মার্ক্সের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো ঠিক হয়েছে?
উনবিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত জার্মান চিন্তাবিদ, দার্শনিক, সমাজবিজ্ঞানী ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা কার্ল মার্ক্স। পুরো নাম কার্ল হাইনরিশ মার্ক্স। বেঁচে থাকলে আজ তার ২০০তম জন্মদিন হতো।
সমাজ এবং পুঁজিবাদ সম্পর্কে নিজের বিখ্যাত তত্ত্বের জন্য মার্ক্সের খ্যাতি ছড়িয়েছিল দুনিয়াজুড়ে। কিন্তু তার ভবিষ্যদ্বাণীগুলো কি সব সঠিক প্রমাণিত হয়েছে?
উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনে।
‘কাল্পনিক চাহিদা’ তত্ত্ব
মার্ক্স বলেছিলেন পুঁজিবাদ এমন সব জিনিস তৈরি করবে, যা মানুষের দরকার নেই, কিন্তু তারপরেও সে বস্তুর চাহিদা তৈরি হবে। একেই তিনি ‘কাল্পনিক চাহিদা’ নাম দিয়েছিলেন।
যদি ফ্যাশনের কথা ধরা যায়, চলতি হাওয়ার সাথে তাল মেলাতে আমরা এখনও গায়ে লাগে এমন কাপড়চোপড় তো প্রায়শই বাতিল করে দিচ্ছি। অথবা স্মার্টফোন কোম্পানির বিরামহীন নতুন মডেল উদ্ভাবন এবং বাজারে ছাড়ার যে প্রতিযোগিতা তার সঙ্গেও একে কেউ মিলিয়ে দেখা যেতে পারে।
‘উত্থান এবং পতন’ তত্ত্ব
পুঁজিবাদের উত্থান এবং পতনের স্বাভাবিক প্রকৃতি নিয়ে কার্ল মার্ক্সের ভবিষ্যদ্বাণীকে ২০০৮ সালে বিশ্ব জুড়ে হওয়া অর্থনৈতিক মন্দার সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে দেখা যাবে, তা ওই সূত্র মতোই হয়েছে।
তিনি বলেছিলেন, লাভের জন্য পুঁজিবাদের যে তীব্র ক্ষুধা, সেজন্য বিশ্বে মানুষের যা প্রয়োজন তার চেয়ে উৎপাদন অনেক বেশি হবে এবং শ্রমিকের মজুরি এতই কমবে যে তারা নিজেদের উৎপাদন করা পণ্য কিনতে পারবে না। আর মানুষ পণ্য না কিনলে পুঁজিবাদীরা মুনাফা করবে কিভাবে? যে কারণে পুরো ব্যবস্থা ক্রমে ব্যর্থ হতে শুরু করবে।
‘একাধিপত্য’
সাধারণ অর্থে পুঁজিবাদের বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করার কথা। এটি হওয়ার কথা পাড়ার মাংস ও মাছ বিক্রেতার মতো ছোট ব্যবসাগুলোর মধ্যে। কিন্তু মার্ক্স বলেছেন, কোম্পানিগুলো এত বড় হতে থাকবে যে তারা নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের ক্রমে গ্রাস করে নেবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বড় সুপার মার্কেট চেইন রেখে কে কবে পাড়ার ছোট দোকানটিতে ঢুকেছেন- তা নিয়ে ভাববার অবকাশ রয়েছে।
‘মধ্যবিত্তের সংকোচন’
কার্ল মার্ক্স বলেছিলেন, পুঁজিবাদের ধরন অনুযায়ী মুনাফার জন্য বড় ব্যবসায়ীরা কর্মীদের বেতন ও সুবিধাদি কমিয়ে দেয়। এতে মধ্যবিত্ত ক্রমে গরিব হতে থাকে। এর ফলে একটি বড় অংকের নগদ অর্থ অল্প কিছু মানুষের হাতে জমতে থাকে।
আজকের পৃথিবীতে ৩৭০ কোটি মানুষের চেয়ে মাত্র ৪২ জন মানুষ বেশি ধনী।
চীন, ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের সম্মিলিত জনসংখ্যা ৩৭০ কোটি।
বিপ্লব
কার্ল মার্ক্সের সবচেয়ে বড় তত্ত্ব ছিল পুঁজিবাদ নিজেই নিজেকে ধ্বংস করে ফেলবে। কিভাবে? তিনি বলছেন, যখন সবাই বুঝতে পারবে যে এই পদ্ধতিতে গলদ আছে, তখন তারা নিজেরাই বিপ্লব করবে। কিন্তু সেটি এখনও বাস্তবে ঘটেনি। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে কম্যুনিস্ট ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিপ্লবের নজির পৃথিবীতে আছে।
বিপ্লবীদের কেউ কেউ বলে থাকেন, সমাজের দুর্নীতির কারণে তারা সফল হতে পারছেন না। আর অন্যরা বলেন মার্ক্সের তত্ত্বই ভুল। -বিবিসি বাংলা
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন