নেত্রকোনার দুর্গাপুরে হানাদার মুক্ত দিবস ৬ ডিসেম্বর

৬ ডিসেম্বর দুর্গাপুর মুক্তদিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলার দামাল ছেলেরা ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায় সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে নেত্রকোণার সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর’কে মুক্ত করেছিল।
পাক হানাদার বাহিনীর মেজর সুলতানের নেতৃত্বে দুর্গাপুরের মিশনারীজ এলাকা বিরিশিরিতে একটি শক্তিশালী পাকসেনা ঘাঁটি গড়েউঠেছিল।

আর এখানে বসেই পাক সেনারা বাংলার কুখ্যাত দালাল,আলবদর,রাজাকারদের সহযোগিতায় নিয়ন্ত্রন করতো দুর্গাপুর সদর সহ কলমাকান্দার সীমান্ত এলাকা লেংগুরা,নাজিরপুর,এবং দুর্গাপুরের বিজয়পুর। সেই সাথে বুদ্ধিজীবি মানুষদের ধরে এনে রাতের আঁধারে বিরিশিরির বধ্যভূমিতে নৃশংসভাবে তাদের হত্যা করা হতো। যাদের সর্ব প্রথম হত্যা করা হয়েছিল তাদের মধ্যে রয়েছে নেত্রকোনা কলেজের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক শহীদ আরজ আলী,প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক অনুলেশ্বর সান্যাল,এমকেসিএম পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের(তৎকালীন)প্রধান শিক্ষক আব্দুল আওয়াল, দুর্গাপুরের তদানিন্তন এমএনএ পুরাকান্দুলিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা গৌরাঙ্গ চন্দ্র সাহা, কুল্লাগড়া ইউনিয়ন পরিষদ(তৎকালীন)চেয়ারম্যান মোঃ আলী হোসেন ও আশোতোষ সান্যালসহ ৭২জন প্রান দিয়েছিলেন যাদের তালিকা স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা অফিসে সংরক্ষিত আছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা রেভারেন মনিন্দ্র নাথ মারাক,সোহরাব হোসেন তালুকদার যৌথভাবে জানান ৬ ডিসেম্বর শেষ রাতে পাক সেনারা দুর্গাপুর ত্যাগ করেছিল সেই প্রেক্ষিতে ৭ ডিসেম্বর দুর্গাপুর মুক্ত দিবস পালন করা যেতে পারে, তাহারা আরো জানান ৫মে গাঁওকান্দিয়া গ্রামে পাক সেনারা ১৯ জন মুক্তিযোদ্ধাকে এক সাথে হত্যা করে।

এর আগের দিন ৪মে ২জন পাক সেনা গাঁওকান্দিয়া গ্রামে গিয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে নারী ধর্ষণের চেষ্টা চালালে গ্রাম বাসীরা তাদের ধরে কুপিয়ে হত্যা করার জের হিসাবে পরের দিন ৫মে বিরিশিরি ক্যান্টনমেন্ট থেকে একঝাক পাক সেনা গাঁওকান্দিয়া গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষ সহ ১৯ জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে। এ ছাড়া সুসং ডিগ্রী কলেজের ছাত্র দিলদার হোসেন, কৃষক ইমাম হোসেন, বিল¬াল হোসেন, ছোট্রনীসহ নাম অজানা আরো অনেককেই হত্যা করা হয়েছিল।

বিজয়পুর সংলগ্ন স্থানে আমাদের সোনার ছেলে মুক্তি বাহিনীরা একটি ব্রাস ফায়ারে ১০ জন পাক সেনাকে হত্যা করে আনন্দ উল্লাসে জয় বাংলা ধ্বনি উচ্চারণ করে এগিয়ে আসতে থাকলে ওৎ পেতে থাকা পাক সেনাদের ছোরা একটি টু—ইঞ্চ মর্টার এসে বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সন্তোষ বিশ্বাসের মাথায় আঘাত করলে তৎক্ষনাত তিনি মৃত্যুবরণ করেণ,এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা অশেষ বাউল তাঁর পাশেই ছিলেন বলে জানাগেছে। তারই নামানুসারে দুর্গাপুর সদরে নির্মিত হয় দুর্গাপুর শহীদ সন্তোষ পার্ক, দুর্গাপুরের মানুষ আজ তাঁদের স্বরণ করছে প্রাণভরে।