‘মোদির জয় বাংলাদেশের জন্য চিন্তার কারণ হতে পারে’
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি যে ব্যাপক বিজয় পেয়েছে, তা বাংলাদেশের জন্য চিন্তার কারণ হতে পারে বলে মনে করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান।
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক রওনক জাহান বলেন, বহু বছর ধরে উপমহাদেশে ভারতের পরিচিতি ছিল ‘ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির’ একটি মডেল হিসেবে।
তবে তিনি মনে করেন যে ভারতে ‘পরপর দুটো নির্বাচনে বিজেপির জয় বাংলাদেশের সেক্যুলার রাজনীতি যারা করতে চায়, তাদেরকে চিন্তায় ফেলবে।’
অধ্যাপক জাহানের মতে, বাংলাদেশ সরকার চাইবে ভারত সরকারের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার। কিন্তু ভবিষ্যতে সে সম্পর্ক কোন দিকে যাবে, সেটি নির্ভর করছে বিজেপি সরকারের মনোভাবের উপর।
‘ভারতে যদি সেক্যুলার রাজনীতি না চলে, এবং তারা যদি আমাদের চারিদিকে বিদ্বেষের রাজনীতি নির্বাচনে জেতার জন্য আরম্ভ করে দেন, তখন সরকারের পপে সে জিনিসটা ম্যানেজ করা আরো অসুবিধা হবে’, বলছিলেন রওনক জাহান।
হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি ভারতে যেভাবে দিনকে দিন শক্তিশালী হচ্ছে, তার প্রভাব বাংলাদেশের উপরে থাকবে বলে অনেকে মনে করেন। কারণ বাংলাদেশকে ঘিরে থাকা ভারতের রাজ্যগুলোতে এবারের নির্বাচনে বিজেপি বেশ ভালো ফলাফল করেছে।
ভারতে দক্ষিণপন্থী রাজনীতির উত্থান হলে, বাংলাদেশ সরকার চাইলেও কি ভারতের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব নাও হতে পারে? – এমন এক প্রশ্নে তেমন আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেননি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান।
তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের বৃহৎ প্রতিবেশী। বাংলাদেশের সব সরকারই চাইবে যে ভারতের সাথে সুসম্পর্ক বজায় থাকুক।
তবে বাংলাদেশের সরকারকে দেশের জনগণের মনোভাবের দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশ কোন কনসেশন বা ছাড় পাচ্ছে না বলে মনে করেন অধ্যাপক জাহান। এ ক্ষেত্রে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের অনাগ্রহকে একটি বড় উদাহরণ হিসেবে তিনি মনে করেন।
সাম্প্রতিক বছরে ভারতের আসাম রাজ্যে নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়ায় বলা হয়েছে যে ৪০ লাখ মানুষ ‘অবৈধভাবে’ সেখানে বসবাস করছে, যাদের বেশিরভাগ মুসলমান।
বিভিন্ন সময় বিজেপির সিনিয়র নেতারা বলেছেন যে ‘অবৈধভাবে’ যারা আসামে বসবাস করছেন, তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
নির্বাচনের প্রচারণার সময় বিজেপি প থেকে বলা হয়েছে যে আসামের মতো ‘নাগরিকত্ব যাচাইয়ের’ কাজ পশ্চিমবঙ্গেও তারা করতে আগ্রহী।
এ প্রসঙ্গে রওনক জাহান বলেন, ‘তাদের নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য মুসলমানদের উপরে কিংবা বাঙালিদের উপরে তারা যে ধরণের শ্লোগান ব্যবহার করছেন, এগুলো হলে আমাদের সাধারণ মানুষ তো খুব বিক্ষুব্ধ থাকবে। কিন্তু আমাদের সরকার তো কখনোই চাইবে না ভারতের সাথে সম্পর্ক বিরূপ হোক। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের সেন্টিমেন্টকে তো তাদের দেখতে হবে।’
এ বিষয়টি বাংলাদেশে সরকারের জন্য এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।
ভারতে বিজেপি যদি মুসলিম-বিরোধী কথাবার্তা জোরালো করে, তাহলে সে বিষয়টি বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সুযোগ তৈরি করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন