যশোরের মনিরামপুরে কালের বিবর্তনে দিন দিন কমে আসছে খেজুর গাছ
দেশজুড়ে যশোরের ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও যশোরের মনিরামপুরে দিন দিন কমে আসছে খেজুর গাছের সংখ্যা। যে গাছগুলো আছে তাতেও তেমন রস মিলছে না। চাহিদার তুলনায় রসের যোগান অনেক কম থাকায় ভেজাল গুড়ে বাজার সয়লাব। ফলে আসল খেজুর গুড়ের স্বাদ হতে বঞ্চিত হচ্ছে বর্তমান প্রজন্মসহ বিপুল জনগোষ্ঠি।
এখন থেকে ২০ বছর আগে উপজেলার মাঠ, ঘাট, প্রত্যেকের বসত বাড়িতে এবং রাস্তার দুই ধারে সারি সারি খেজুর গাছ মিলতো। এখন মাঠে, ঘাঠে ও রাস্তার ধারে যে গাছগুলো রয়েছে, তা থেকে শীতের সময় কিছু রস সংগ্রহের কাজ চালাচ্ছে গাছিরা। সারা বছর অবহেলায় পড়ে থাকা অগোছালো খেজুর গাছগুলোর শুকনো পাতা ফেলে দিয়ে নতুন করে সুসজ্জিত করে গাছিরা রস সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। গাছগুলোকে প্রস্তুত করে নলি ও ভাড় ঝঁুলিয়ে দিলেও চাহিদা মত রস মিলছে না। আবার গাছি সংকটে অনেক খেজুর গাছ পূর্বের অগোছালো অবস্থায় পড়েও থাকছে। খেজুরের রস দিয়ে তৈরি হয় সুস্বাদু গুড় এবং পাটালি। গ্রাম অঞ্চলে শীতের পুরো মৌসুমে চলে রস, গুড়, পিঠা, পুলি ও পায়েস খাওয়ার পালা। কিন্তু চাহিদার তুলনায় রসের যোগান অনেক কম থাকায় ভেজাল গুড়ে বাজার সয়লাব। ফলে আসল খেজুর গুড়ের স্বাদ হতে বঞ্চিত হচ্ছে বর্তমান প্রজন্মসহ বিপুল জনগোষ্ঠি। এছাড়া খেজুর পাতা দিয়ে তৈরী করা হয় আর্কষণীয় ও মজবুত শীতল পাটি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনসহ মাটি লবণাক্ততা ও নজরদারী না থাকায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পরিবেশবান্ধব খেজুর গাছ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
উপজেলার রাজগঞ্জের হানুয়ার এলাকার গাছি হায়দার আলী জানান— তিনি ৩৫ থেকে ৪০ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটেন। আগে প্রতিদিন এক থেকে দেড় পণ অন্যের খেজুর গাছ রসের অর্ধেক ভাগ চুক্তিতে কাটতেন। রসও পেতেন ভালো। দাম কম থাকলেও সিজিনে রস ও গুড় বিক্রি করে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় করতেন। বর্তমান বাজারে খাঁটি খেজুর গুড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দামও অনেক বেশি। কিন্তু গাছের সংখ্যা অনেক কমে যাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী গুড় উৎপাদন ও রস বিক্রি করতে পারেন না। এ পেশায় কঠোর পরিশ্রম করতে হয় অথচ সে অনুযায়ী মজুরি পাওয়া যায় না। ফলে এখন আর এ পেশায় তেমন আয় হয় না তার। তা ছাড়া এখন অনেক বয়সও হয়েছে। তাই এ পেশা এখন প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন।
উপজেলার ঝাঁপা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল গফুর বলেন— আগে অধিকাংশ লোকের বাড়িতে খেজুর গাছ ছিলো। বিশেষ করে পৌষ মাসে রসের পিঠা, পুলি ও পায়েস খাওয়ার প্রযোগিতা চলতো। এখন খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় বেশির ভাগ লোক আর খেতে পারে না। তা ছাড়া গাছে রস সংগ্রহের জন্য যে মাটির পাত্র পাতা হয় তা এলাকায় ভাড় বলে পরিচিত। তখন গাছিরা সেই এক ভাড় কাঁচা রস বিক্রি করতো ৪০ থেকে ৫০ টাকা আর এখন তার দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এছাড়া গুড়ের দামও ছিলো ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। আর এখন এক কেজি খাঁটি গুড়ের দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এখন বেশির ভাগ ভেজাল অর্থাৎ চিনি মিসানো খেজুরের গুড়ে বাজার সয়লাব। ফলে আসল খেজুর গুড়ের স্বাদ হতে বঞ্চিত হচ্ছে বর্তমান প্রজন্মসহ বিপুল জনগোষ্ঠি।
এবিষয়ে ঝাঁপা ইউনিয়ন উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা ভগীরত চন্দ্র ও আবু সাঈদ জানান— জলবায়ু পরিবর্তনসহ মাটি লবণাক্ততা ও ইট ও টালী ভাটায় জ্বালানি হিসেবে অতিরিক্ত ব্যবহারে এ উপজেলায় খেজুরগাছ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
এছাড়া গাছির সংকট, রস সংগ্রহে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়, নতুন নতুন বিভিন্ন স্থাপনা নির্মানের কারণেও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পরিবেশবান্ধব খেজুর গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে খেজুরগাছের ভূমিকা অপরিসীম। তাই তালের বীজ রোপনের মত সামাজিক প্রকল্প এবং সমাজের সকলের নজরদারী বাড়ালে খেজুর গাছের সংখ্যা আবার বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মনে করেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন