইসহ পরিবারের ৪ জন আহত হন। এ খবর আশেপাশে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই পরিবারের লোকজন। এ সময় উভয়পক্ষের আহত হয় নারীসহ অন্তত ১৫ জন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। পরে আহতদের উদ্ধার করে জেলার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ সম্পর্কে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সিহাব চৌধুরী বলেন, ‘সংঘর্ষে আহত নারীসহ ১১ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সবার শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। বেশির ভাগের পিঠে, পা ও হাতে আঘাত। এদের মধ্যে একজন নারীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
আহত ওই স্কুলছাত্রীর মা সেলিনা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার মেয়েটা ছোট। ওরে বিরক্ত করত শাকিল। ওর বিরুদ্ধে নালিশ করায় দলবল নিয়ে আইসা আমাগো উপরে ওরা হামলা করছে। আমাগো ছাড়াইতে যে গেছে তাগোরেই ওরা কোপাইছে। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।’
নজরুল শিকদার বলেন, শাকিলরা আমাদের প্রতিবেশি। ওদের অতর্কিত হামলায় আমাদের পরিবারে সবাই আহত হয়েছি। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে শাকিল শিকদারের মামা রাকিবউদ্দিন খান বলেন, ‘আমার ভাগ্নের বিরুদ্ধে নজরুল শিকদারের মেয়েকে উত্ত্যক্ত করা নিয়ে যে অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে তা সঠিক নয়। নজরুলের কাছে আমার দুলাভাই সাহাবুদ্দিন শিকদার ৬ লাখ টাকা পাবে। এই পাওনা টাকা চাওয়া নিয়ে আগেপরেও কথাকাটাকাটি হইছে। এই টাকা নিয়েই দুপরিবারে দ্বন্দ্ব। এই নিয়েই দুটি পরিবারই মারামারি করছে। ঘটনা অন্য দিকে মোড় নিতে মিথ্যে অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে।’
ছিলারচর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা হাজী খলিলুর রহমান বলেন, দুই পরিবারই আত্মীয়। তারা গুষ্টির চাচাতো ভাই। সামান্য মেয়েলি কা-ে তারা এভাবে সংঘর্ষে জড়াবে মেনে নিতে পারছি না। যে সমস্যা নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে, সেটার সমাধানও আগেই হয়েছিল। কিন্তু এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তা আমরা কেউ বুঝতে পারি নাই। ওদের উপযুক্ত বিচার হওয়া উচিৎ।’
ছিলারচর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোতাহার খালাসী বলেন, ‘হঠাৎ শুনি দুইপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এসে থেকে আহতরা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। পরে তাদেরকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন পশ্চিম ছিলারচর এলাকার আলাউদ্দিন শিকদারের ছেলে তামিম শিকদার, তোফায়েল শিকদারের ছেলে সিরাজুল ইসলাম, আনাজউদ্দিন শিকদারের ছেলে দেলোয়ার শিকদার ও কালিকাপুর এলাকার আব্দুর রহমান খানের ছেলে রাকিবউদ্দিন খান, ইউনূস ফকিরের ছেলে নুর হোসেন।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এক স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্তের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক বংশের দুটি পরিবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় কিছু লোকজনও তাদের পক্ষে সংঘর্ষে জড়ায়। খবর পেয়ে পুলিশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ জনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন