মেঘনায় ৩ ফুট পানি বৃদ্ধি, উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত

অস্বাভাবিক জোয়ারে মেঘনা নদীতে তিন ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) দুপুর ১টা থেকে জোয়ারের পানিতে রামগতি, কমলনগর, সদর ও রায়পুরের বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। এতে প্লাবিত এলাকার বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এদিকে রামগতি-কমলনগরের প্রায় ৩১ কিলোমিটার এলাকায় নদী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় উপকূলীয় বাসিন্দারা আশাহত। নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। গত দুদিনের জোয়ারে বিস্তীর্ণ এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রায় তিন যুগ ধরে স্থানীয়রা নদী ভাঙনের সঙ্গে লড়ে আসছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কমলনগরের চরমার্টিন, চরকালকিনি, চরফলকন, পাটারিরহাট, সদরের চররমনী মোহন, রায়পুরে উত্তর চরবংশী, দক্ষিণ চরবংশী ও রামগতির চর আবদুল্লাহসহ প্রায় ১৩ টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কমলনগর, রামগতি ও রায়পুরে মেঘনার নদীর ভাঙনে প্রতিদিনই কেউ না কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে রাস্তাঘাট ভেঙে একাকার হয়ে পড়েছে।

কমলনগরের চরমার্টিন ইউনিয়নের তোরাবগঞ্জ-মতিরহাট সড়কের কালভার্ট এলাকায় ভেঙে চলাচলে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে স্থানীয়দের। এ রুটে মতিরহাট মেঘনা বিচের দর্শনার্থীদের বেগ হতে হচ্ছে। একই ইউনিয়নের বলিরপোল-নাসিরগঞ্জ সড়কটি বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। চরকালকিনি ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো জোয়ারের তীব্র স্রোতে এখন ক্ষতবিক্ষত।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, সদর উপজেলা থেকে রামগতি উপজেলা পর্যন্ত মেঘনা নদীর প্রায় ৩৭ কিলোমিটার এলাকায় তীর রক্ষা বাঁধ নেই। অরক্ষিত এ অঞ্চল প্রতিদিন একটু একটু করে ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। গেল জানুয়ারি মাসে একনেকের বরাদ্দকৃত প্রায় ৩১০০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। বালু সংকট দেখিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ বন্ধ রেখেছে। এতে খুব শিগগিরই বাঁধ নির্মাণ করা না সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট পানি বৃদ্ধি পায়। এরসঙ্গে সাগরে যদি কোনো সংকেত থাকে তাহলে পানি আরও বেশি বাড়তে থাকবে। এখন পূর্ণিমা ও বঙ্গোপসাগরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংকেত থাকায় জোয়ারের অতিরিক্ত পানি উপকূলে উঠেছে। ১৫ তারিখ পর্যন্ত এ অবস্থা থাকবে।

চরকালকিনি গ্রামের বাসিন্দা রাকিব হোসেন, বিস্তীর্ণ এলাকা জোয়ারে ডুবে আছে। জোয়ারে ভেসে আসা সাপ-জোঁক আতঙ্ক রয়েছে সবার মাঝে। এছাড়া জোয়ারের সঙ্গে আশপাশের ময়লা পানিও মিশে গেছে। এতে স্থানীয়রা পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

কমলনগরের চরকালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছায়েফ উল্যা বলেন, জোয়ারের পানিতে পুরো এলাকা ডুবে গেছে। স্রোতে এলাকায় পানি ঢুকছে। এতে রাস্তাঘাট ভেঙে একাকার হয়ে গেছে। মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে।

রামগতি উপজেলার চর আবদুল্লাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন মঞ্জুর বলেন, ইউনিয়নের চারপাশ মেঘনা নদীতে বেষ্টিত। জোয়ারে প্রতিটি ঘরেই পানি উঠেছে। দুর্ভোগে রয়েছে মানুষ।

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, জোয়ারে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাঁধ নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।

লক্ষ্মীপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, স্বাভাবিক জোয়ারের বাঁধ নির্মাণ কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া বালু সংকটও রয়েছে।